লেখক একসময় ওয়াকফ বোর্ডের মেম্বার ছিলেন, পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা বোর্ডেরও মেম্বারও ছিলেন। রাজ্য রাজনীতি সে সময় জমজমাট রূপ ধারণ করে। বেশ কয়েক জন ইমাম প্রফেসার ও সমাজ কর্মী ও বেশ কিছু সংগঠনসহ নেকেরই চিন্তায় জেগেছিল বাংলার আপামর জনতার কল্যাণ সাধিত হচ্ছে না। ২০১১তে পরিবর্তন ঘটেই গেল। পুরস্কার স্বরূপ দশ হাজার আন এডেড মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষিত হল। উদ্ভূত পরিস্থতি নিয়ে লিখেছেন ইসহাক মাদানী।
আমি তখন ওয়াকফ বোর্ডের মেম্বার ছিলাম, মাদ্রাসা বোর্ডেরও মেম্বার ছিলাম। রাজ্য রাজনীতি সে সময় জমজমাট রূপ ধারণ করে।বেশ কয়েক জন ইমাম প্রফেসার ও সমাজ কর্মী ও বেশ কিছু সংগঠনসহ নেকেরই চিন্তায় জেগেছিল বাংলার আপামর জনতার কল্যাণ সাধিত হচ্ছে না। ২০১১তে পরিবর্তন ঘটেই গেল পুরস্কার স্বরূপ দশ হাজার আন এডেড মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষিত হল। মসজিদের ইমাম এবং মুয়াজ্জিনের ভাতা ঘোষিত হল যথাক্রমে ২৫০০ এবং ১০০০ টাকা; সেই সঙ্গে ইমামদের বাসস্থানের কথাও বলা হয়েছিল। ইমাম মুয়াজ্জিন নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারী কোনো গাইড লাইন না থাকায় জগাখিচুড়িভাবে নিয়োগ হয়ে গেল। সে সময় কিছু বিষয় আপত্তিজনক মনে হলেও কিছু করার থাকল না যেমন(১) কিছু ইমাম ভেবে বসলেন জুময়া মসজিদ না হলে ভাতা পাওয়া যাবে না ফলে ওয়াক্তিয়া মসজিদকে রাতারাতি জুম্মা মসজিদে পরিণত করা হল। (২) অনেকে ইমাম হয়ে ভাতা পেতে থাকলেন কিন্তু তিনি তাঁর মসজিদ চেনেন না।(৩) কোনো কোনো মুয়াজ্জিনেরও একই অবস্থা (৪) কোনো কোনো জায়গায় মসজিদের বিদেশি ইমামকে তাড়িয়ে গ্রামের মৌলবী সাহেবকে ইমাম করা হল । বিদেশি ইমাম চোখের পানি ফেলে মসজিদ ছাড়তে বাধ্য হলেন যা ছিল তাঁর সংসার চালানোর সম্বল।আবার কিছু ইমাম বাতাসে ইমামতি করার সুযোগ পেলেন ইত্যাদি। তবে ইমামগণ ২৫০০আড়াই হাজারে নয় বরং গ্রামের মসজিদ কমিটির টাকাতে পুষ্টিত হয়ে সংসার ম্যানেজ করছেন।এবং ঘরের আশায় দিন গুনছেন।এ সব অনুগত ইমাম ভদ্রমহোদয়গণ থানা বা বিডিও এর ফর্মায়েসানুযায়ী সময়ে সময়ে জাতির খাতিরে আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা দেখাতে কুন্ঠাবোধ করেন না।দশ হাজার আন এডেড মাদ্রাসাকে স্বীকৃতিদানের ঘোষণা হয় সরকারি ভাবে। মাদ্রাসার গরীব দুস্থ মৌলবী সাহেবগণ আশায় কোমর বাঁধলেন সরকারের নেক নজরের দিকে তাকিয়ে থাকলেন এখনও তাকিয়ে আছেন। মধ্যে একবার বেচারাদের মনে জাগল ওরা ঢালাও হারে সমর্থন যুগিয়ে যাঁদের ক্ষমতায় আসতে সহযোগীতা করেছেন হয়ত বা সে সরকার, কাজের চাপে দশ হাজার মাদ্রাসার কথা ভুলে বসেছেন তাই ওঁরা ধর্ণায় বসার সিদ্বান্ত লন। জায়গা মিলে আলিয়া মাদ্রাসা কলেজ এর সম্মুখে হাজীি মুহাম্মদ মহসিন স্কোয়ারে। প্রস্রাবের এমনই ঝাঁঝাল গন্ধে ভরা স্থানটি যে নাকে কাপড় না দিয়ে সে পথ অতিক্রম করা হয় দুষ্কর। দীর্ঘ কয়েক মাস অবস্থানে লাঞ্ছনা আর লাঞ্ছনা ভোগের পর নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে নিরাশার কাহিনি শুনিয়ে সান্ত্বনা দেয় এ বলে যে সামনে ভোটের সময় না হয় আর একবার ধর্নায় বসবেন। হাজী মুহাম্মদ মহসিন স্কোয়ারে অবস্থিত আলিয়া মাদ্রাসা কলেজ একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তার বাউন্ডারী লাগোয়া ঝুপড়ি তো রাতারাতি তৈরি হয়নি। নিশ্চয় প্রশাসনের নাকের ডগায় ধীরে ধীরে গজিয়ে উঠেছে যা আইনত অবৈধ। ঝুপড়ি গড়ল, বিয়ে করল, সন্তানাদি হল, শিশুরা ঝুপড়ি থেকে বেরিয়ে পথেই মানুষ। ফলে পথে প্রস্রাব ব পায়খানা করবে না তো কোথায় করবে? কোনো ভদ্র এলাকায় এসব তো দেখা যায় না। সেই ধর্ণায় বসা লান্ছিত মানুষ গুলোকে আবার টোপ দেওয়া হচ্ছে মাদ্রাসার নামেই। পেটের জ্বালা ধর্ম মানে না এ কথা ঠিক তবে পেটের জ্বালায় ইমান বিক্রি ঠিক নয়। দুর্গন্ধময় জায়গায় দীর্ঘ দিন বসে লাঞ্ছিত না হয়ে চায়ের দোকান দিন বা ক্ষুদ্র কোনো না কোনো ব্যবসা করুন গ্রামে ফেরি করুন। ইমানী জাযবা নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ নিজে গড়ুন ।আপনি মূল্যহীন নন , আপনার মূল্য আছে বলেই পুনরায় মাদ্রাসার কথা পেপারে ভাসতে শুরু করেছে। আপনার শক্তি যথাসময়ে যথাস্থানে প্রয়োগ করুন। পান্তা ভাত আর ছাতু খেয়ে দিন কাটান কিন্তু আপনি নিজেকে লাঞ্ছিত হতে দেবেন না।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
লেখক বিশিষ্ট আলেম ও অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct