খালি বোতল
গোলাম মোস্তাফা মুনু
রাব্বুল কাঁধে কোদাল নিয়ে বাড়ি থেকে যেমনই বের হবেন এমন সময় বড় ছেলে আলতাব বাজার থেকে ফিরে আসে। তার এক হাতে বাজার ভর্তি ব্যাগ আর অপর হাতে জুসের বড় বোতল। বাবা ছেলের মুখের দিকে দৃষ্টিপাত করে কিছু বলতে যাবেন তার পূর্বেই আলতাব বলে ফেলে, ‘বাবা, আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আজ বেড়াতে আসবে। এমন গরমের দিনে ঠান্ডা জুস দেওয়া খুবই দরকার।’বাবা জিজ্ঞাসা করেন, ‘ক’টার সময় আসবে?’ ‘এখনই।’ বলে আলতাব বাড়ির মধ্যে চলে যায়। রাব্বুল কোদালখানা কাঁধ থেকে নামিয়ে মাটিতে রাখেন। মনে মনে বলেন, ‘জমির দিকে এখন আর যাচ্ছি না। ঘন্টাখানেক পরে যাবো। বেহায়য়ের সাথে সাক্ষাৎও হয়ে যাবে।’ রাব্বুল কোদালখানা এক হাতে নিয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করেন। তার ঘরের বারান্দায় এক কোণে সেটি রেখে দিয়ে বেঞ্চের উপর বসেন। বসে আলতাবের শ্বশুর-শাশুড়ির আগমনের অপেক্ষা করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর আলতাবের শ্বশুর-শাশুড়ি জামাইয়ের বাড়ি প্রবেশ করে। আলতাবের শ্বশুরের দৃষ্টি রাব্বুলের দিকে পড়লেও কোনো কথা না বলেই সে জামাইয়ের ঘরে ঢুকে যায়। রাব্বুল তার বেহায়কে দেখে ভেবেছিলেন যে, সে অন্তত তাকে সালামটা জানাবে। তিনি বেহায় য়ের পক্ষ থেকে সালাম না পেলে ক্ষণিকের জন্য মনে দুঃখ পান। খানিক পরেই আবার মনে মনে ভাবেন যে, ‘বাইরে প্রচন্ড রৌদ্র। বেহায় হয়তো গরমে সিদ্ধ হয়ে গেছে। একটু শীতল বাতাস পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে জামাইয়ের ঘরে ঢুকে গেছে। আমাকে হয়তো ভালো করে লক্ষ্য করেনি সে। তাই তার সালাম দেওয়া হয়নি। ঠিক আছে। আমি ওদের কাছে গিয়ে সাক্ষাৎ করে নেবো।’ বলে রাব্বুল বেঞ্চ থেকে উঠে ছেলের ঘরের দরজার কাছে দাঁড়ান। বাবাকে দেখে আলতাব জিজ্ঞাসা করে, ‘বাবা, জমিতে যাওনি?’‘না, যাইনি। একটু পরে যাবো।’ বলেই রাব্বুল সেখানে দাঁড়িয়ে বেহায়কে উদ্দেশ্য করে সালাম দেন, ‘আসসালামু আলাইকুম বেহায়!’ ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম!’ সালামের জবাব দেয় আলতাবের শ্বশুর মশাই। রাব্বুল জিজ্ঞাসা করেন, ‘ভালো আছো তো বেহায়?’খাটের ওপর বসেই আলতাবের শ্বশুর বলে, ‘আলহামদুলিল্লাহ! ভালো আছি।’ এ বলে সে নীরব থাকে।রাব্বুল ভেবেছিলেন যে, বেহায় মশাই তাকে ঘরের মধ্যে ডাকবে। ছেলেও তাকে বলবে ঘরের মধ্যে গিয়ে খাটের ওপর বসে তার শ্বশুরের সাথে গল্প করতে। কিন্তু তার ভাবনা ভাবনায় থেকে যায়। তাকে কেউই ঘরের মধ্যে ডাকল না। দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে তিনি যেন অস্বস্তি বোধ করতে লাগলেন। তিনি সেখান থেকে সরে যেতে পারলেই যেন লজ্জার হাত থেকে রেহায় পান। চুপচাপ সেখান থেকে সরতে গেলেও যেন কেমন লাগে। তাই তিনি বেহায়কে বলেন, ‘বেহায় মশাই, আমার আর বসার সময় নেই। আমাকে জমির দিকে যেতে হবে ভাই। এখন আসি।’ বলে তিনি বেহায়য়ের উত্তরের অপেক্ষা না করে সেখান থেকে চলে আসেন নিজের ঘরের বারান্দার উপর রাখা সেই বেঞ্চের কাছে। বেঞ্চে বসেন। মিনিট খানেকের মধ্যে আবার দাঁড়িয়ে যান। কোদালখানা কাঁধে নেন। কী যেন ভেবে নিয়ে কোদালখানা আবার মাটিতে রেখে দিয়ে বেঞ্চে বসেন। বসে মনে মনে বলেন, ‘এক গেলাস জুস খেয়েই জমিতে যাবো।’রাব্বুল ছেলের ডাকের অপেক্ষা করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর আলতাবের বছর সাতেকের ছেলে রাব্বুলের কাছে এসে বলে, ‘দাদু, খাবার পানি জমিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ক’দিন আগে আব্বার কাছে তুমি একটা ভালো বোতল চেয়েছিলে। এই নাও। নতুন বোতল। আব্বা আজকেই জুস এনেছিল।’ দাদুর হাতে বোতলখানা ধরিয়ে দিয়ে পোতা সেখান থেকে চলে যায়। আর দাদু নিরাশ হয়ে বোতলখানা নেড়ে চেড়ে দেখতে থাকেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct