আপনজন ডেস্ক: মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানার স্কুলগুলিতে আঞ্চলিক ভাষা বাধ্যতামূলক রযেচে। এবার এ রাজ্যের সব স্কুলে এবার ‘বাংলা ভাষা’ পড়ানো বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। সেই উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য কমিশনের ধাঁচে গড়া হবে শিক্ষা কমিশনও। সোমবার নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। রাজ্য মন্ত্রিসভা নতুন শিক্ষা কমিশন তৈরি করার ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দিয়েছে এদিন। ফলে, স্বাস্থ্য কমিশনের ধাঁচে শিক্ষা কমিশন গড়ায় আর কোনও অন্তরায় নেই। জানা গেছে, নব গঠিত এই শিক্ষা কমিশনের নেতৃত্বে থাকবেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। এছাড়া কমিশনে থাকবেন মধ্য শিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি, সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী মনোনীত দুই প্রতিনিধি। উল্লেখ্য, এতো দিন শুধুমাত্র রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতরের অধীনস্থ স্কুলগুলোতে বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু শিক্ষা কমিশন গঠিত হলে রাজ্যের সব বেসরকারি স্কুলে বাংলা এবং ইংরেজি পড়াতেই হবে। শুধু তাই নয়, তৃতীয় ভাষা হিসেবে যে অঞ্চলে যে ভাষার কার্যকরিতা বেশি সেই অঞ্চলে সেই ভাষা পড়া যাবে। তা হিন্দিও হতে পারে, সাঁওতালিও হতে পারে। এতদিন, বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠছিল রাজ্য সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলার সব স্কুলে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা পড়ানো বাধ্যতামূলক করা হোক। আর বাংলা পড়ানোর জন্য প্রতিটি স্কুলে দু’জন করে স্থায়ী বাংলার শিক্ষক নিয়োগ করা হোক। সেই দাবি পূরণে সোমবার সিলমোহর দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভা।অন্যদিকে ইংরেজি ও হিন্দি মাধ্যম স্কুলে প্রথম তিনটি ভাষার মধ্যে শিক্ষার্থীদের পছন্দের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ভাষা নির্বাচনের সুযোগ ছিল।
এখন থেকে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতে প্রথম ভাষা ইংরেজির নির্বাচনের পর দ্বিতীয় ভাষা হিসোবে বাংলা ভাষাকেও নির্বাচনে রাখতে হবে। একইভাবে হিন্দি ভাষী স্কুলগুলোতেও হিন্দির পর দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাষার একটিতে রাখতে হবে বাংলা ভাষাকে। শিক্ষা কমিশন গঠিত হলে শুধূ বাংলা ভাষা পড়ানোর বিষয়ে নজরদারি থাকবে না, বেসরকারি স্কুলের ফি নিয়ন্ত্রণ করবে। অনেক সময় বেসরকারি স্কুলে অস্বাভাবিক হারে ফি বাড়ানো হয়ে থাকে। সেসব বেসরকারি স্কুল সম্পর্কিত সব অভিযোগ শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে কমিশন। তবে সব ক্ষেত্রেই রাজ্য সরকারের অনুমতিক্রমে উপযুক্ত পরামর্শ ও কাজ করবে শিক্ষা কমিশন। মূলত অস্বাভাবিক হারে বেসরকারি স্কুলগুলির ফি বাড়ানো রুখতেই এই কমিশন কাজ করবে। প্রসঙ্গত, পার্থ চট্টোপাধ্যায় যখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন সেই সময় স্বাস্থ্য কমিশনের ধাঁচে গড়া হয়েছিল শিক্ষা কমিশন। সেই কমিশনে ছিল বেসরকারি স্কুলের প্রতিনিধিও। কিন্তু সেই কমিশনকে কার্যকরী করা যায়নি। এবার আবারও শিক্ষা কমিশন গঠনে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। এপ্রিল মাসে নবান্নে বেসরকারি স্কুলগুলিতে ফি বৃদ্ধি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু প্রস্তাব দিয়েছিলেন একটি কমিশন গঠনের, যে কমিশন বেসরকারি স্কুলগুলির উপর নজরদারি রাখবে। কিছুদিন আগেই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছিলেন, শিক্ষা কমিশন নিয়ে তারা ভাবনাচিন্তা করছেন। ধাপে ধাপে তা এগোবে বলেও জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। সোমবার সেই পরিকল্পনাই বাস্তবের রূপ পেতে চলেছে। সোমবার নবান্নে অনুষ্ঠিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যাবিনেট মিটিংয়ে সিলমোহর পড়ল শিক্ষা কমিশনের প্রস্তাবে। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে কলকাতার লরেটো কলেজে শুধু ইংরেজি মাধ্যমের পড়ুয়াদের ভর্তি নেওয়া হবে বলায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। প্রতিবাদের জেরে অবশেষে লরেটো কর্তৃপক্ষ সেই নোটিশ প্রত্যাহার করে। সেসময় ‘বাংলা পক্ষ’ নামে সমাজ সংস্কারমূলক সংগঠন ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা পড়ানোর বাধ্যতামূলক করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct