আপনজন ডেস্ক: গত মাসে পাটনায় বিরোধী দলের বিশাল বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ্র সিপিআই (এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে একই মঞ্চে নিয়ে আসা সত্ত্বেও, পাটনা কনক্লেভ লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস, বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসবে কিনা তা সন্দেহাতীত। বর্তমানে রাজ্যে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ায় তৃণমূল কংগ্রেস তিন স্তরেই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, এমনকি ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলের কংগ্রেসের প্রতি তার অবস্থান নরম করার সামান্যতম সম্ভাবনাও প্রশ্নাতীত বলে মনে হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর তৈরি “নো ভোট টু মমতা” স্লোগানকে উপহাস করে এই বিষয়ে সূক্ষ্ম ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মমতাকে ভোট না দেওয়ার’ বিরোধীদের আহ্বান পঞ্চাযেত নির্বাচনে ‘এখন মমতাকে ভোট দিন’-এ পরিণত হয়েছে। অভিষেক আরও দাবি করেছেন যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করেছে। এমনকি ফলাফল ঘোষণার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কংগ্রেসকে কড়া বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় পর্যায়ে জোট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তাই যা বলবেন তার আগে সবারই চিন্তা করা উচিত। তুমি যদি আমাকে এখানে গালি দাও, আমি সেখানে তোমার উপাসনা করতে পারব না। আপনারাও যদি আমাকে যথাযথ সম্মান দেন, তাহলে আমি প্রতিদান দেব। এই মন্তব্য থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ২০২৪ সালেও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল একাই লড়বে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তাদের মতে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের উপর নির্ভর করে বিরোধী দলগুলির মধ্যে তৃণমূল, কংগ্রেস এবং সিপিআই (এম) এর সাথে নির্বাচন পরবর্তী কিছু সমঝোতা হতে পারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস, বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে যে কোনও প্রাক-নির্বাচনী সমঝোতার প্রশ্নই ওঠে না।
প্রসঙ্গত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে সিপিআই (এম)-এর সঙ্গে সমঝোতার কারণে কংগ্রেসকে সমর্থন করার প্রশ্নই ওঠে না। রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী দাবি করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও বিজেপি সমান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে নির্বাচন-পূর্ব সমঝোতার একমাত্র দূরবর্তী সম্ভাবনা থাকতে পারে যদি নয়াদিল্লিতে কংগ্রেসের হাইকমান্ড দলের রাজ্য ইউনিটের উপর এই ধরনের সমঝোতা করতে বাধ্য করে। কিন্তু পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সম্ভাবনা খুবই কম, কারণ এর মানে হল, পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশে কংগ্রেস যত সামান্য জনপ্রিয়তাই বজায় রাখবে না কেন, তা হারাবে। শহরের এক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বলেন, “সেক্ষেত্রে কংগ্রেস থেকে বিজেপি-তে ব্যাপক ভাবে চলে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত গেরুয়া শিবিরই এর থেকে লাভবান হবে। যৌক্তিকভাবে, কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে কোনও নির্বাচন-পূর্ব সমঝোতা দুটি দলের পক্ষেই উপকারী বলে মনে হয় না। মমতা ব্যানার্জির লক্ষ্য সংসদের নিম্নকক্ষে সর্বাধিক সংখ্যার উপস্থিতি অর্জন করা এবং তিনি বেশ সচেতন যে পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র রাজ্য যা তাকে এটি সরবরাহ করবে। ঠিক এই কারণেই তিনি যখন থেকে অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলির সাথে সংলাপ শুরু করেছিলেন, তখন থেকেই তিনি নির্বাচনের পরে বিরোধী দলীয় নেতা বেছে নেওয়ার জন্য জোর দিয়ে আসছেন। সুতরাং, তৃণমূল কংগ্রেসের দৃষ্টিকোণ থেকে, কংগ্রেসের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সমঝোতার ক্ষেত্রে এটিই প্রধান বাধা। একইভাবে, কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গ ইউনিটের দৃষ্টিকোণ থেকে, তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সমঝোতা সহজ কাজ হবে না। কারণ সেক্ষেত্রে বাম সমঝোতা ব্যর্থ হবে। সিপিএমের সঙ্গে সমঝোতায় তৃণমূলের সঙ্গে রফার তুলনায় লোকসভায় বেশি অসনে লড়তে পারবে বলে কংগ্রেসের ধারণা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct