কসাই
কনক কুমার প্রামানিক
মফস্বলের ছোট্ট এ বাজারটিতে মতিন মিয়ার মাংসের দোকান। পেশায় তিনি একজন কসাই। সারা বছরই তিনি বাজারের উত্তর কোণায় বসে মাংস বিক্রি করেন। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ সময় তার বেচা কেনা বেশ ভালো। এখন রমজান মাস চলছে। রমজান মাসে বেচাকেনা ভালো হয়। অধিক মুনাফার লোভে তিনি এ সময় মাংসের দাম অনেক বাড়িয়ে দেয়। বাজারে একটায় মাংসের দোকান বলে মানুষ একরকম বাধ্য হয়েই সেখান থেকে কেনে। মেজাজ তার বেজায় রকমের চড়া। কেউ দাম কম বললে তার কাছে মাংস বিক্রি করে না। তাছাড়া ধার বাঁকিতেও তিনি কাউকে মাংস দেয় না। চরম বদ মেজাজি লোক । বাজারে প্রায়শ এর ওর সঙ্গে তার গণ্ডগোল লেগেই থাকে। সারাদিন সে বাজারেই থাকে। দুপুর বেলা ছেলেটা এসে খাবার দিয়ে যায়। অনেক রাত পর্যন্ত মদ মাস্তি করে বেঘোর মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরে। তারপর বিশ্রী ভাষায় বউ ছেলে মেয়েকে গালিগালাজ করে। এটা তার নিত্য দিনের রুটিন। খুব চেঁচামেচি হচ্ছে মতিন মিয়ার বাড়ি। আজ মদের ডোজ বোধহয় খুব বেশী হয়েছে। বউকে বিশ্রী ভাষায় খুব গালিগালাজ করছে। দুপুরে ছেলের হাতে সে মাংস পাঠিয়েছিল রাতে রান্নার জন্য। রাতে এসে সে খাবে। দুপুরে বড় কাতলা মাছ রান্না করেছে বলে সে রাতে আর মাংস রান্না করেনি। এটা নিয়ে তুমুলযুদ্ধ শুরু করেছে সে। এর মধ্যে প্রতিবেশীরা অনেকে এসেছে। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সে বারবার বউকে মারতে তেড়ে আসছে। প্রতিবেশী আবুল ওকে জাপটে ধরে আছে। তবুও বউটা নিশ্চুপ। একবার শুধু আস্তে আস্তে বললো, এতো চিৎকার করেন ক্যান, ফ্রিজে আছে কাল সকালেই রান্না করে দিমুনে। তখনই মতিন মিয়ার মাথায় আগুন চেপে গেল। আবুলকে এক ঝটকায় ফেলে দিয়ে মাংস কাটার ধারালো দা দিয়ে মাথার মাঝমাখানে সজোরে এক কোপ বসিয়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে মাটির দেয়ালের চারপাশটা লাল হয়ে গেল। মাথাটা দ্বিখণ্ডিত হয়ে নিথর দেহ পড়ে রইলো মাটিতে। সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল। কেই কিছু বোঝার আগেই হনহন করে পালিয়ে গেল কসাই মতিন। এটি তার প্রথম বউ মারার ঘটনা নয়। এর আগেও সে তার দ্বিতীয় বউটাকে মারতে মারতে মেরে ফেলেছিল। আর প্রথম বউটা মারা দিয়েছিল বাচ্চা হওয়ার সময়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct