মোদি বিশেষ আমন্ত্রণে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক প্রটোকল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। এই সফরের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দেন তিনি। ভাষণের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাত বছর আগে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন এবং ভাষণ দিয়েছেন। রয়টার্স ওয়াশিংটন থেকে নেওয়া।
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীলতাকে জোর দিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত বৃহস্পতিবার দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, জবরদস্তি ও সংঘর্ষের কালো মেঘ ছায়া ফেলছে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। চীনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করে তিনি বলেন, সেখানে একধরনের মুখোমুখি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মোদি বিশেষ আমন্ত্রণে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক প্রটোকল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। এই সফরের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দেন তিনি। ভাষণের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাত বছর আগে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন এবং ভাষণ দিয়েছেন। তবে এই সাত বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বের পরীক্ষা দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বন্ধুত্ব আগের মতোই আছে। মোদি বলেন, বিগত কয়েক বছরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ঠিক এই সময়ের আরেকটি এআইয়ের অগ্রগতি হয়েছে, সেটা হলো ভারত-যুক্তরাষ্ট্র।
এরপর গণতন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্র আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ও উভয় দেশের মূল্যবোধ। সময়ের ব্যবধানে এর রূপ বদলেছে এবং নতুন নতুন ব্যবস্থায় এসেছে। তবে ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার। সেটা হলো, গণতন্ত্র সমতা ও মর্যাদাকে সমর্থন করে। গণতন্ত্র হলো সেই ব্যবস্থা, যা বিতর্ক ও আলোচনাকে সমর্থন করে। ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের বিষয়টি তুলে ধরে মোদি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মুঠোফোন প্রতিষ্ঠান ভারতে বিনিয়োগ করলে তা দুই দেশের জন্যই নতুন কর্মক্ষেত্র ও সুযোগ তৈরি হয়। একসময় প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে তেমন কোনো সম্পর্ক ছিল না উল্লেখ করে মোদি বলেন, এখন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা সহযোগী। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মহাকাশ গবেষণা, সমুদ্র, বিজ্ঞান, শিক্ষা, প্রযুক্তি, বাণিজ্য, কৃষিসহ নানা খাতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করছে। আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাব। আমি বলতে চাই, সহযোগিতার এই সুযোগ অফুরন্ত। সমন্বয়ের এই সম্ভাবনা সীমাহীন। আমাদের সম্পর্কের রসায়ন বাধাহীন।’ ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন সংকটের মধ্য দিয়ে ইউরোপে যুদ্ধ ফিরে এসেছে। এর কারণে নতুন করে ওই অঞ্চলে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যখন এর সঙ্গে শক্তিধর বড় দেশগুলো জড়িয়ে পড়ে, তখন এর ভয়াবহতা বেড়ে যায়। তিনি বলেন, ‘আমি এটা সরাসরি এবং প্রকাশ্যে বলেছি, এখন যুদ্ধের যুগ নেই। এটা কূটনীতি ও আলোচনার সময়। এই রক্তক্ষয় ও মানবিক সংকট থামাতে আমাদের যা করা দরকার, তা-ই করতে হবে।’
কংগ্রেসে ভাষণের সময় যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে সম্মান জানান। তবে বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা ভারতের মুসলমানদের মানবাধিকার পরিস্থিতি সামনে এনে এই অধিবেশন বর্জন করেন। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ডেমোক্র্যাট নেতা আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কোর্তেজ টুইট বার্তায় বলেন, ‘যাঁরা বহুত্ববাদ, সহনশীলতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে, তাঁরা আমার সঙ্গে যোগ দিন।’ এ ছাড়া ভারতের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মোদির সফর উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভও হয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশ নেন মোদি। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ককে ‘দুই গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু এবং দুই শক্তিধর দেশ’ হিসেবে অভিহিত করেন বাইডেন। এ সময় মোদি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন, আপনি বিনয়ী। কিন্তু যখন পদক্ষেপ নেওয়ার সময় আসে, তখন আপনি দৃঢ়।’ বৃহস্পতিবার বাইডেন ও নরেন্দ্র মোদি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে এই বৈঠক। এরপর যৌথ ঘোষণা দেন দুই নেতা। সেখানে পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরে সম্প্রতি সৃষ্ট উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতার বিষয়ের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। এদিকে গতকাল যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে নরেন্দ্র মোদির। সেখানে ফেডএক্স, মাস্টারকার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেওয়ার কথা। সেখানে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বৈঠক হওয়ার কথা। গতকালই ছিল মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের শেষ দিন।
সৌ: প্র: আ:
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct