নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রাম, আপনজন: জঙ্গলমহলের মানুষ উদগ্রীব হয়ে বসেছিলেন তাঁর আসার পথ চেয়ে। তিনি এলেন সঙ্গে দিলেন বার্তাও। সেই বার্তা শান্তির বার্তা। সহাবস্থানের বার্তা। সম্প্রীতির বার্তা। দিলেন আগামী দিনে উন্নয়নের আশ্বাসও। সেই সঙ্গে সতর্ক করলেন বিজেপিকে নিয়েও। কীভাবে বিজেপি জঙ্গলে অশান্তি ছড়ানোর ছক কষছে, কীভাবে কুড়মিদের সঙ্গে মাহাতোদের বিবাদ লাগিয়ে দিচ্ছে, সেই নিয়েও সতর্ক করে দিলেন। বিশ্ব আদিবাসী দিবসে কুড়মি নেতাদের পাশে নিয়ে এভাবেই শান্তি ও উন্নয়নের স্বপক্ষে সাওয়াল করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মনে করিয়ে দিলেন, ‘একসময় এখানে লাশ পড়ত! ভালবাসা দিয়ে জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়েছি! আগে ঝাড়গ্রামে আসতাম, রাস্তায় গর্তের পর গর্ত। আর এখন দেখুন ঝকঝকে রাস্তা। ঝাড়গ্রাম থেকে বাঁকুড়ার ঝিলিমিলি, কত সহজে পৌঁছে যাওয়া যায়।’জঙ্গলমহলের বুকে কুড়মি সমাজের দাপট দীর্ঘদিন ধরে। সেই কুড়মিদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর সরকার ও দলের বিরুদ্ধে ক্রমাগত উস্কে গিয়েছে বিজেপি। আর তার জেরেই বিগত ২-৩ বছর ধরে নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে যখন তখন রাস্তা অবরোধ, ট্রেন অবরোধে নেমে পড়ত কুড়মি সমাজ। আর তার জেরে চূড়ান্ত হয়্রানির শিকার হতেন আমজনতা। কিন্তু মমতার সরকার কোনওদিন ছিঁটেফোঁটাও বলপ্রয়োগ করেনি সেই আন্দোলন দমন করতে বা ভেঙে দিতে। বরাবরই আলোচনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির কাঁধে ভর দিয়ে কুড়মি সমাজ আলাদা ভাবে লড়াই করেছিল। কিন্তু কোথাও কলকে পায়নি। শেষে তাঁদের মমতার শরণেই আসতে হয়েছে। গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার ঝাড়গ্রামে পৌঁছে কুড়মি সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিষেকের কনভয় আক্রমণের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া কুড়মি নেতারাও সেখানে ছিলেন। পাশাপাশি বৈঠক করেন ভারত জাকাত মাঝি পরগনার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও।এদিন অর্থাৎ বুধবার ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে দুই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কুড়মি ও জাকাত মাঝি পরগনার সদস্যদের সঙ্গে আমি কাল দেখা করেছি। আমার ওপর আস্থা রাখার কথা বলছি। কুড়মি ভাষা নিয়ে ওঁদের দাবির কথা শুনেছি। কিন্তু দয়া করে কোনও সম্প্রদায় নিজেদের মধ্যে লড়াই করবেন না। উন্নয়নের যা কাজ দরকার হবে, আমি করে দেব। কারও কথায় প্ররোচিত হবেন না। আমায় তাঁরা কথা দিয়েছে, কোনও ঘেরাও আন্দোলন করবে না। কুড়মিদের মধ্যে এমন একজন নেতা রয়েছে যে বিজেপির থেকে টাকা নিয়ে অনেক সম্পত্তি করেছে। নির্বাচন সামনে এলেই সে হঠাৎ করে সক্রিয় হয়ে ওঠে।’ পাশাপাশি মমতা জঙ্গলমহলের মানুষকে মনে করিয়ে দিয়েছেন বাম জমানায় সেখানে কীভাবে অশান্তির আগুন দানা বেঁধেছিল। বাস্তবিক অর্থেই একটা সময় জঙ্গলমহলের বুকে বারুদের গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছিল বাতাস। ঘরে ঘরে উঠতো কান্নার রোল। চরম ভয় আর স্বজন হারানোর বেদনা মানুষকে কুরে কুরে খেত।সেই ছবি বদলেছেন মমতা। এখন আর কথায় কথায় অবরোধ হয় না জঙ্গলমহলে। নিত্যদিন প্রিয়জন হারানোর আতঙ্ক এখন আর নেই। বাতাস ভারী হয়ে ওঠে না আর্তনাদ আর বারুদের গন্ধে। বোমা-গুলির আতঙ্কে একসময় অভ্যস্ত হয়ে ওঠা জঙ্গলমহলে ধীরে ধীরে শান্তি ফিরেছেন মমতা। আজ জঙ্গলমহলও তাই বিজেপি কথায় ভুল পথে চলে গিয়েও ফের ফিরে এসেছে উন্নয়নের পথে, শান্তির পথে। তাই একুশের ভোটে ঝাড়গ্রাম থেকে মুছে গিয়েছে বিজেপি। পঞ্চায়েত ভোটেও তাঁরা কললে পায়নি। এবার সময় হয়েছে ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্র থেকে তো বটেই জঙ্গলমহলের ৫টি লোকসভা কেন্দ্র থেকেই ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাওয়ার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct