বিনোদিনী
শংকর সাহা
বিয়ে হয়ে আসার পর থেকেই বিনোদিনীর জীবনের সংজ্ঞাটিই পাল্টে যায়। স্কুল জীবনে শ্বশুর বাড়ি সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা ছিল আলাদা। স্বপ্ন ছিল বিয়ের পরেও লেখাপড়া চালিয়ে যাবে। বাবা বলতেন,”শিক্ষা যেন জীবনের বন্ধ জানালাগুলো খুলে দেয়।“কিন্তু আজ সময়ের কালক্রমে সব যেন অতীত। শ্বশুর বাড়ি আজ যেন বিনোদিনীর কাছে সম্পূর্ণ ভিন্ন জগত। দোতলার কোণের রান্না ঘরটিই আজ তার ঠিকানা। মুখ বুঝে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একভাবে খেটে যায় বিনোদিনী।বাবা শিখিয়ে দিয়েছিলেন,” ওনারা বড়লোক। সাথে গুরুজনও বটে। কখনো যেন ওনাদের কথার অন্যথা না করে সে। সেদিন বাইরে বৃষ্টি পড়ছিল।বিকেলে আলমারির তাক থেকে রবিঠাকুরের গল্পগুচ্ছ হাতে নিয়ে দুচোখে জল ভরে আসে তার। আজ সময়ের অভাবে পড়ার সময় টুকুও হারিয়ে ফেলেছে সে। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। এখানে স্কুলের মাঠে বড় মেলা বসে। শৈশবে প্রায় প্রতিবার বাবার সাথে রথের মেলায় আসতো বিনোদিনী। অফিসে যাবার সময়ে খেতে দিতে দিতে শুভেন্দুর দিকে চেয়ে বিনোদিনী বলে, “ শুনছ, আজ অফিস থেকে একটু বেরোবে? আজ না ভেবেছি মেলায় যাবো” শুভেন্দু কোনো কথা বলেনা শুধু মাথা নাড়িয়ে অফিসে বেরিয়ে। শুভেন্দু বেরিয়ে গেলে সমস্ত কাজ তাড়াতাড়ি সেরে নেয়।“ বিকেল তখন পাঁচটা। বাইরের জানালা দিয়ে একভাবে তাকিয়ে থাকে সে কখন শুভেন্দু ফিরবে বলে? রাস্তা দিয়ে কত লোক মেলায় যাচ্ছে! ঘড়ির কাঁটা ক্রমশঃ এগিয়ে চলে।সন্ধ্যে হতেই বিনোদিনী বুঝতে পারে শুভেন্দু আজও তাড়াতাড়ি ফিরবেনা। তখন রাস্তা দিয়ে রথ যাচ্ছে। জানালার পাশ দিয়ে ঠাকুরকে প্রণাম করে বিনোদিনী। আর একভাবে তাকিয়ে থাকে সমস্ত মানুষগুলোকে যারা সকলে রথের দড়ি টানছে। তার চোখটি অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। মনে পড়ে শৈশবের দিনগুলোর কথা। রাত্রি তখন নটা। বিনোদিনী রান্না ঘরে কাজ করছে হঠাতই সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে হঠাতই থেমে যায় শুভেন্দু। রান্না ঘরের সামনে গিয়ে বলে, “সরি!আজ অফিসে মিটিং ছিল” বিনোদিনী কোনো কথা বলেনা। শুধুই সকলের অলক্ষ্যে চোখের জলটি মুছে নেয়..
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct