সুন্দরবন এবং আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ দিবস উদযাপন
সজল মজুমদার
পৃথিবীর অন্যতম জীব বৈচিত্রের আধার বা আঁতুড়ঘর হলো সুন্দরবন। সুন্দরবন যেমন পরিবেশগত দুর্যোগের হাত থেকে সংশ্লিষ্ট বিস্তীর্ণ এলাকা কে রক্ষা করে চলেছে, তেমনি জলবায়ুগত ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রেও এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। সুন্দরবন মানে নিছক গাছপালা নয়, বরং উদ্ভিদ, প্রাণী, কীটপতঙ্গ ও জীব অণুজীবের সাপেক্ষে স্থলজ এবং জলজ প্রতিবেশের মিশ্রণ। ৫৬ টি ব দ্বীপ রয়েছে এই অসাধারণ বনাঞ্চলে। ৪২৬৪ বর্গ কিমি জুড়ে এর বিস্তার। এরমধ্যে ২৫৮৫ বর্গ কিমি সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ। প্রসঙ্গত বিভিন্ন প্রাকৃতিক এবং মনুষ্য সৃষ্ট কারণ এর দ্বারা সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বর্তমানে ব্যাপকভাবে ধ্বংস হচ্ছে। তাই সুন্দরবনের স্পর্শকাতর পরিবেশের ব্যাপারে আমাদের আরও সংবেদনশীল এবং যত্নবান হতেই হবে। এই ‘ প্রাকৃতিক প্রাচীর’ রক্ষাকবচ হয়ে আগলে রাখে ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস থেকে। তাই ইউনেস্কো ২০১৫ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রতিবছর ২৬ শে জুলাই দিনটিতে আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। সেই ভাবনা থেকেই এবছর পূর্বাশা ইকো হেল্পলাইন সোসাইটি এবং অন্যান্য সহযোগী স্বেচ্ছাসেবী ও পরিবেশ প্রেমী সংস্থা চরঘেরী, কুমিরমারি সহ সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকায় ১০ হাজার ম্যানগ্রোভ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তৎসহ সেখানকার মহিলা ও মেয়েদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রদান, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ চালু করা, কমিউনিটি হল উদ্বোধন, বাঘের দ্বারা আক্রান্ত পরিবারের মানুষের চোখের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চশমা প্রদান করা, চর ঘেরি, কুমির মারি, সোনা গা, বেল তলি এলাকায় ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের শিক্ষণ সামগ্রী প্রদান ইত্যাদি নানান উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এবারের এখানকার ম্যানগ্রোভ দিবস উদযাপনের অন্যতম মূল স্লোগানটি হলো , “ মহিলারা লাগাচ্ছে বাদাবন, হবে বাস্তু তন্ত্রের সংরক্ষণ”। তবে বাদা বন রক্ষার পাশাপাশি এটির গুরুত্ব অনুধাবন করবার লক্ষ্যে এবার একটি ম্যানগ্রোভ কর্মশালারও আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত দিনে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত থেকে ম্যানগ্রোভ সম্পর্কে তাদের মূল্যবান বক্তব্য পেশ করবেন। বিশ্বভারতীর অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড: মলয় মুখোপাধ্যায় সুন্দরবনের সোসিও ইকোলজিক্যাল ভারসাম্যের উপর বক্তব্য রাখবেন। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আশীষ কুমার পাল উপকূলীয় এলাকায় ম্যানগ্রোভের গুরুত্ব নিয়ে বলবেন। ড: কানাইলাল দাস, নদী বাঁধ ও ম্যানগ্রোভ নিয়ে কিছু কথা বলবেন। কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড: শশাঙ্ক কুমার গায়েন প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণে সুন্দরবনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করবেন। এছাড়াও বীরভূম শম্ভুনাথ কলেজের অধ্যাপক ড: জয়ন্ত গৌড়, খারি বিজ্ঞানী ড: সৌরভ পাল, প্যাডম্যান সুমন্ত বিশ্বাস, দন্ত বিশেষজ্ঞ ড: মলয় বাচার, IIT যোধ পুরের গবেষক আমির সোহেল প্রভৃতি গুণীজনেরা সুন্দরবনের ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের উপর নিজেদের স্বতন্ত্র মতামত তুলে ধরবেন। প্রসঙ্গত ২০২৩-২০২৪ সালের ইউনিয়ন বাজেটেও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ কেন্দ্রিক বাস্তুতন্ত্র কে রক্ষা করবার জন্য এবং সুন্দরবনের অর্থ সামাজিক পরিস্থিতি উন্নয়ন করবার লক্ষ্যে mangrove initiative for shoreline habitats and tangible incomes ( MISHTI) প্রকল্প ঘোষণা করেছে। এই প্রসঙ্গে সুন্দরবনের ভূমিপুত্র , পূর্বাশার সম্পাদক উমাশঙ্কর মন্ডল বলেন, “ ম্যানগ্রোভ এর প্রয়োজনীয়তা এবং ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণের গুরুত্বকে আগামী প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রবেশ করানোর জন্য ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি কলেজের সাথে মৌ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে পরবর্তীতে ম্যানগ্রোভ এবং পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা, কনফারেন্স, ক্যুইজ ইত্যাদি আগামীতে আয়োজিত হবে” । বস্তুতই সুন্দরবন নিয়ে পরিকল্পনা, পরিচর্যা, সুস্থায়ী ভাবনা এই অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের জন্য সকলের সহযোগিতা ভীষণ প্রয়োজন। তাই আসুন, প্রতিবছর ম্যানগ্রোভ দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে পরিবেশ রক্ষার দৃঢ়সংকল্পে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ হই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct