আব্দুস সামাদ মন্ডল, করিমপুর, আপনজন: করিমপুর-২ ব্লকের নতিডাঙ্গা গ্রামীণ হাসপাতালের বেহাল চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে ক্রমশই ক্ষোভ বাড়ছে এলাকায় রোগী ও পরিজনদের মধ্যে। অভিযোগ, সুপার সহ হাসপাতালে ৭ জন ডাক্তার থাকলেও জরুরি বিভাগে সময়মত ডাক্তারদের পাওয়া যায়না। দুর্গন্ধে বাথরুমে ঢুকতে পারেনা রোগীরা। অন্যদিকে আউটডোরে পর্যাপ্ত ডাক্তার না বসায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় রোগীদের। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখানে সুপার সহ ৭ জন ডাক্তারসহ ৮ জন নার্স আছেন, তবুও কেন সময়মত ডাক্তার পাওয়া যায়না তা নিয়ে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী। দুদিন আগে অজ্ঞান অবস্থায় স্ত্রীকে হাসপাতালে এনেছিলেন মথুরাপুরের আশরাফ সেখ। তার অভিযোগ, অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় ঘণ্টাখানেক বেডেই পড়ে ছিলেন স্ত্রী। ডাক্তার কখন আসবে নার্সদের জিজ্ঞাসা করলে বলেন, আউটডোরে গিয়ে দেখুন ওটা আমাদের কাজ নয়। আমি সম্পূর্ন ঘটনার ভিডিও করতে গেলে কর্তব্যরত নার্স আমার মোবাইলটা ঝটকা দিয়ে ফেলে দিয়ে বলেন, তুই যা পারিস করে নিস।’এই ঘটনায় মৃদু উত্তেজনা ছড়ালে পুলিশ এসে পরিস্থিতি ঠিক হয়। আমির খাঁন নামে এক ব্যক্তির অভিযোগ, ‘আমার স্ত্রী দাঁড়াতে পারছিল না তবুও তাকে ইমার্জেন্সিতে ডাক্তার না পেয়ে আউটডোরে গিয়েই দেখাতে হয়েছে। নার্সরা চেয়ারে বসে মোবাইল ঘাটছেন। বারবার বললেও কথা কানে নেন না। বেড থেকে রোগীকে তাদের কাছে নিয়ে স্যালাইন দিয়ে নিতে হচ্ছে।’ এলাকাবাসীর অভিযোগ, হাসপাতালে নতুন ভবন তৈরি হলেও কিন্তু সেইভাবে পরিষেবা মিলছে না, সিরিঞ্জটাও কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। সেই সঙ্গে আছে নার্সদের দুর্ব্যবহার।
অন্যদিকে আউটডোরে কোন শেডের ব্যবস্থা না থাকায় টিকিট কাটার জন্য রোগীদের দীর্ঘক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান সংসদ মহুয়া মৈত্রের প্রতিনিধি আনিসুর রহমান মন্ডল বলেন, ‘আউটডোরের শেড না হওয়া পর্যন্ত রোগীদের ভিতরের বারান্দায় লাইন দিয়ে টিকিট দেওয়ার জন্য বিএমএইচ স্যারকে বারবার বলেও কাজ হয়নি। উনি নিজেও হাসপাতালের অফিস ডিউটি ঠিকমত করেন না। কোয়ার্টারে চেম্বার করেন। এমপি ম্যাডাম বলেও কোন কাজ হয়নি।’নতিডাঙ্গা গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসার বেহাল দশা মেনে নিয়ে নতিডাঙ্গা-১ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান রেজাউল সেখ বলেন, ‘হাসপাতালের সুপারকে কোনদিন ডিউটি করতে দেখিনি। উনি ডাক্তারদের ঠিকমত পরিচালনা না করে সরকারি কোয়ার্টারে চেম্বার খুলে বসে আছেন। জরুরি বিভাগে ডাক্তাদের ডেকে ডেকেও পাওয়া যায়না। নার্সরাও ঠিকমত ডিউটি করে না। হাসপাতালে একটা উচ্চ স্তম্ভ বাতি আছে সেটাও রাতে জ্বলে না। বাথরুমের দুর্গন্ধে রোগীরা বেড ছেড়ে পালিয়ে যায়।’যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতালের সুপার মিঠুন সরকার এদিন কোয়ার্টারের চেম্বারে বসে বলেন, ‘ইমার্জেন্সিতে ডাক্তার থাকেনা এমন তো কোনদিন হয়না। যখন ডাক্তাদের শিফটিং ডিউটি পরিবর্তন হয় তখন তাদের ১৫-২০ মিনিট লেট করতে হয়। তারা টিফিন করতে যান। এইটুকু তো মেনে নিতেই হবে। ইমার্জেন্সি কেস আসলে সব সময় অ্যাটেন্ড করা হয়। তবে ডাক্তাদেরও তো অনেক সময় টয়লেট যাওয়ার দরকার পড়ে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct