আপনজন ডেস্ক: কলকাতা হাইকার্টের বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রাজ্যর বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রতি বিশেষ পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ তুললেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে পঞ্চায়েত নির্বাচন পরবর্তী বিজেপির আক্রমণে জখম চিকিৎসাধীন ১৪জন তৃণমূল কর্মীকে দেখে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার বিরুদ্ধে শুভেন্দুর প্রতি পক্ষপাতিত্ব করার বিস্ফোরক অভিযোগ করেন। অভিষেক শুভেন্দু অধিকারীকে সমাজবিরোধী বলে আখ্যায়িত করে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা সমাজবিরোধীদের প্রটেকশন দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন। যাদের জেলে থাকার কথা, তাদেরকে সুরক্ষা দিয়ে পুলিশের হাত, পা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। কলকাতা হাইকোর্টের একজন বিচারপতি যেভাবে একটা রাজনৈতিক দলকে মদত দিচ্ছেন, তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। স্বাধীনতার পর এমন ঘটনা ঘটেনি। বিচারপতি মান্থার এই ভূমিকা নিয়ে অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, বিজেপির প্রতি এই বিচারপতির কি বাধ্যবাধকতা? কেন বেছে বেছে বিজেপির নেতাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করছেন তিনি?অভিষেকের প্রতি যে বৈষম্য মূলক ব্যবহার করা হয়েছে তার উল্লেখ করে বলেন, আমার বিরুদ্ধেও তো ইডি, সিবিআই লাগিয়ে রেখেছে। আমি প্রোটেকশন চাইলে দেবেন? দেবেন না! বিজেপি নেতারা না চাইতেই পেয়ে যাচ্ছে! এসএসকেএমে ভর্তি থাকা নন্দীগ্রামের ১৪ জন আক্রান্তের এমন পরিস্থিতির জন্যও এই বিচারপতি দায়ী। রীতিমতো কটাক্ষও করতেও শোনা যায় অভিষেককে। তিনি নির্ভয়ে বলতে থাকেন, আমি যাদের কথা বলছি তাদের সবাইকে হাইকোর্ট প্রটেকশন দিয়ে রেখে দিয়েছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমি বারবার বলেছি বিচারব্যবস্থার একাংশ বিজেপিকে মদত দিচ্ছে। গণতন্ত্রের তৃতীয় স্তম্ভ হচ্ছে বিচারব্যবস্থা। চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদমাধ্যম। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই দুটো স্তম্ভ ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিজেপি। হাইকোর্টের একাংশ এই সমাজবিরোধীগুলিকে যেভাবে মদত দিচ্ছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
মূলত নন্দীগ্রামে বিজেপির হাতে আক্রান্ত তৃণমূল কর্মীদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে তিনি ক্ষোভের মাত্রা চড়ান। নির্বাচন পরবর্তীতে শুভেন্দুর খাসতালুক নন্দীগ্রামে বিজেপি তৃণমূল কর্মীদের আক্রমণ করাকে কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না অভিষেক। তাই তিনি বলেন, বিজেপির আক্রমণে জখম ১৪ জন তৃণমূল নেতা ও কর্মী এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি। তাদের দেখতেই শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে আসেন অভিষেক। পরে তিনি হাসপাতাল চত্বরেই মাইক হাতে নিয়ে বলেন, ওই ১৪ জনের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারা বিজেপির ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসের বিবরণ দেন আমার কাছে। সেখানে মহিলাদের ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। শিশুদেরও রেহাই দেওয়া হচ্ছে না। এক পঞ্চায়েত সদস্যকে বলা হয়েছে, রাস্তায় কী করে বেরোস, দেখে নেব। যারা এই সব তাণ্ডব করেছে, অশোক করণ, পবিত্র কর, মেঘনাদ পালের মতো ২০ জনের নাম মুখ্যমন্ত্রীকে দেব যাদের সবাইকে হাইকোর্ট সুরক্ষা দিয়ে রেখেছে। এর পরে অভিষেক সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, এদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল, বিচারব্যবস্থার একাংশ এদের প্রটেকশন দিয়ে রেখেছে। একজন বিচারপতি সমাজবিরোধীদের প্রটেকশন দিচ্ছেন। বিচারপতিকে নিয়ে মন্তব্যের দায়ে শাস্তির মুখে পড়া প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, যদি এই বক্তব্যের জন্য তাকে আদালত অবমাননার দায়ে জেলে যেতে হয়, তা হলে তিনি ১০ হাজার বার জেলে যেতেও রাজি। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলব। আজ বলতে বাধ্য হলাম। কারণ, শুধু একজন বিচারপতির জন্য সমগ্র বিচারব্যবস্থা কলুষিত হচ্ছে। সত্যি কথা বলার জন্য আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তিনি নিতেই পারেন। কিন্তু আমি সত্য বলবই। অভিষেকের ওই মন্তব্য সম্পর্কে নয়াদিল্লিতে প্রশ্ন করা হয়েছিল বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে। ভোটের পরের রাজনৈতিক সংঘর্ষে নন্দীগ্রামের ১১ জন জখম তৃণমূলকর্মী এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার তাঁদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন অভিষেক। তার পর হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়েই বিচারব্যবস্থার একাংশের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন তৃণমূলের সেনাপতি। আহত তৃণমূল কর্মীদের দেখে বেরিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘কারা এই হামলায় যুক্ত, আমি তাদের নাম নোট করেছি। এই তালিকা আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেব।’’ অশোক করণ, পবিত্র কর, মেঘনাদ পালের মতো বেশ কিছু বিজেপি নেতার নাম করে তিনি বলেন, ২০ জনের তালিকা মুখ্যমন্ত্রীকে দেবেন। তার পরে অভিষেক সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, এদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? দুর্ভাগ্যজনক হল, বিচারব্যবস্থার একটা অংশ এদের প্রোটেকশন দিয়ে রেখেছে। একজন বিচারপতি সমাজবিরোধীদের প্রোটেকশন দিচ্ছেন।’’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct