মুসলিমদের ঐশী ধর্মগ্রন্থ আলকুরআন কেউ পুড়ালেও বা ছিড়লেও তাদের তথা অপরাধীদের ঐশী ধর্মগ্রন্থ পুড়ানো তো দূরের কথা তার দিকে মুসলিমদের বাঁকা চোখে তাকানো অপরাধ। মুসলিমরা বিশ্বাস করে সমস্ত ঐশী গ্রন্থের মূল শিক্ষা একই তা হল একত্ববাদ। লিখেছেন ইসহাক মাদানি।
মহিমান্বিত কুরআনের বাণী: “এ সেই কিতাব যাতে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই। মুত্তাকিনদের জন্য ( অর্থাৎ অমঙ্গল থেকে যারা বাঁচতে চায় তাদের জন্য পথ প্রদর্শক যারা গায়েবে (অর্থাৎ অদৃশ্যে আল্লাকে পরকালকে ) বিশ্বাস করে এবং নামায কায়েম করে( পড়ে) এবং যা কিছু আমি তাদের দিয়েছি তা থেকে দান করে। এবং যারা তোমার প্রতি যা কিছু অবতীর্ণ হল তার প্রতি বিশ্বাস করে এবং তোমার পূর্বে যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি বিশ্বাস করে এবং পরকালকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, এই সকল ব্যক্তিবর্গ তাদের প্রভুর সঠিক পথে রয়েছে এই ব্যক্তিবর্গই হচ্ছে পরিত্রান প্রাপ্ত। ”(আলকুরআন)আল কুরআনে আরও বর্ণিত আছে—“তার —রাসুল (মুহাম্মাদ-স.) উপর তার প্রভুর নিকট থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা বিশ্বাস করে এবং মু’মেনগণ (বিশ্বাসীগণ) সকলে আল্লাকে বিশ্বাস করে, তাঁর ফিরেস্তায় বিশ্বাস করে , তাঁর (অবতীর্ণ) পুস্তকে বিশ্বাস করে , তাঁর রাসুল বা প্রেরিত পুরুষে বিশ্বাস করে এবং বলে আমরা কোনো রাসুলের মধ্যে পার্থক্য করি না। ”( আলকুরআন)আরও বলা হয়েছে, “মানব মন্ডলী একটি উম্মত (একটি জাতি); আল্লাহ নবীদেরকে পাঠিয়েছেন ( সৎকর্মকারীদের জন্য) সুসংবাদ দাতা হিসাবে, এবং (অসৎকর্মকারীদের জন্য) ভীতি প্রদর্শণকারী হিসাবে এবং তাদের নিকট সত্য কিতাব পাঠিয়েছেন মানব মন্ডলীর মধ্যে ফায়সালা করার জন্য, যে সব বিষয়ে ওরা মতভেদ করে। (আলকুরআন)আল্লার রাসুল বলেছেন— তোমরা প্রত্যেকেই আদম সন্তান এবং আদম মাটি থেকে তৈরী। (হাদিস)আলকুরআনে বর্ণিত আছে—আল্লাহ বলেন - “নর ও নারী থেকে তোমাদের সকলকে সৃষ্টি করেছি এবং বিভিন্ন গোত্র ও কাবিলায় বিভক্ত করেছি চেনা ও জানার জন্য বস্তুত সেই বেশী সম্মানের পাত্র যে যতবেশী আত্ম সংযমী। (আল কুরআন)। উপরি উক্ত কুরআনের কথা গুলি এত সাবলিল ভাষায় বর্ণিত যে তার ব্যাখ্যার কোনো প্রয়োজন হয় না। উক্ত বিধান গুলি মুসলিমদের ‘ইমান’বিশ্বাস বা মুসলমানিত্বের সহিত জড়িত। মুসলিম যারা তাদেরকে এ গুলি বিশ্বাস করতেই হয়।
(১) কুরআন আল্লার প্রেরিত গ্রন্থ।
(২) এই পুস্তকে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই।
(৩) যারা পরকালে বাঁচতে চায় তাদের জন্য পথ প্রদর্শক।
(৪) মুসলিম মাত্র বিশ্বাস করে , পৃথিবীর মানব মন্ডলী একই পরিবার ভূক্ত , সকলের উৎস মূল এক - আদম এবং হাওয়া। কালো ধলো শুভ্র কৃষ্ণ রংয়ে কোনো শ্রেষ্ঠত্ব বলে কিছু নেই। বংশ গৌরব বলে কিছু নেই। মানুষ হিসাবে একজন ঝাড়ুদার এবং একজন রাজা বা বাদশার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কোনো মুসলিম যদি এ দুয়ের মধ্যে মানুষ হিসাবে পার্থক্য করে তবে সে কুরআনে বিশ্বাসী থাকবে না।
(৫) একজন মুসলিমকে কুরআনের প্রতি যেমন বিশ্বাস করতে হয় অনুরূপ কুরআনের পূর্বের সমস্ত ঐশী গ্রন্থের প্রতি বিশ্বাস করতে হয়। তবে “কুরআন” যেরূপ ঐতিহাসিক তথ্য মূলে সংরক্ষিত রয়েছে অন্য গ্রন্থগুলি সেরূপ ঐতিহাসিক তথ্যমূলে সংরক্ষিত নেই। তবে সংরক্ষিত থাক আর নাই থাক সাধারনভাবে বিশ্বাস করতেই হবে না হলে মুসলিম থাকবে না। ফলে অমুসলিমরা কুরআন পুড়ালেও বা কুরআনের সংগে অভব্য ব্যবহার করলেও, মুসলিমরা তাওরাত ইন্জিল বা অন্যান্য ঐশী ধর্ম গ্রন্থের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে ব্যধ্য। অবিশ্বাস করলে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে।
(৬) শেষ নবী মুহাম্মাদ(স.) এর প্রতি ইমান আনা তথা তাঁকে আল্লার রাসুল বলে মেনে লওয়া মুসলিমদের ইমান তথা বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংগ, অনুরূপ ইবরাহীম ,মুসা ,ইসা , ইত্যাদি আরবীয় হোক, ভারতীয় হোক, ইউরোপীয় হোক সকল নবীর প্রতি ইমান তথা বিশ্বাস স্থাপন করা মুসলিমদের ইমানের অবিচ্ছেদ্য অংগ। ফলে কোনো খ্রিষ্টান বা অমুসলিম নবী মুহাম্মাদ(স.) সম্মন্ধে কুবাক্য ব্যবহার করলেও মুসা , ইসা, দাউদ , সোলাইমান ইত্যাদি নবী সম্মন্ধে কুবাক্য ব্যবহার করতে মুসলিমরা পারে না। যদি কোনো মুসলিম সে সব নবী সম্বন্ধে সন্দেহ পোষণ করে তবে সে মুসলিম থাকবে না। মুসলিমদের ঐশী ধর্মগ্রন্থ আলকুরআন কেউ পুড়ালেও বা ছিড়লেও তাদের তথা অপরাধীদের ঐশী ধর্মগ্রন্থ পুড়ানো তো দূরের কথা তার দিকে মুসলিমদের বাঁকা চোখে তাকানো অপরাধ। মুসলিমরা বিশ্বাস করে সমস্ত ঐশী গ্রন্থের মূল শিক্ষা একই তা হল একত্ববাদ। ফলে কুরআন নিয়ে বা নবী মুহাম্মাদ(স.) কে নিয়ে অভব্য ভাষা ও অশালীন ব্যবহার কেউ করলে মুসলিমরা পথে নেমে কেবল মাত্র তার প্রতিবাদ করে কিন্তু অপরাধীরা যদি কোনো ঐশী ধর্মগ্রন্থে বিশ্বাসী হয় সে গ্রন্থ সম্মন্ধে বা ওঁদের মান্যবর নবীদের নিয়ে একটি কথাও উচ্চারণ করে না, করতেও পারে না। উচ্চারণ করলেই মুসলিম থাকবে না। তাই প্রশ্ন উঠছে, দুনিয়াব্যাপী অসহিষ্ণু কারা? বিশৃঙ্খলার বীজ কারা বুনছে?কুরআন জাতিভেদ প্রথার বিনাশ ঘটিয়েছে, একজন নিগ্র, একজন শুদ্র নামে পরিচিত ব্যক্তি ইসলাম গ্রহন করে কুরআনের শিক্ষায় শিক্ষিত হলে কাবার ইমামও হতে পারে। কোল ভীল সাঁওতাল বেদুইন ইয়াহুদি ব্রাহ্মণ খ্রিষ্টান কোরাইশ বিচার্য বিষয় নয় বিচার্য বিষয় তার ইসলামে বিশ্বাস এবং তার জ্ঞান গরীমা।“কুরআন” জাতিভেদ প্রথার চরম বিরোধী বলেই কি কুরআন পুড়ানো হচ্ছে?এটা সর্বজন বিদিত যে, আল কুরআন অবৈধ যৌনাচারের চরম বিরোধী।“কুরআন” অবৈধ যৌনাচারের চরম বিরোধী বলেই কি কুরআন পুড়ানো হচ্ছে? অবৈধ যৌনাচার পশুদের মানালেও, বিবেকবান প্রাণী মানুষের ক্ষেত্রে তা মানায় না। ইসলামে বৈধ বিবাহ অপরিহার্য। গত আন্তর্জাতিক ফুলবল ম্যাচের সময় কাতারে “কুরআন” মেনে অবৈধ যৌনাচারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইউরোপ ব্যাপী কাতারের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডার ঝড় উঠেছিল। কুরআন নারীদেরকে তাদের ইজ্জত আবরু রক্ষার্থে হিজাব তথা শালীন পোষাকে থাকার নির্দেশ দেয় যা নারী স্বাধীনতার নামে উলঙ্গপনার বিরোধী বলেই কি “কুরআনে” আগুন ধরানো হচ্ছে?
(৭) আলকুরআন অবৈধ উপার্জনেরও চরম বিরোধী - মদ জুয়া সুদ ঘুষ হেরোইন আফিম ইত্যাদির ব্যবসা চরম মাত্রায় নিষিদ্ধ বা হারাম। বাক স্বাধীনতার নামে কুরআন পুড়ানোর অনুমতি দেওয়া ; আর কর্ম স্বাধীনতার নামে কুরআন পুড়ানো যদি স্বাধীনতা ভোগ হয়, তবে চোরের চুরি করা কর্ম স্বাধীনতা, আর যাকে খুশি তাকে গালাগাল দেওয়া বাক স্বাধীনতা। এটা নির্বোধদের মজার স্বাধীনতা হতে পারে তবে কোনো সভ্য সমাজ এটা মেনে নিতে পারে না। সুইডেন সরকারের অনুমতিতে কুরআন পুড়িয়ে কুরআনী আদর্শের পথ রুদ্ধ করা যাবে কি? অবশ্যই যাবে না। কুরআন তার স্বমহিমায় কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে। (ইনশাআল্লাহ) কুরআন মানব মন্ডলীকে সৎপথ দেখানোর জন্য এবং তাদের কল্যানার্থে আগত।এবং “অবতীর্ণ করা হয়েছে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য”। কুরআন পড়ুন কুরআন সবার, শুধু মুসলিমদের নয়। ইহলৌকিক জীবন ক্ষণস্থায়ী, পারলৌকিক জীবন চিরস্থায়ী। দুনিয়া একদিন ধ্বংস হবেই হবে। পারলৌকিক জীবন সুখময় করার জন্য কুরআন পড়ুন, কুরআন পড়ুন।
লেখক অল ইন্ডিয়া পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct