আপনজন ডেস্ক: আগামী ৫ আগস্ট রাজ্য জুড়ে বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করার যে কর্মসূচি তৃণমূল কংগ্রেস নিয়েছিল, সোমবার তার উপর স্থগিতাদেশ জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট। আজ সোমবার আদালত এ নিষেধাজ্ঞা দেন। এর ফলে তৃণমূল কংগ্রেস আর সেই কর্মসূচি নিতে পারছে না। উল্লেখ্য, ২১ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের ডাকা শহীদ দিবসের দিন কলকাতার ধর্মতলার আয়োজিত তৃণমূলের সভা থেকে দলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার এই রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে ৫ আগস্ট রাজ্যের সর্বত্র; অর্থাৎ জেলা, থানা, ব্লক ও পঞ্চায়েত পর্যায়ের সব বিজেপি নেতার বাসভবন ঘেরাও করা হবে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে এই ঘেরাও কর্মসূচি। এই ৮ ঘণ্টা গণঘেরাও সময়ে বিজেপির কোনো নেতা বাড়ি থেকে বের হতে পারবেন না। কোথায়ও যেতে পারবেন না। বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দেবে না। তবে কেবল প্রবীণদের ছাড় দেওয়া হবে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ কেন্দ্রীয় সরকার আটকে দিচ্ছে, এমন অভিযোগ এনে তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘেরাওয়ের ডাক দেয়। অভিষেকের এই ডাকের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটু পরই তাঁর ভাষণে এই ঘেরাও কর্মসূচির কিছুটা বদল করে জানিয়ে দেন, ঘেরাও হবে শুধু ব্লক পর্যায়ের নেতাদের বাসভবন। আর তা হবে প্রতীকী। একই সঙ্গে জানিয়ে দেন, এই ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হবে বিজেপি নেতাদের বাসভবনের ১০০ মিটার দূরে। তবে তা হবে শান্তিপূর্ণ। এই ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণার পর বিজেপি তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানায়, প্রতিটি ক্রিয়ার বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। সেটা যেন তৃণমূল মনে রাখে। যেন আরও মনে রাখে, এই ঘোষণা সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপের শামিল। এটা মানবে না বিজেপি।
বিরোধী দলনেতা ও বিজেপির বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন। তিনি বলেন, ‘এটা মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের শামিল। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’ সেই মামলার শুনানি ছিল সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চে। শুনানির পর প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এক নির্দেশে ৫ আগস্টের বিজেপির নেতাদের বাসভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচির ওপর স্থগিতাদেশ জারির নির্দেশ দেন। প্রধান বিচারপতি এদিন বলেন, ‘২১ জুলাই সভার জন্য কোর্টে কোনও কাজ হয়নি। ১১.৩০ এর মধ্যে কোর্ট রুম ফাঁকা হয়ে যায়। আমরা বিচারপতিরা উঠে যেতে বাধ্য হই। রাজনীতি করুন। আপনি জিতুন, অন্যরা হারুক।আপনি হারুন, অন্যরা জিতুক। কিন্তু তার জন্য সাধারণ মানুষ কেন ভুগবে?’ এখানেই শেষ নয়, প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কেউ যদি এই ধরনের মন্তব্য করে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেবে না? ধরুন কেউ বলল হাইকোর্ট ঘেরাও করবে। তাহলে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেবে না?’ প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির।আদালত বিবাদীদের ১০ দিনের মধ্যে শুভেন্দ অধিকারীর পিআইএলের বিরুদ্ধে তাদের যুক্তির সমর্থনে হলফনামা দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে এবং বলেছে যে দুই সপ্তাহ পরে এই বিষয়ে আবার শুনানি হবে। যদিও এদিন আদালতে অভিষেকের আইনজীবী বলেন, ঘেরাও প্রতীকী হবে এবং বিজেপি নেতাদের বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরে অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে, ঘেরাও কর্মসূচি না থাকলেও বুধবার আট ঘণ্টার জন্যই পথে নামবে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। সোমবার আদালতের রায় ঘোষণার পর দলের পক্ষে এই কর্মসূচির কথা জানান তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়। তিনি বলেন, আগামী ৫ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ আদায়ের দাবিতে তৃণমূল বিক্ষোভ দেখাবে। কারও অসুবিধা না করে, দলীয় সংস্কৃতি ও শৃঙ্খলা মেনে তৃণমূল কর্মীরা কেন্দ্রের অর্থনৈতিক অবরোধের বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করবে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct