আপনজন ডেস্ক: ২০১৯ এর ৭ সেপ্টেম্বর, রাত প্রায় ১.৪০। ভারতের আকাশে চাঁদ ডুবে গিয়েছিল, কিন্তু ভারতের ল্যান্ডার বিক্রম চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ শুরু করেছিল। প্রায় এক ঘণ্টার পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু চলল। প্রতিটি পদক্ষেপের সাথে, বেঙ্গালুরুতে ইসরোর মিশন কন্ট্রোল রুমে বজ্র করতালি আরও জোরে হয়। সেখানে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী মোদীও কৌতূহল নিয়ে সব দেখছিলেন। হঠাৎ রাত আড়াইটার দিকে নীরবতা নেমে আসে। সেখানে উপস্থিত বিজ্ঞানীদের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। চন্দ্রযান-২-এর বিজ্ঞানীদের ১১ বছর কঠোর পরিশ্রম এবং পৃথিবী থেকে চাঁদ পর্যন্ত ৪৭ দিন পর গন্তব্যের এত কাছে বিক্রম বিধ্বস্ত হয়েছে ল্যান্ডার। চার বছর পর সেই অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে চলেছে ইসরো। চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)। আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে দেশটির অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যের শ্রীহরিকোটায় অবস্থিত সতীশ ধাওয়ান মহাকাশকেন্দ্র থেকে নভোযানটি উৎক্ষেপণ করা হয়। নিজেদের তৈরি নভোযানটি চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণে সফল হলে ভারত হবে চন্দ্রপৃষ্ঠে নভোযান নামানো চতুর্থ দেশ। এর আগে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন চন্দ্রপৃষ্ঠে নভোযান অবতরণ করিয়েছে।চন্দ্রযান-৩–এর পৃথিবী থেকে চন্দ্রপৃষ্ঠে পৌঁছাতে এক মাসের মতো সময় লাগতে পারে। সবকিছু ঠিক থাকলে এটি আগামী ২৩ আগস্ট চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করবে। অবতরণের পর এটি চন্দ্রপৃষ্ঠে এক চান্দ্রদিবস পর্যন্ত কার্যক্রম চালাবে। এক চান্দ্রদিবস মানে পৃথিবীর ১৪ দিনের সমান।৪৩ দশমিক ৫ মিটার বা ১৪৩ ফুট দীর্ঘ মার্ক-৩ নামের একটি রকেট চন্দ্রযান-৩-কে চাঁদের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডারের নাম ‘বিক্রম’ আর রোভারের নাম ‘প্রজ্ঞান’।শুরুতে চাঁদের দক্ষিণ অংশে অবতরণ করবে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। বিক্রম সফলভাবে অবতরণ করতে পারলে এটি ‘প্রজ্ঞান’ নামের রোভারটিকে ছাড়বে। আর এ রোভারই চাঁদের বুকে ঘুরে ঘুরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালাবে।২০১৯ সালের ইসরোর চন্দ্রযান-২ চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণে ব্যর্থ হয়েছিল। অভিযানে পাঠানো অরবিটারটি এখনো চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। তাই এবারের অভিযানে ইসরো চাঁদের কক্ষপথে নতুন কোনো অরবিটার পাঠায়নি। চাঁদের মাটিতে নামতে কক্ষপথে থাকা চন্দ্রযান-২–এর অরবিটারেরই সাহায্য নেবে চন্দ্রযান-৩–এর সঙ্গে যাওয়া ল্যান্ডার ও রোভারটি।ইসরো তথ্য অনুযায়ী, চন্দ্রপৃষ্ঠে এই অভিযানের উদ্দেশ্য সেখানে নিরাপদ ও সহজ অবতরণের সক্ষমতা অর্জন, ‘প্রজ্ঞান’ রোভারের চন্দ্রপৃষ্ঠে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ানোর সক্ষমতা যাচাই ও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ পরিচালনা করা।অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে এলভিএম৩-এম৪ রকেটের মাধ্যমে চন্দ্রযান মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল।উৎক্ষেপণের ১৬ মিনিট পরে, রকেটটি পৃথিবীর কক্ষপথে চন্দ্রযান-৩ছেড়ে যায়।চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণ দেখতে ইসরো গ্যালারিতে বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। চন্দ্রযান-৩ সফল উৎক্ষেপণের পর মিশন কন্ট্রোল রুমে করতালি বাজানো হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct