আপনজন ডেস্ক: আগামীকাল অর্থাৎ শনিবার সকাল থেকেই রাজ্যজুড়ে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোট। এই পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে। প্রায় প্রতিদিনই রাজ্যের কোথাও না কোথাও রাজনৈতিক সংঘর্ষের খবর মিরছে। এই পরিস্থিতি ভোট পর্ব মিটলে আরও প্রকট অাকার নিতে পারে, এই আমঙ্কা অনেকেরই। এর আগের নির্বাচন পরবর্তী হিংসায় বহু প্রাণ গিয়েছে। তাই এবার সতর্ক পদক্ষেপ নিল কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিল, পঞ্চায়েত নির্বাচন শেষ হওয়ার ১০ দিন পরও রাজ্যজুড়ে মোতয়েন থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। উল্লেখ্য, পঞ্চায়েত নির্বাচন ৮ জুলাই। কিন্তু ভোট গণনা ১১ জুলাই। তবে, এবার যেহেতু ব্যালট পেপারে ভোট হচ্ছে তাই ভোট গণনা প্রলম্বিত হতে পারে। গড়িয়ে যেতে পারে ১২ জুলাই। তাই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে দিল ১২ জুলাইয়ের পরও আর ১০ দিন কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে থাকবে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায়। অতীতে বাংলার নির্বাচন পরবর্তী সময়ে যে অশান্তি ও হিংসার অভিযোগ উঠেছে, সেই প্রেক্ষিতে যাতে ভোটের পরেও কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকে রাজ্যে, সেই নিয়ে আবেদন বিরোধী দলের পক্ষে আদালতে আর্জি জানানো হয়েছিল। সেই আবেদনের ভিত্তিতে এবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দিল, পঞ্চায়েত ভোটের ফল ঘোষণার পরবর্তী ১০ দিন রাজ্যে মোতায়েন থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। কেন্দ্রকে সেই অনুযায়ী নির্দেশিকা জারি করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম।
কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন ঘিরে এত জটিলতা তৈরি হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে আদালতে। তখন কেন্দ্রের তরফে ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল আদালতকে জানান, গত ৪ জুলাই রাত ৯টা নাগাদ ‘রিক্যুইজ়িশন’ (কোথায় কত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হবে তা জানিয়ে সামগ্রিক পরিকল্পনা) কমিশন জমা দেয় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। ৫ জুলাই তাতে অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তার পর থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যের উদ্দেশে রওনা দিতে শুরু করে। দফায় দফায় বাহিনী এসে পৌঁছচ্ছে রাজ্যে। তার বক্তব্য, কমিশন কত সংখ্যক বাহিনী লাগবে, সেটা বলার পাশাপাশি, কোন বাহিনী লাগবে, সিআরপিএফ না এসএসবি, সেটাও উল্লেখ করে দিয়েছে। এভাবে পুরো দায় চাপিয়ে দেন কমিশনের উপর। যদিও সেই সমস্যা দূরীকরণে বিচারপতি জানিয়ে দেন, কমিশন শুধু ঠিক করবে বাহিনীর সংখ্যা। তবে কোন বাহিনী আসবে, সেটা আইজি বিএসএফ ঠিক করবেন। এই বিষয়টি নিয়ে জটিলতা কাটার পর বিচারপতি জোর দেন, যাতে আগামিকাল রাতের মধ্যেই গোটা বাহিনী রাজ্যে পৌঁছে যায়। বিষয়টি যাতে দ্রুত হয়ে যায়, তা দেখার জন্য বলেন। তখন কেন্দ্রের তরফে আশ্বস্ত করা হয়, আগামিকাল রাতের মধ্যে মোট ৬৫৮ কোম্পানি বাহিনী রাজ্যে পৌঁছে যাবে। আর বাকি বাহিনীও ভোটের সকালে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল। উল্লেখ্য, এদিন আদালতে কমিশনের তরফে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে মূলত দুটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। হয়, প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর একজন জওয়ান। কিংবা, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে একটি মোবাইল পেট্রোলিং টিম বানানো। এক একটি টিম ছ’টি পোলিং স্টেশনের দায়িত্বে থাকবে। যদিও এই বিষয়ে আদালতের থেকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়নি। আদালতের পর্যবেক্ষণ, এই নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আদালতের কাছে উপযুক্ত এক্সপার্টাইজ় নেই। সেই কারণে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আইজি ও কমিশন পরামর্শ করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct