নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রাম, আপনজন: এটা নতুন কোনও ঘটনা নয়। তিনি যখনই সময় আর সুযোগ পান তখনই নাচের তালে পা মেলান। বাজান ধামসা মাদল। এমনকি আদিবাসীদের পোষাক পরে আদিবাসী মহিলাদের মাঝে নিজেকে মেলেও ধরেন। হয়ে ওঠেন তাঁদের একজন। ঘরের মেয়ে। বিশ্ব আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে জঙ্গলমহলের বুকে ঝাড়গ্রামের মাটিতে সেই চেনা ছন্দেই ধরা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অতিবড় নিন্দুকেও মানেন যে জনসংযোগে রাজ্য রাজনীতিতে বাংলার অগ্নিকন্যার থেকে কেউ এগিয়ে যেতে পারবেন না। এমনই তাঁর অমোঘ টান। আর সেই অমোঘ টান তৈরি হয় এভাবেই। জনসমুদ্রে মিশে গিয়ে বা জনতার একজন হয়ে গিয়েছে। তা সে জনতার জন্য চা তৈরি করেই হোক কী মোমো তৈরি করেই হোক, নাচের তালে পা মেলানোই হোক কী গানের সুরে গলা মেলানোই হোক। এদিন কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে যেমন নাচের তালে পা মেলাতে দেখা গেল তেমনি দেখা গেল ধামসা মাদল বাজাতেও। আবার পড়ুয়াদের সঙ্গে মঞ্চে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীতের সময়েও গান গেয়েছেন তিনি।এদিন বিশ্ব আদিবাসী অনুষ্ঠানের শুরুর সময়েই রাজ্যের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা আদিবাসী কায়দায় শাড়ি পরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রীকে। এরপরই আদিবাসী মহিলাদের হাতে হাত রেখে তাঁদের তালে পা মেলান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাচের ফাঁকেই আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এরপর মঞ্চে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। পড়ুয়াদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ঢামসা-মাদল তুলে দেওয়া হয় বেশ কয়েকজনের হাতে। ধামসাও বাজান তিনি। আদিবাসী মহিলাদের মতো করে শাড়ি পরে পা মেলান ছন্দে। মুখ্যমন্ত্রীকে এভাবে কাছে পেয়ে আপ্লুত আদিবাসীরা। এই প্রথম নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদিবাসী ছন্দেও পা মিলিয়েছেন বহুবার। এবার আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে জঙ্গলমহলেই রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই তাই আদিবাসী ছন্দে মেতেছেন তিনি।চলতি সপ্তাহের সোমবার নবান্নে বসেছিল রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক। সেখানেই রাজ্যে থাকা বেসরকারি স্কুলগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যেমন শিক্ষা কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তেমনি সব ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে বাংলা পড়ানোর ওপর নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। কিন্তু তা নিয়ে রাজ্যের শিক্ষামহলে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছিল। সেই সব প্রশ্নের এদিন উত্তর দিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি ঝাড়গ্রামে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেই মঞ্চ থেকেই তিনি স্কুলে স্কুলে বাংলা পড়ানোর বিষয়টি নিয়ে যা বলার তা বলে দেন। কার্যত তুলে ধরেন রাজ্য সরকারের গৃহীত শিক্ষানীতির অন্যতম স্তম্ভটি। আর তা হল তিন ভাষার ফর্মুলা।এদিন মুখ্যমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠান থেকে বলেন, ‘কেউ কেউ ভাষা নিয়ে উল্টোপাল্টা বলছে। আমরা সেটা বলিনি। এটা নয় যে কারও ওপর কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্যাবিনেটে আমরা তিন ভাষা বা থ্রি ল্যাঙ্গুয়েজ ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা করেছি। যাঁরা বাংলা মিডিয়ামে পড়ে তাঁদের প্রথম ভাষা বাংলা। আর দুটো তাঁরা যে কোনও ভাষা নিতে পারে। প্রথম ভাষা হতে পারে মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা। বাকি দু’টোর ক্ষেত্রে পড়ুয়ারা নিজের ইচ্ছেমতো ভাষা বাছাই করে নিতে পারবে। কারও ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। বাংলায় বেশিরভাগ বাংলা মিডিয়াম স্কুল। ধরুন কেউ বাংলা মিডিয়ামে পড়ে। তার তো প্রথম ভাষা বাংলা। বাকি দুটো ভাষা যা ইচ্ছে নিতে পারে। কোনও অসুবিধা নেই। এগুলো অপশনাল। যদি কেউ অলচিকি মিডিয়ামে পড়ে, তাহলে অলচিকি তাদের প্রথম ভাষা। বাকি দুটো যা ইচ্ছে নিতে পারে। দার্জিলিংয়ে নেপালি ভাষায় পড়বে। বাকি দুটো যা ইচ্ছে নিতে পারবে। থ্রি ল্যাঙ্গুয়েজ ফর্মুলায় প্রথম ভাষা নিজের মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাষা যা ইচ্ছে হতে পারে। এটা নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার করবেন না।’এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অলচিকি মাধ্যমে পড়ে অলচিকি তাদের প্রথম ভাষা। পরে আরও দুটো ভাষা নেওয়ার সুযোগ থাকবে। তেমন ভাবে যার প্রথম ভাষা রাজবংশী, নেপালি, তারাও একইভাবে পড়তে পারবে। বাংলায় আমরা বাস করি। তার মানে এটা নয় যে কারোর ওপর কিছু চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শুধু মনে রাখতে হবে তিন ভাষার ফর্মুলায় মাতৃভাষা থাকবে এক নম্বরে। বাকি দুটো বিষয় ছাত্ররা বেছে নেবে। অযথা বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। সাঁওতালি, নেপালি, রাজবংশী, বাংলার মতো যে কোনও ভাষা ফার্স্ট ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে বেছে নিতে হবে। বাকি দুটি ভাষা থাকবে ঐচ্ছিক। সাঁওতালি ভাষার জন্য রাজ্য উচ্চ শিক্ষা দফতরে ডেডিকেটেড ব্রাঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। ঝাড়গ্রামের ব্লকে ব্লকে একটি করে সাঁওতালি মাধ্যম স্কুল তৈরি করা হবে, সেখানে হস্টেলের সুবিধাও থাকবে। একইসঙ্গে সেখানে ইংরেজিও পড়ানো হবে। সরকারি অনুমোদিত বি.এড কলেজও এখানে শুরু করা হবে।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct