আব্দুস সামাদ মন্ডল, সোনামুখী, আপনজন: উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর আর্থিক অনটনে আর পড়াশুনো চালিয়ে যেতে পারেননি, সংসারের জোয়াল তুলে নেন কাঁধে। রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ নিয়ে চলে যান কেরলে, মন টেকেনি সেখানে, কারণ, লিখতে পারছিলেন না। ফিরে এসে মেলায় মেলায় মনিহারির দোকান শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর পরিচয়, প্রান্তিক কৃষক। কিন্তু এ ছাড়াও তাঁর আরও একটি পরিচয় আছে। তিনি ২০২৩ সালের যুব সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন তাঁর নাম হামিরুদ্দিন মিদ্যা।২৬ বছরের তরুণ হামিরুদ্দিন তাঁর দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ এই পুরস্কার ‘মাঠরাখা’-র জন্য এই পাচ্ছেন। বাঁকুড়ার সোনামুখীর প্রত্যন্ত গ্রাম রূপপালে অ্যাসবেসটসে ছাওয়া ছোট দু’ কামরার বাড়ি তাদের, আব্বা হানিফ মিদ্যাও প্রান্তিক কৃষক। আম্মা আজমিরা গৃহবধূ, ছোট ভাইও চাষের কাজ করেন, ছোটবেলায় স্কুলের বাংলা বইয়ের গল্পগুলি পড়তে হামিরুদ্দিনের খুব ভালো লাগত, এভাবেই গল্পের প্রতি তাঁর ভালোবাসা বাড়তে থাকে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর ছুটলেন লাইব্রেরিতে, সেখানে একের পর এক বই নিয়ে মগ্ন হয়ে যেতেন, ওই লাইব্রেরিয়ানের সাহায্যেই পরিচয়। সোনামুখীর এক সাহিত্য পত্রিকার সঙ্গে ততদিনে লেখালিখি শুরু করেছেন, ওই পত্রিকাতেই তাঁর প্রথম গল্প প্রকাশ মনোনিত হয়েছে। এরপর একের পর এক কলকাতার প্রথমসারির পত্রিকায় তাঁর গল্প প্রকাশিত হয়েছে, যে গল্পের নামানুসারে তাঁর পুরস্কৃত গল্পগ্রন্থটির নাম, সেই ‘মাঠরাখা’। জাতীয় স্তরের এতবড় পুরস্কার পাওয়ায়, লোকের মুখে ছেলের প্রশংসা শুনে খুশি হলেও হানিফ বাবু ও আজমিরা বেগম, তাঁদের ছেলেটা রোজগারের দিশা দেখুক চান তারা। হামিরুদ্দিন বলেন, কৃষিকাজের ফাঁকে অবসর সময়ে গল্প লিখি, দু’টি গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছে, প্রথম বইটির জন্য বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে শুরু করে একাধিক পুরস্কার পেয়েছি, দ্বিতীয়গল্প সংকলন ‘মাঠরাখা এবারে যুব সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে।পরিবারের দু’বিঘা জমিতে বাবার সঙ্গে চাষবাস করেন হামিরুদ্দিন, চাষের জমি তৈরি করা, বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে ফসল কাটা সবটাই তাঁকে নিজেকে করতে হয়,তারপর রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে শুরু হয় তাঁর লেখালিখি ২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছোট গল্প লেখেন, পরে সেগুলিকেই সংকলন আকারে ২০১৯ সালে ‘আজরাইলের ডাক’ এবং ২০২২ সালে ‘মাঠরাখা’ সংকলন দু’টি প্রকাশ পায়। সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারের জন্য এবারে বাংলা সাহিত্যের যে ১০ জন লেখকের নাম প্রাথমিক তালিকায় ছিল, তাঁদের মধ্যে হামিরুদ্দিন সর্বকনিষ্ঠ। তার এই সাফল্যে গর্বিত সকল গ্রামবাসী থেকে সাধারণ মানুষজন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct