নাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর, আপনজন: এবার কংগ্রেসের গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজয়ী প্রার্থীর বিরুদ্ধে জাল ওবিসি সার্টিফিকেট পেশ করে পঞ্চায়েতে মনোনয়ন করার অভিযোগ তুললো শাসক দল। পাশাপাশি এও অভিযোগ তোলা হয়েছে ওই বিজয়ী কংগ্রেস প্রার্থী আসলে বাংলাদেশের বাসিন্দা।তিনি বিবাহ সূত্রে এই এলাকায় এসে এলাকারই এক ব্যক্তিকে ভুয়ো বাবা সাজিয়ে ওবিসি সার্টিফিকেট তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ।ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে মহকুমা শাসক ও বিডিও সহ একাধিক প্রশাসনিক দপ্তরে এ বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে।ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর এক নম্বর ব্লক এলাকার রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর সালদহ গ্রামে। ঘটনার জেরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকা জুড়ে।ইতিমধ্যে এই বিষয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর এক নম্বর ব্লক অফিসে শুনানি শুরু হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫৩ নম্বর বুথ অর্থাৎ উত্তর সালদহ থেকে এবছর কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে নমিনেশন জমা দেন লাভলী খাতুন। তার প্রতিপক্ষ হিসাবে শাসকদলের রেহেনা সুলতানা নমিনেশন জমা করেন। ভোটের ফল প্রকাশ হলে দেখা যায় ১৭ ভোটে কংগ্রেসের লাভলী খাতুন জয়ী হয়েছে।প্রসঙ্গত রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পদ এবছর ওবিসি মহিলা হিসেবে সংরক্ষিত হয়েছে।আর এই প্রধান পদ দখল করতেই অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের খেলা শুরু হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল বের হলে দেখা যায় ২১ আসন বিশিষ্ট রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েত ১১ টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএম জোট,৯ টি আসন পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।অন্যদিকে জোট সমর্থিত একটি আসনে নির্দল প্রার্থী জয়লাভ করেছে।এরপরই লাভলী খাতুন এর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন শাসক দলের হেরে যাওয়া প্রার্থী রেহেনা সুলতানা ও তার পরিবার।লাভলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তিনি ওবিসির জাল সার্টিফিকেট পেশ করে পঞ্চায়েতে নমিনেশন জমা করেছেন। পাশাপাশি তিনি ভারতের নাগরিকই নয়।কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এক ব্যক্তিকে তিনি ভুয়ো বাবা সাজিয়ে এই ওবিসি সার্টিফিকেট বের করেছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক।বিবাহ সূত্রে এলাকায় বসবাস করছেন। অবিলম্বে তার প্রার্থী পথ বাতিল করতে হবে বলে শাসক দল অভিযোগ তুলেছেন।এ প্রসঙ্গে অভিযোগকারী রেহানা সুলতানা জানান লাভলী খাতুন এলাকার বাসিন্দা নন । আমরা জানতে পেরেছি তিনি বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন।ভারতে এসে তিনি উত্তর সালদাহ গ্রামের রবিউল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে করে এখানকার বাসিন্দা হয়েছেন। জাল ওবিসি সার্টিফিকেট বের করে তিনি পঞ্চায়েতে মনোনয়ন পেশ করেন। আমরা চাইছি ওর প্রার্থীপদ বাতিল করা হোক। আরেক অভিযোগকারী রেহানার শ্বশুর খাইরুল ইসলাম জানান কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬ নং বুথের বাসিন্দা মুস্তাফা নামে এক ব্যক্তিকে লাভলী তার ভুয়ো বাবা সাজিয়ে এই সার্টিফিকেট বের করেছে। আমাদের কাছে তার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। অভিযোগ দায়ের করার পরেই আমাকে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে লাভলী খাতুনকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। যদিও সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আলম।তিনি বলেন শাসক দল যেন তেন প্রকারে এখন রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করতে চাইছে।তাই এই নোংরা খেলায় মেতেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক এর দপ্তরে হিয়ারিং হয়েছিল।আমি ওই প্রার্থীর সঙ্গে বিডিও সাহেবের চেম্বারে উপস্থিত ছিলাম। ও যদি বাংলাদেশের নাগরিক হতো তাহলে কিভাবে ভোটার কার্ড আধার কার্ড এবং অন্যান্য নথিপত্র ও জোগাড় করল।রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত নথিপত্র রয়েছে।এগুলো সমস্ত ভিত্তিহীন অভিযোগ।এ প্রসঙ্গে ওই এলাকার শাসকদলের জেলা পরিষদের বিজয়ী প্রার্থী মর্জিনা খাতুন জানান আমরা বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, কংগ্রেসের ওই মহিলা প্রার্থী ওই এলাকার মেয়েই নয়।আগে দিল্লিতে থাকতো। তারপর বিবাহ সূত্রে এই এলাকায় এসেছে। এলাকায় যাকে বাবা বলে ও পরিচয় দিচ্ছে সরকারের খাতায় লাভলী খাতুন নামে তার কোন মেয়ে নেই।এদিকে এ প্রসঙ্গে চাঁচল মহকুমা শাসক কল্লোল রায় জানান অভিযোগ পেয়েছি সমস্ত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এলাকার বিডিওকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct