তৎকালীন স্বৈরশাসক ইয়াজিদের আদেশে তার গভর্নর ওবাইদুল্লাহ, জিয়াদের নেতৃত্বে ইমাম হুসাইন (রা:) কে সেই দিন ইতিহাসের নির্মমতম এবং পৈশাচিক ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। কারবালার ঘটনা এতোটাই পৈশাচিক সর্বোপরি নির্মমতম ছিল যে, এটা যুগে যুগে কঠিন হৃদয় কেও নাড়া দিয়েছে। কারবালা যেন আরবি ‘কারব’ ও ‘বালা’ এর সরলরূপে পরিণত হয়েছে। ‘কারব’ মানে সংকট আর ‘বালা’ মানে মুসিবত। তাই এই কারবালা সংকট ও মুসিবতের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। লিখেছেন এম ওয়াহেদুর রহমান।
মানবতার অগ্রদূত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মৃত্যুর পূর্বে তিনি কখনোই উত্তরাধিকার সূত্রে খলিফার জন্য কাউকে মনোনয়ন না করে বরং তা জনগণের চাহিদার উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। যে সূত্র ধরে ইসলামের চারজন খলিফা নিযুক্ত হয়েছিলেন সম্পূর্ণ ভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগণের চাহিদানুযায়ী। কিন্তু উমাইয়া বংশের খিলাফত লাভের পর গণতান্ত্রিক প্রথা বিলুপ্ত হয়ে রাজতন্ত্রের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজতন্ত্রের বিরোধীতা করার কারণে স্বৈরাচারী শাসক ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে ৬১ হিজরীতে ১০ মুহাররম হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) এর দৌহিত্র তথা হযরত আলী ও মা ফাতেমার পুত্র বেহেস্ত বাসী যুবকদের সর্দার হযরত ইমাম হুসাইন (রা:) শাহাদাত বরণ করেছিলেন। তৎকালীন স্বৈরশাসক ইয়াজিদের আদেশে তার গভর্নর ওবাইদুল্লাহ, জিয়াদের নেতৃত্বে ইমাম হুসাইন (রা:) কে সেই দিন ইতিহাসের নির্মমতম এবং পৈশাচিক ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। কারবালার ঘটনা এতোটাই পৈশাচিক সর্বোপরি নির্মমতম ছিল যে, এটা যুগে যুগে কঠিন হৃদয় কেও নাড়া দিয়েছে। কারবালা যেন আরবি ‘কারব’ ও ‘বালা’ এর সরলরূপে পরিণত হয়েছে। ‘কারব’ মানে সংকট আর ‘বালা’ মানে মুসিবত। তাই এই কারবালা সংকট ও মুসিবতের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বিশ্ব মুসলিম মিল্লাতের নিকট কারবালার গুরুত্ব অনেক। ইমাম হুসাইন (রা :) এর সংগ্ৰামের মূল লক্ষ্য ছিল খিলাফত ব্যবস্থার পুনর্জীবন। ইয়াজিদের বিরুদ্ধে কুফাবাসীর সাহায্যের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে ইমাম হুসাইন (রা :) স্ত্রী, ছেলে, বোন তথা ঘনিষ্ঠ দুইশো অনুচর নিয়ে ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে কুফার উদ্দেশ্য রওনা হন। ফোরাত নদীর তীরবর্তী কারবালা নামক স্থানে পৌঁছলে কুফার গর্ভনর ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ তাঁকে বাঁধা দেন। তখন ইমাম হুসাইন (রা:) রক্তপাত এবং খুনোখুনি বন্ধের উদ্দেশ্যে তিনটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রথমতঃ তাঁকে মদীনায় ফিরে যেতে দেওয়া হোক। দ্বিতীয়ত: তুর্কি সীমান্তের দুর্গে অবস্থান করতে দেওয়া হোক। তৃতীয়তঃ ইয়াজিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দামেস্কে পাঠানো হোক।
কিন্তু ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ নি:শর্ত আত্মসমর্পণ করে তার হাতে আনুগত্যের শপথ নিতে আদেশ দেন ইমাম হুসাইন (রা:) কে। হযরত হুসাইন (রা:) ঘৃণা ভরে তার এ আদেশ প্রত্যাখান করেন। অবশেষে জিয়াদের চার হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী ইমাম হুসাইন (রা :) কে অবরুদ্ধ করে ফেলে এবং ফোরাত নদীতে যোগাযোগের পথ বন্ধ করে দেয়। ফলস্বরূপ ইমাম হুসাইন (রা :) র শিবিরে পানির হাহাকার শুরু হয়। ইয়াজিদ বাহিনী ১০ মুহাররম ইমাম হুসাইন (রা:) র উপর ঝাপিয়ে পড়ে। এই অসম যুদ্ধে ইমাম হুসাইন (রা :), তাঁর নিস্পাপ পুত্র সহ ৭২ জন শহীদ বরন করেন। ইমাম হুসাইন (রা :) এর ছিন্ন ভিন্ন মস্তক বর্শা ফলকে বিদ্ধ করে দামেস্কে পাঠানো হয়। সত্য ও ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত কারবালা প্রান্তরে প্রতারিত নির্মম নির্যাতন - নিপীড়নের শিকার ইমাম হুসাইন (রা:)এর কাফেলা চিরস্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন লাখো লাখো মুসলিম জনতার হৃদয় মাঝে। প্রতিটি মহররম এবং প্রতিটি আশুরা আমাদের সত্য ও ন্যায়ের উপর দৃঢ় প্রত্যয় থাকার মাহাত্ম্য স্মরণ করিয়ে দেয়। জীবনের ব্রত, ত্যাগের শিক্ষা, আত্মমর্যাদাবোধ জাগ্ৰত করে, ভয়কে জয় করে, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সহজ পথ ও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করাই কারবালার শিক্ষা। এই ইতিহাস সত্যের পথে জালেমের বিরুদ্ধে লড়াই করার, রক্তাক্ত স্মৃতিচারণের ইতিহাস। এ মর্মান্তিক ঘটনাটি এতই লোমহর্ষক তথা হৃদয় বিদারক যে সমগ্ৰ বিশ্বের মানুষ আজও তা ভুলতে পারে নি। কারবালার এই হত্যা কান্ড ইতিহাসের অবিস্মরণীয় এক ট্রাজেডি। অন্যায় - অসত্যের সঙ্গে আপোষ না করে সত্যের মশাল প্রজ্বলনের এবং আত্মত্যাগের যে দৃষ্টান্ত ইমাম হুসাইন (রা :) করেছেন তা ইতিহাসে বিরল। ইমাম হুসাইন (রা :) এর আত্মত্যাগের মাহাত্ম্য এক অনুকরণীয় মহান শিক্ষা। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় মুহররম ও আশুরা উপলক্ষে বিশ্ব জাহানের মুসলিম উম্মাহর মাঝে যে সকল কার্যকলাপ আজ দিকে দিকে পরিলক্ষিত হচ্ছে তা হয়তো ইয়াজিদ - সীমার দের কেও হার মানিয়ে দিবে। আজ ও মুসলিম জনতার অর্ধেক ভাগ মানুষের মধ্যে দেখা যায় তাজিয়া, বুকে করাঘাত করে আর্তনাদ, কারবালার অনুকরণে অভিনীত কৃত্রিম যুদ্ধ, ঢাক ঢোল পিটিয়ে মিছিল সহ আরও অনেক কিছু। তাই স্বাভাবিক ভাবেই মনের গহীনে প্রশ্ন উঁকি মারে - এগুলো কি কারবালার হাড় হিম করানো ইমাম হুসাইন (রা :) এর কাফেলার শহীদ বরণের স্মৃতি রোমন্থন নাকি ইয়াজিদ - সীমার দের মতোই বিজয় উল্লাসের পার্বণ ? এগুলো কি ইসলাম গর্হিত কার্যকলাপ নয়?
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct