জনগণের জন্য , জনগণের দ্বারা গঠিত, জনগণের সরকারই ‘হলো গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। গণতন্ত্রের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে জনগণ। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোতে দেখা যাচ্ছে গনতন্ত্রের ভয়াল রুপ, যা হয়তো গণতন্ত্রের সমাধি রচিত হচ্ছে। কেমন যেন ক্রমশঃ কোনো অদৃশ্য অঙ্গুলি হেলনে গণতন্ত্র চোরাবালির অতলগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে , আশাহত জনগণের আশার আলো নিভে যাচ্ছে ! লিখেছেন এম ওয়াহেদুর রহমান।
জনগণের জন্য , জনগণের দ্বারা গঠিত, জনগণের সরকারই ‘হলো গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। গণতন্ত্রের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে জনগণ। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোতে দেখা যাচ্ছে গনতন্ত্রের ভয়াল রুপ, যা হয়তো গণতন্ত্রের সমাধি রচিত হচ্ছে। কেমন যেন ক্রমশঃ কোনো অদৃশ্য অঙ্গুলি হেলনে গণতন্ত্র চোরাবালির অতলগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে , আশাহত জনগণের আশার আলো নিভে যাচ্ছে ! গণতন্ত্রের বহিঃ প্রকাশ ঘটে থাকে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ গ্ৰহনের মধ্য দিয়ে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দল অপরিহার্য। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যখন দমন পীড়নের নীতি গ্রহণ করে থাকে তখন আর গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো বজায় থাকে না। বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশগুলোর রাজনৈতিক মঞ্চে রাজনীতির হিংস্র ছুরিকাঘাতে বনি আদমের সন্তানদের যত প্রাণ ঝরেছে অথবা ঝরছে, আরণ্যক হিংস্র - শ্বাপদ - দন্ত - নখরে এত প্রাণ ঝরে না। রাজনৈতিক রনাঙ্গনে কিংবা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় মানুষের দ্বারা মানুষ প্রাণ হরণের প্রচেষ্টা দেখে হয়তো ‘ইবলিশ শয়তান ‘ও আতঙ্কগ্ৰস্থ হয়ে দুঃখ প্রকাশ করছে। বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে ভারত অন্যতম বৃহত্তর গণতান্ত্রিক দেশ। আর এই দেশের একটি অন্যতম রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। এই রাজ্যে ও গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ গণতন্ত্রের উৎসবে মেতে ওঠে। যে কোনো নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হলেই আপামর জনসাধারণ মেতে উঠে গণতন্ত্রের মহোৎসবে। কিন্তু এই উৎসবটি উদযাপন করতে গিয়ে মানুষ ভুলে যাই আপন আত্মীয়-স্বজন কে , ভুলে যাই পাড়া প্রতিবেশী কে বলে। মানুষ যখন উৎসব মূখরীত হয়ে মনুষ্যত্ব বিসর্জন মেতে ওঠে হত্যাযজ্ঞে তখন আর তা প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাওয়া যায় না। গণতন্ত্র যখন মানুষের মঙ্গলের জন্যই কার্যকর থাকে তখন তা অত্যান্ত প্রশংসনীয় কিন্তু যখন মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় মেতে উঠে কিংবা মানুষের জীবন প্রদীপ অকালে নিভিয়ে দেয় তখন মনের গহীনে প্রশ্ন জাগে গণতন্ত্রের স্বরুপ নিয়ে । গণতন্ত্রের সূচনালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের দেশে কিংবা রাজ্যে রাজ্যে নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত মানুষ তার জীবনের ঝুকি নিয়ে নির্বাচনী বুথে ভোটার হিসেবে ভোটদানের জন্য কিংবা ভোট কর্মী হিসেবে ভোট নেওয়ার জন্যে উপস্থিত হয়ে থাকে। যে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী উৎসবের মাঝে মানুষের উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল আনন্দের পসরা সাজিয়ে মহামিলনের মানববন্ধনে। কিন্তু বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিনে দেখা যাচ্ছে মানুষ তার জীবন বাঁচাতে হন্যে হয়ে ছুটে যাচ্ছে এদিকে ওদিকে। দিকে দিকে দেখা যাচ্ছে বোমা বারুদের বিকট শব্দ বা গন্ধ , শত শত মায়ের পুত্র হারানোর যন্ত্রনা , কত শত নারীর স্বামী হারানোর হাহাকার। গত দিনের অনুষ্ঠিতব্য পঞ্চায়েতি নির্বাচনে ও কোনো ব্যাতিক্রম পরিলক্ষিত হয় নি। নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই নির্বাচনের পূর্বের দিন পর্যন্ত পনেরো জন মানুষের জীবন অকালে ঝরে গেছে। গতকালের নির্বাচনের দিনে ও অনেকের জীবন প্রদীপ চিরতরে নিভিয়ে গেছে। আসলে গণতন্ত্র তার আদর্শময় কার্যকলাপকে হারিয়ে ফেলছে। রাজনৈতিক দলগুলি ও হয়তো অনেকাংশেই আদর্শ বিচ্যূত হয়ে পড়েছে কিংবা কিছু কিছু গণতান্ত্রিক মানুষেরা ও হয়তো আদর্শ তার জলাঞ্জলী দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করছে না। গণতন্ত্র তো সমাজতন্ত্রের পতনের ফলস্বরূপ শান্তির সোপান নিয়ে এসেছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোই মানুষের জীবন হয়তো বহন করে এনেছে বিভীষিকা। ফলে মানুষ গণতন্ত্রের মহোৎসবে হয়তো নিরানন্দে সামিল হচ্ছে , যা কখনই হয়তো গণতন্ত্রের জন্য কাঙ্খিত ছিল না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct