আপনজন ডেস্ক: নির্বাচন এলেই গ্রাম বাঙলার বহু মানুষ প্রাণ হারান রাজনৈতিক সংঘর্ষে। তার ব্যতিক্রম হয়নি এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে। গত ৯ জুন রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমার দিন থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৫ দিনে এ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, বোমার আঘাতে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বলা বাহুল্য, এই ১৫ জনের সিংহভাগই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে ৮ জুলাই। এ নির্বাচনকে ঘিরে অশান্ত হয়ে পড়েছে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা। প্রতিদিনই রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধী বিজেপি, কংগ্রেস, বাম দল ও আইএসএফের (ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট) সংঘর্ষ হচ্ছে। সোমবারও সংঘর্ষ হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে। নিহত হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের এক কর্মী। এ নির্বাচনকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে কেন্দ্রীয় স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয় এ রাজ্যে নিয়োগ করেছে ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। কলকাতা হাইকোর্ট ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন, এবার রাজ্যের প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করতে হবে। রাজ্যে রয়েছে ৬২ হাজার নির্বাচনী বুথ। এ বুথের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৬৫ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্য এবং বিভিন্ন রাজ্যের ৭০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করছে। ইতিমধ্যে এই বাহিনীর সদস্যরা পশ্চিমবঙ্গে আসতে শুরু করেছেন। শান্তি রক্ষায় বাহিনী নিয়োগ নিয়ে ঙ্গলবার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। উল্লেখ্য, বাসন্তীতে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী জিয়ারুল মোল্লার পর সোমবারও পরিতোষ মণ্ডল নামে এক তৃণমূল কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। এ নিয়ে রাজ্যে নির্বাচনের আগেই সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত হলেন। গত ২৪ দিনে এই রাজ্যের খড়গ্রাম, ভাঙর, নবগ্রাম, কোচবিহার, চোপড়া, পুরুলিয়া, বেলডাঙ্গা, বাসন্তী, হাড়োয়া ও দিনহাটায় নিহত হওয়ার এসব ঘটনা ঘটে। গতকাল ভাঙর, কুলতলি, দিনহাটা, মধ্যমগ্রাম. কোচবিহারে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। তবে রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য আজ বলেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ২০১৮ সালের সর্বশেষ পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল ১৪ মে। ওই নির্বাচনের আগে–পরে সংঘর্ষে ২৩ জন নিহত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে পঞ্চায়েতের ৩৪ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলেন শাসক দল তৃণমূলের প্রার্থীরা। বাকি আসনেও সিংহভাগ দখল করেছিল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এবারও সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে চেয়েছিল শাসক দল। কিন্তু বিরোধী বিজেপি, কংগ্রেস ও বাম দলের প্রচণ্ড বাধার মুখে এবার অতটা আসন দখল করতে পারেনি। তবে অন্তত ১২ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেছে তারা। রাজ্যের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের গ্রাম পঞ্চায়েতে রয়েছে ৫৮ হাজার ৫১৩টি আসন। পঞ্চায়েত সমিতিতে রয়েছে ৯ হাজার ৭৩০টি এবং জেলা পরিষদে রয়েছে ৯২৮টি আসন। পঞ্চায়েত ভোটের ফল বের হবে ১১ জুলাই। উল্লেখ্য, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজনৈতিক সংঘর্ষে প্রাণ যাওয়ার সংখ্যা কম। কিন্তু বরাবরের মতো মৃতের তালিকায় শীর্ষে সেই সংখ্যালঘুরা। শুধু মৃত বললে ভুল হবে ঘাতকদের সিংহভাগও সংখ্যালঘু। সরকারি চাকরিতে সংখ্যালঘুদের হার কম হলেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংঘর্ষে কিন্তু তাদের সংখ্যাই বেশি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct