আপনজন ডেস্ক: পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে অশান্তির জেরে রাজ্যজুড়ে কমপক্ষে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে ভাঙড়ে তৃণমূল কংগ্রেস ও আইএসএফের সংঘর্ষে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আঙুল তোলেন ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির দিকে। যদিও নওশাদ সিদ্দিকি সেই অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টে রাজ্য জুড়ে অশান্তির জন্য তৃণমূল কংগ্রেসকে দায়ী করেন। তবে, পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক সংঘর্ষে যতজনের মৃত্যু হয়েছে তার সিংহভাগ মুসলিম হওয়ায় এ নিয়ে আগেই তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মুসলিমদের নিয়ে নোংরা রাজনীতির করার অভিযোগ করেছেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। এবার নিজেকে জাতীয়তাবাদী মুসলিম দাবি করে ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করলেন, তার মতো জাতীয়তাবাদী মুসলিম মুখকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পছন্দ করেন না। তৃণমূল সুপ্রিমো চান বোমা বানানোয় ওস্তাদ মুসলিম নেতাদের।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের মুখোমুখি হয়ে আইএসএফের একমাত্র বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি বলেছেন, ভাঙড়ের মানুষ শান্তিপ্রিয়। তারা হিংসা চায় না। যা ঘটেছিল, তা হল মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় (পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য) আমাদের ওপর গুলি এবং বোমা বর্ষণ হয়েছিল। লোকেরা প্রতিবাদ করেছিল। তারা শুধু তাঁদের অধিকার চায়- ভোট দিতে এবং নির্বাচনে মনোনয়ন জমার অধিকার। তাঁরা শুধু তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চান, যা বর্তমানে তাদের জন্য অনুমোদিত নয়। আমি সবসময় শান্তির আবেদন জানিয়েছি। তবে ভাঙড়ে অশান্তির জন্য তাকে দায়ী করায় নওশাদ সিদ্দিকি মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেন, পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকির মতো জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার সংখ্যালঘু মুখ উঠে আসছে, তা তারা হজম করতে পারছেন না। এ কারণেই তারা আমাকে একজন দাঙ্গাকারী হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়। তার (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আরাবুল ইসলাম এবং সওকত মোল্লার মতো মুসলিম নেতাদের প্রয়োজন, যারা হয় বোমা তৈরিতে বিশেষজ্ঞ বা মহিলা অধ্যাপকের (যার জন্য আরাবুল ইসলাম অভিযুক্ত) দিকে জগ ছুড়ে মারতে পারেন। কিন্তু, নওশাদ সিদ্দিকি মুসলমানদের মূল স্রোতে নিয়ে আসছেন, তিনি মুসলমানদের জাতীয়তাবাদী ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। তাই তারা আমাকে সহ্য করতে পারছেন না। কংগ্রেস সাগরদিঘি থেকে উপনির্বাচনে জিতে আসার পর সেই বিধায়ক বায়রন বিশ্বাস তৃণমূল যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে নওশাদ সিদ্দিকি বলেন, ২০২১ সালে, যখন আইএসএফ গঠিত হয়েছিল, তখন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এবং টিএমসি-র আধিপত্য ছিল। ভাঙড়ের মানুষ এই আধিপত্যের বিরুদ্ধে গিয়েছেন, আমাকে আশীর্বাদ করেছেন এবং আমি জিতেছি। তখন আইএসএফ ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব পেয়েছি। আমি ভাঙার বদলে জয়ী হওয়ার পর, আমার পছন্দের নগদ এবং একটি মন্ত্রী পদের অফার ছিল। শুরুতে শীর্ষ নেতারাই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাদের প্রত্যাখ্যান করা হলে, ভাঙড়ের স্থানীয় নেতারা যোগাযোগ করেন, যাদের অনেকের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক ছিল। এমনকী, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের মাধ্যমেও মেসেজ এবং অফার এসেছে। যাদের মধ্যে কেউ কেউ এখন টিএমসির সঙ্গে আছেন, যাদের সাথে আমি যোগাযোগ রেখেছিলাম। কিন্তু, আমরা প্রতিবারই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি। ভাঙড়ের জনগণ আমাকে নির্বাচিত করে আমার ওপর যে আস্থা রেখেছেন, তা আমি ভাঙতে পারব না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct