সনাতন পাল....
সকালে মোড়ের মাথায় চায়ের দোকানে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আলোচনা বেশ জমে উঠেছে। গ্রাম থেকে প্রায় ৭০ বছর বয়সী গৌর বর্মন এসেছে চা খেতে। তাঁর গ্রামের ভোট পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা উঠতেই তিনি বলে উঠলেন,” কোন্ দল ভোটে জিতবে, সেটা নিয়ে তোমরা আলোচনা করছো, এটা তো আলোচনা করছো না, যে বাংলা কি সত্যিই পারে না একটা রক্তপাত হীন, লাশহীন নির্বাচন করতে!” কথাটা মাটিতে পড়তে না পড়তেই পাশ থেকে বিকাশ বলে উঠল,” ওটা এখন সোনার পাথর বাটি, কাকা” । সত্যিই কি তাই! মানুষ চাইলে কি না পারে? অনেক কিছুই পারে। শুধু সদিচ্ছার দরকার। সেটারই বড্ড অভাব। কোনো কিছু করার আগে সবার প্রথমে করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। এই মানসিকতার ভিত্তি তৈরি করে শিক্ষা। সেই শিক্ষার ভিত যত দুর্বল হবে, আমাদের মনে তত বেশি কলুষ বৃত্তি প্রবেশ করবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা বলতে কখনই ডিগ্রি বোঝাই করা ঝোলার কথা বলা হয়নি। প্রকৃত শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। যে শিক্ষা মনকে হিংসা মুক্ত করে, মনের উদারতা বাড়ায়, অন্তর আত্মার বিকাশ ঘটায়, মানসিক স্থিতিকে ন্যায়ের পথে পরিচালিত করার জন্য প্রস্তুত করে, অপরের মঙ্গল কামনা করতে শেখায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের স্পর্ধার জন্ম দেয়, মানব হৃদয়ে প্রেমের সঞ্চার ঘটায়। বাস্তব সত্যি তো এটিই, বর্তমানে ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া, ক্ষমতার প্রতি লালসা বাড়তেই আছে। বর্তমানে আমাদেরকে এই রূপ পরিস্থিতিই গ্রাস করেছে। সেই জন্যই হয়তো নির্বাচনের দিন না আসতেই রাজ্যে ১১ টা প্রাণ অকালে ঝরে গেল। ভোটের দিন আসতে আসতে আর কটা লাশ পড়বে,সেটা বলা কঠিন। স্বজন হারানো পরিবার গুলির কাছে রাজনৈতিক দলগুলির গ্রাম দখলের ক্ষমতা দখলের লড়াই এখন যেন চিতার আগুনের ধোঁয়া হয়ে দেখা দিয়েছে। যা চোখের জলে স্বজন হারাদের ভাসিয়ে দিচ্ছে। এর পরেও তাঁরা হয়তো চোখের জল মুছে বুথে যাবেন ভোট দিতে। অবশ্য নিজের ভোট নিজে নিতে পারবেন কি না, সেটা নির্ভর করবে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমের উপরে। সাধারণ মানুষের সংগঠিত প্রয়াস থাকলে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজনৈতিক দল গুলির দাক্ষিন্যের প্রয়োজনীয়তা খুব একটা থাকে না। কিন্ত বাস্তব সত্যি তো এটাই যে, যতদিন যাচ্ছে সাধারণ নাগরিক গণের মধ্যে নির্বাচন গুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবী জোরালো হচ্ছে এবং রাজনৈতিক দলগুলির নিকট হাত কচলানো বাড়ছে। কারণ নাগরিক গণ স্বয়ং গণতন্ত্রের প্রহরী হয়ে উঠতেই পারছেন না। কিন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী এলেই কি সন্ত্রাস মুক্ত নির্বাচন হয়? কেন্দ্রীয় বাহিনী যখন রাজপথে এলাকা নজরদারি করে, সন্ত্রাস তখন পাড়ার গলি পথ বেয়ে লোকের ঘরে প্রবেশ করে কানে কানে ফিসফিস করে কথা বলে। বিস্তারিত আলোচনা হতেই পাশ থেকে নেপাল বলে উঠল,” এ রাজ্যে তাহলে কি সন্ত্রাস মুক্ত এবং রক্তপাত হীন নির্বাচন আর কোনো দিনই সম্ভব নয়?” শুনে গৌর বর্মন বললেন,” যে দিন রাজনীতি থেকে টাকা রোজগার করা বন্ধ হবে এবং মানুষের ক্ষমতার লোভ থাকবে না,সেই দিন সম্ভব হবে। রাজনীতির মানেই হবে মানুষের জন্য কাজ করা, তখন হয়তো অনেকেই ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে যেতে চাইবেন না। তখন রাজনীতিতে তাঁরাই যাবেন,যাঁদের মানসিক স্থিতি জন সেবার জন্য প্রস্তুত হবে এবং সেই জন্যই রাজনীতিতে যাবেন” । সেদিন লাশহীন নির্বাচন হবে। বাংলার মানুষ কি সেই দিন সত্যিই কখনও দেখতে পাবেন না?
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct