আপনজন ডেস্ক: মহরাষ্ট্রের জলগাঁওয়ের এরান্দোল তালুকের জুম্মা মসজিদে নিয়মিত পাঁচবার নামাজ পড়া হয়ে থাকে। ৮০০ বছরের পুরানো এই স্থাপনাটি উত্তর মহারাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাসনালয় এবং ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে নিবন্ধিত একটি সম্পত্তি।কিন্তু একটি ডানপন্থী সংগঠনের দায়ের করা অভিযোগের শুনানির সময় জেলা শাসক অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। জেলা শাসক ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারার অধীনে একটি আদেশ জারি করে অবিলম্বে এই মসজিদে জামাতে নামাজ পড়ায় নিষেধাজ্ঞার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েনেরও নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া জেলা শাসক আপাতত একজন জেলা আধিকারিককে মসজিদের দায়িত্ব নিতে বলেন, যা বিতর্ককে আরও উসকে দেয়।জানা গেছে, পান্ডবওয়াড়া সংগ্রাম সমিতি নামে একটি হিন্দু সংগঠন দাবি করেছে, মুম্বাই থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে এরান্দোলে অবস্থিত এই জুমা মসজিদটি একটি মন্দিরের অনুরূপ এবং স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এটি দখল করার অভিযোগ করে তারা। তবে জুম্মা মসজিদ ট্রাস্ট কমিটি দাবি করেছে, কমপক্ষে ১৮৬১ সাল থেকে এর মসজিদের সপক্ষে প্রমাণ করার জন্য তাদের কাছে যথেষ্ট রেকর্ড রয়েছে।
যদিও গত ১১ জুলাই জলগাঁওয়ের জেলা শাসক আমান মিত্তলের জারি করা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জুম্মা মসজিদ ট্রাস্ট কমিটি বম্বে হাইকোর্টের ঔরঙ্গাবাদ বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। গত ১৩ জুলাই জুম্মা মসজিদ ট্রাস্ট কমিটির আইনজীবী এস এস কাজী রিট আবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, একই দিন প্রথম শুনানি এবং পরের দিন দ্বিতীয় শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, আদালত রিট আবেদনের অনুলিপি বিবাদীদের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন এবং পরবর্তী শুনানির জন্য ১৮ জুলাই দিন ধার্য করেছেন। জেলা শাসক মিত্তল বলেন, বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ১৮ জুলাই সংশ্লিষ্ট পক্ষের সাথে শুনানি করার কথা রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এখনো চূড়ান্ত আদেশ দেইনি। প্রথম শুনানিতে, আমরা আইন শৃঙ্খলার উদ্দেশ্যে আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ জারি করেছি। গত ১৩ জুলাই দ্বিতীয় শুনানি চলে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে। ওয়াকফ বোর্ড এবং মসজিদ ট্রাস্টের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের কথা শোনা হয়। আমরা এখন আমাদের পরবর্তী শুনানির জন্য ১৮ জুলাই আহ্বান করেছি।যদিও হিন্দু গোষ্ঠীগুলি ১৯৮০-এর দশক থেকে এই কাঠামোর দাবি করে আসছে এবং দাবি করে আসছে যে এটি পাণ্ডবদের সাথে যুক্ত, যারা এই অঞ্চলে কয়েক বছর নির্বাসনে কাটিয়েছে। তবে সর্বশেষ পরিস্থিতিটি ১৮ মে পাণ্ডবওয়াড়া সংগ্রাম সমিতির জেলা কালেক্টরের কাছে জমা দেওয়া একটি আবেদন থেকে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। পাণ্ডবওয়াড়া সংগ্রাম সমিতির সভাপতি প্রসাদ মধুসূদন দন্তওয়াতে এই আবেদন জমা দিয়ে দাবি করেছিলেন, প্রাচীন স্মৃতিসৌধটি মন্দিরের অনুরূপ হওয়ায় মসজিদের “অবৈধ নির্মাণ” অপসারণ করা হোক।১১ জুলাই মিত্তল অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ জারি করেন, যা মসজিদে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে এবং ট্রাস্টিদের মসজিদের চাবি জেলা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে বলে। তবে চূড়ান্ত আদেশ না আসা পর্যন্ত মসজিদের পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন দু’জন ব্যক্তিকে সেখানে নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়।মিত্তল বলেন, সরকারি আধিকারকি তহসিলদার এখন মসজিদের চাবি সংগ্রহ করেছেন। তবে যে দু’জন নামাজ পড়তে চান তারা সেখানে উপস্থিত সরকার অনুমোদিত কর্মীদের কাছ থেকে চাবি সংগ্রহ করতে পারেন।জুম্মা মসজিদ ট্রাস্ট কমিটির সভাপতি আলতাফ খান আদালতে দায়ের করা পিটিশনে বলেছেন, জেলাশাসক আবেদনকারীর কাছ থেকে কিছু না শুনে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ও ১৪৫ ধারায় আদেশ জারি করেন। মসজিদটি ভূমি রাজস্ব দফতরে ১৮৬১ সালের ৩১ শে অক্টোবর - ‘জুম্মা মসজিদ’ নামে এরান্ডোল গ্রামে নথিভুক্ত বলে তিনি জানান। জুম্মা মসজিদ ট্রাস্টের সদস্য আসলাম আশঙ্কা করছেন যে এই নজিরবিহীন আদেশটি রাজ্যে শতাব্দী প্রাচীন একটি মসজিদের সাম্প্রদায়িককরণের সূচনা।গত ১১ জুলাই জলগাঁও য়ের জেলা কালেক্টর আমান মিত্তলের জারি করা স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে জুম্মা মসজিদ ট্রাস্ট কমিটি একটি পিটিশন দায়ের করে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct