এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজেপিকে পরাজিত করার জন্য ‘ইন্ডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল, ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স)-এর প্রতি অবিচল আস্থা প্রকাশ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ‘জিতেগা ভারত’-এর জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন শুক্রবার ধর্মতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের ডাকা শহীদ সমাবেশে। বিজেপি শাসিত মণিপুরে সম্প্রতি দু’জন নারীকে নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরানো, তাদেরকে যৌন নির্যাতন করা এবং গণধর্ষণের অভিযোগে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। চলছে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়। মমতা এদিন সেই ইস্যুতেও সোচ্চার হয়েছেন। মমতা বলেন, ‘মণিপুরে যে নির্যাতন, বর্বর ঘটনা ঘটেছে তা লজ্জা! অসভ্যতা! ধিক! ধিক! ধিক! পৃথিবীর অন্যতম সভ্যতার লজ্জা! যা ঘটেছে আমার উপজাতি বোনেদের ওপরে, দলিতদের ওপরে, সাধারণ ভাইবোনেদের ওপরে। যে বোনেদের রাস্তায় উলঙ্গ করে যেভাবে নির্যাতন করেছে, আমরা তাদের বলি, তোমরা বীর, সহস্র বীর নারী। ভয় পেয়ো না, এগিয়ে যাও, তোমাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তোমাদের এই লড়াইয়ের জন্য।’ আমরা জাতি দাঙ্গা চাই না, আমরা শান্তি চাই বলেও মন্তব্য করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ অব্যাহত রেখে তৃণমূল নেত্রী বলেন, বিজেপির ‘বেটি বাঁচাও’ প্রকল্প এখন ‘বেটি জ্বালাও’-তে পরিণত হয়েছে। তৃণমূল নেতা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, কেন কেন্দ্র মণিপুরে কেন্দ্রীয় দল পাঠাতে চায়নি, যেখানে জাতিগত সংঘাতে ১৬০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আমরা মণিপুরের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে চাই। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর বিজেপি বাংলায় এত গুলি কেন্দ্রীয় দল পাঠিয়েছিল, কেন কোনও কেন্দ্রীয় দল উত্তর-পূর্বের রাজ্যে পাঠানো হয়নি? তিনি বলেন, মণিপুরে আমাদের মেয়েরা মারা যাচ্ছে এবং কেন্দ্রের বিজেপি শাসনামলে এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এমনকি বিলকিস বানো মামলায়ও ধর্ষকদের ছেড়ে দিয়েছে এই সরকার। একইভাবে, আমাদের মহিলা কুস্তিগীরদের প্রতিবাদের পরেও মূল অভিযুক্ত, একজন বিজেপি সাংসদকে জামিন দেওয়া হয়েছিল।মমতা বলেন, অ-এনডিএ দলগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের একটি প্রতিনিধি দল মণিপুর সফর করবেন এবং আইএনডিআইএর বিরোধী জোটের শরিকদের সঙ্গে এই সফরের পদ্ধতি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তৃণমূল নেত্রী বলেন, দেশের মহিলাদের সম্মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং আগামী নির্বাচনে কন্যা ও মায়েরা বিজেপিকে জবাব দেবেন।মমতা বলেন, ২৬টি রাজনৈতিক দল যে জোট গঠন করেছে তাতে আমি খুশি। এখন থেকে আমাদের স্লোগান হবে ‘জিতেগা ইন্ডিয়া’। আমাদের ভবিষ্যত সকল কর্মসূচি আই.এন.ডি.আই.এ ব্যানারে অনুষ্ঠিত হবে। মমতা বলেন, কাজ করতে করতে মানুষ বেছে নেবে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কোন সরকার ক্ষমতায় আসবে, আর কোন সরকার ক্ষমতায় আসবে না। এরপরেই তিনি কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের উদ্দেশ্যে সুর চড়িয়ে বলেন, ‘এই সরকার ক্ষমতায় আসলে গণতন্ত্র আর থাকবে না। যদি মোদী সরকার ক্ষমতায় আসে তাহলে গণতন্ত্র আর থাকবে না। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসলে জনগণ থাকবে না। কোনও গণতন্ত্র থাকবে না, কোনও মা-বোনের সম্মান থাকবে না। ওদেরকে ছুঁড়ে ফেলে দিন, তাহলেই আপনারা শান্তি পাবেন। আমরা চেয়ার চাই না, শান্তি চাই। ওরা দেশকে বিক্রি করতে চায়, আর আমরা দেশকে রক্ষা করতে চাই। দেশকে আমরা ‘রক্ষা করতে চাই, দেশকে আমরা বাঁচাতে চাই’ বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই তিনি ‘বিজেপি হারেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা’ এবং ‘ঘর ঘর মে এক হি ডাক, মোদি যাক, মোদি যাক’ স্রোগানও দেন। বিজেপিকে পরাজিত করার জন্য বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রকে ‘সন্ত্রাসের বণিক’ আখ্যায়িত করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, বিজেপি আর কতদিন মহিলা, দলিত, সংখ্যালঘু এবং এসটিদের হয়রানি করবে? দেশকে ভাঙার বদলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কি কখনও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের কথা ভেবেছে? আজ এক কেজি টমেটোর দাম ১২০ টাকার ওপরে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct