আপনজন ডেস্ক: মণিপুর সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিস্তৃত বিবৃতির দাবি পুনর্ব্যক্ত করে কংগ্রেস সোমবার লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মণিপুর নিয়ে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশের বক্তব্যকে “শিরোনাম হওয়ার মরিয়া চেষ্টা” বলে অভিহিত করেছে। অমিত শাহ এর আগে বলেছিলেন, সরকার সংসদে মণিপুর নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক এবং বিরোধী দলকে আলোচনার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। শাহ বলেন, ‘বেশ কয়েকজন সদস্য মণিপুর নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়েছেন। এটি একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয় এবং আমি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। আমি বিরোধী দলের সকল সদস্যকে অনুরোধ করছি যে, অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি ইস্যুতে বিরোধীরা কেন আলোচনার অনুমতি দিতে চায় না তা আমি জানি না।’ তিনি বলেন, আমি বিরোধী দলীয় নেতাকে আলোচনার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি এবং সত্য বেরিয়ে আসা গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিরোধীরা কোনও আলোচনার আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বিবৃতি দেওয়ার দাবিতে অনড় ছিল। এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আক্রমণ করে জানতে চান, কেন প্রধানমন্ত্রী সংসদে এই ইস্যুতে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অমিত শাহ কারও বিশেষ উপকার করছেন না। ভারতের অন্তর্ভুক্ত দলগুলির সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক এবং বৈধ দাবি হ’ল প্রথমে মণিপুর পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি এবং তারপরে একটি আলোচনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে পুরোপুরি নীরব। প্রধানমন্ত্রীকে প্রথমে সংসদের ভিতরে কথা বলতে দ্বিধা করার কারণ কী?
গত সপ্তাহে দুই নারীকে নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরানোর ভিডিও প্রকাশের পর সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শুরু করেছে বিরোধীরা। সংসদের বাইরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে প্রথাগত আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গোটা দেশ লজ্জিত হয়েছে এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। গত ৩ মে শুরু হওয়া জাতিগত সংঘর্ষে প্রায় ১৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এদিকে প্রিজাইডিং অফিসাররা বিধি ২৬৭ এর অধীনে আলোচনা করতে অস্বীকার করায় সোমবার সংসদের উভয় কক্ষ স্থগিত করা হয়। বেশ কয়েকজন সদস্য উভয় কক্ষে মণিপুর ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য মুলতুবি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। ২০ জুলাই বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরু হওয়ার পর থেকে সংসদের কাজ চলছে না। আম আদমি পার্টির (এএপি) নেতা সঞ্জয় সিংয়ের সাসপেনশনের বিরুদ্ধে এবং প্রধানমন্ত্রীকে মণিপুর নিয়ে বিতর্কের সূচনা করার দাবিতে বিরোধী জোট ভারতের নেতারা রাতভর সংসদ প্রাঙ্গণে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে ইন্ডিয়া জোটের নেতারা রাতভর গান্ধী মূর্তির কাছে বসে থাকবেন বলে জানিয়েছেন প্রবীণ নেতারা। কংগ্রেস সাংসদ মল্লিকার্জুন খাড়গে, তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাককি ঘোষ দস্তিদার প্রতিবাদে অংশ নেন।শেষবার গত বছরের জুলাই মাসে রাজ্যসভার ২০ জন সাসপেন্ড সদস্য সংসদ চত্বরে ৫০ ঘণ্টার রিলে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন।আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিং, যাকে বাদল অধিবেশনের বাকি অংশের জন্য রাজ্যসভা থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল, তিনি সারা রাত বিক্ষোভে বসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।সিংয়ের স্ত্রী ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে তার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে এসেছেন।তিনি বলেন, ‘সব দলই তাদের নেতাদের তালিকা তৈরি করেছে, যারা দিনরাত তাদের প্রতিনিধিত্ব করবে। নেতারা পালাক্রমে কাজ করবেন। দলগুলোর মধ্যে পূর্ণ সংহতি রয়েছে। যদিও সিং-এর সাসপেনশনের প্রতিবাদে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রাজ্যসভা হোক বা লোকসভায় মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিরোধী দাবিতে এটি একটি প্রতিবাদ। সূত্রের খবর, মণিপুরের সহিংসতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আলোচনার সূচনা করার দাবিতে অনড় রয়েছেন বিজেপি নেতারা এবং বেশ কয়েকটি দল তাদের শান্ত করার সরকারের প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সূত্রের খবর, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও লোকসভার উপনেতা রাজনাথ সিং কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খাড়গে, ডিএমকের টিআর বালু এবং তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে মণিপুর নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে সরকারের ইচ্ছার কথা জানান। তবে তাদের কেউই সংসদে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দেওয়ার দাবি মেনে নেননি বলে সূত্রের খবর।বিজেপি জোটের নেতারা আরও জানিয়েছেন, মণিপুরের সহিংসতা নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জন্য বিরোধীদের দাবি বর্ষা অধিবেশনের চার দিন আগে ১৬ জুলাই বিজেপিকে জানানো হয়েছিল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct