আপনজন ডেস্ক: চোখ ওঠার মেৌসুম চলছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সি মানুষ এই অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে। একজন আক্রান্ত হলে পরিবারের সবাই আক্রান্ত হচ্ছে। এটি একটি সংক্রমণ। যেটি প্রায় মহামারির পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই রোগের নাম কনজাংটিভাইটিস। সাধারণ ভাষায় যাকে ‘চোখ ওঠা’ বলে। এটি মারাত্মক ছোঁয়াচে। আক্রান্ত ব্যক্তির চশমা, তোয়ালে, রুমাল, টিস্যু পেপার, বালিশ বা প্রসাধনী কোনো সুস্থ ব্যক্তি ব্যবহার করলে তারাও আক্রান্ত হতে পারেন। বিশেষ করে অসুস্থ ব্যক্তির চোখের জল কোনো সুস্থ ব্যক্তির চোখে লাগলে তারও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অধিক। অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনও চোখ ওঠার অন্যতম কারণ। চোখ ওঠার লক্ষণ ও ঘরোয়া প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত।
* চোখ ওঠার লক্ষণ
চোখের সাদা অংশ বা কনজাংটিভা লাল বা টকটকে লাল দেখাবে। প্রথমে এক চোখ আক্রান্ত হয় তারপর অন্য চোখে ছড়িয়ে পড়ে। চোখে চুলকানি, জ্বালাপোড়া বা খচখচে ভাব, চোখের ভেতরে কিছু আছে এমন অনুভূতি হয়। চোখ থেকে বারবার জল পড়ে, চোখের পাতায় পুঁজ জমে ও পাপড়িতে যা আঠার মতো লেগে থাকে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের পাতা খুলতে কষ্ট হয়। চোখের পাতা লাল হয়ে ফুলে চোখ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে।
* ঘরোয়া চিকিৎসা
একটি পরিষ্কার তুলা বা সাদা পরিষ্কার নরম সুতির কাপড় গরম জলতে ডুবিয়ে চেপে নিয়ে আলতো করে ওই কাপড় বা তুলা দিয়ে চোখের পাতা ও পাপড়ি পরিষ্কার করতে হবে। দিনে কয়েকবার এটি করা যেতে পারে। দুটি চোখের জন্য আলাদা কাপড় বা তুলা ও জলর পাত্র ব্যবহার করতে হবে। গরম সেঁক দেওয়ার কয়েক মিনিট পর বরফ বা ঠান্ডা জলতে কাপড় ও তুলা ডুবিয়ে ঠান্ডা সেঁক দেওয়া যেতে পারে। চোখের ওপর চাপ পড়ে এমন কোনো কাজ এ সময় করা যাবে না। যেমন বেশিক্ষণ মোবাইল বা কম্পিউটারে থাকা বা ছোট ছোট লেখা পড়া।
* কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন
চোখ ওঠা রোগ ৭-১০ দিনের মধ্যে সাধারণত ভালো হয়ে যায়। নিচের লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন-
** চোখ ওঠা রোগ দুই সপ্তাহের অধিক সময় ধরে চলতে থাকলে।
** চোখে বারবার ময়লা জমলে।
** ২৮ দিনের কম বয়সি শিশুর চোখ লাল হয়ে গেলে।
** চুলকানোর সঙ্গে সঙ্গে চোখে ভীষণ ব্যথা হলে, মারাত্মক মাথাব্যথা, অসুস্থ লাগলে।
** আলোর দিকে তাকালে চোখে ব্যথা হলে। একে ফটোফোবিয়া বলে।
** দৃষ্টিতে কোনো ধরনের পরিবর্তন এলে যেমন কাঁপা কাঁপা রেখা বা বিদ্যুৎ চমকানোর মতো ঝলকানি দেখলে।
** দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলে।
* চিকিৎসা
কনজাংটিভাইটিসের কারণের ওপর নির্ভর করে চোখ ওঠার চিকিৎসা দেওয়া হয়। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে চোখ উঠলে চিকিৎসক প্রতি ৪-৬ ঘণ্টা পর পর অ্যান্টিবায়েটিক আইড্রপ ও রাতে ব্যবহারের জন্য মলম দিতে পারেন। ভাইরাস বা অ্যালার্জির কারণে চোখ উঠলে অ্যান্টি হিস্টামিন বা অ্যান্টিঅ্যালার্জির ওষুধ, আই ড্রপ, মলম দেওয়া যেতে পারে। রোগীর যেসব বিষয়ে অ্যালার্জি আছে তা এড়িয়ে চলা বেশ জরুরি। যেমন ধুলাবালি, ধোঁয়া, ফুলের রেণু, সুইমিং পুলের ক্লোরিনযুক্ত জল, বিশেষ কোনো প্রসাধনী বা রাসায়নিকের প্রভাবে চোখ উঠলে সেগুলোর সংস্পর্শ অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।
* কী করবেন, কী করবেন না
** দিনে কয়েকবার চোখ পরিষ্কার করতে হবে, পরিষ্কার করার পর হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।
** কোনো অবস্থাতেই চোখ ঘষাঘষি বা রগড়ানো যাবে না।
** বালিশের কভার, মুখ মোছার গামছা বা তোয়ালে, চশমা নিয়মিত গরম জলতে ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
** হাঁচি দেওয়ার সময় নাক, মুখ ঢেকে রাখুন এবং ব্যবহৃত টিস্যু ময়লার ঝুড়িতে ফেলুন।
** চোখ সম্পূর্ণ ঠিক না হওয়া পর্যন্ত কন্টাক্ট লেন্স পরা যাবে না।
** ইনফেকশন থাকা অবস্থায় কোন লেন্স পরে থাকলে সেটি ফেলে দিন।
** আক্রান্ত চোখে কোন প্রসাধনী দেওয়া যাবে না।
** অ্যালার্জি এড়াতে কালো চশমা বা সানগ্লাসে চোখ ঢেকে রাখতে পারেন।
** কোনো আইড্রপের মেয়াদ প্যাকেটে এক-দুই বছর থাকলেও একবার এর মুখ খুললে ২৮ দিনের বেশি ব্যবহার করা যাবে না।
* কখন নিজেকে আলাদা রাখবেন
স্কুল বা ডে কেয়ার সেন্টারে অনেক শিশুর মধ্যে এ রোগ ছড়িয়ে পড়লে কিছুদিন শিশুকে আলাদা রাখাই ভালো। যাদের অন্যদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে কাজ করতে হয়, একই টেলিফোন বা কম্পিউটার শেয়ার করতে হয় তারা পুরোপুরি সেরে ওঠার আগে কাজে যোগ না দেওয়াই ভালো।
* কাদের ঝুঁকি বেশি
প্রবীণ ও শিশুদের মধ্যে চোখ ওঠা সাধারণ রোগ। শিশুরা স্কুল বা খেলার মাঠ থেকে অন্যের সংস্পর্শে থেকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। বয়স্ক ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তারাও ঝুঁকিতে থাকেন। যারা সম্প্রতি শ্বাসনালির সমস্যা যেমন সর্দি, হাঁচি, কাশিতে আক্রান্ত তাদের চোখ ওঠার ঝুঁকি বেশি থাকে। ডায়াবেটিস বা রোগ প্রতিরোধ সমস্যা দুর্বল করে এমন কোনো অসুখ থাকলে বা কাউকে নিয়মিত স্টেরয়েড নিতে হলে তার চোখ ওঠার ঝুঁকি বেশি থাকে। যারা নিয়মিত জনসমাগমস্থল যেমন বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চ ঘাট, ট্রেন স্টেশনে চলাচল করেন তারা সহজেই চোখ ওঠা সংক্রমণে আক্রান্ত হন।মনে রাখবেন, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করবেন না। স্টেরয়েড ড্রপ ব্যবহার করলে জীবাণুর সংক্রমণ আরও বেড়ে যেতে পারে, এমনকি কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্থও হতে পারে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct