আপনজন ডেস্ক: সুপ্রিম কোর্ট আর কলকাতা হাইকোর্টে জোর ধাক্কা খেয়ে অবশেষে রাজ্য নির্বাচন কমিশন পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। এর আগে ২২ কোম্পানি বাহিনী চেয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সব মিলিয়ে ৮২২ কোম্পানি আধা সেনা দিয়ে এখন পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে চাইছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কলকাতা হাইকোর্ট যে ৪৮ ঘণ্টার সময় সীমা দিয়েছিল তা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে চিঠি লিখল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। উল্লেখ্য, রাজ্য নির্বাচন কমিশন সাকুল্যে প্রতি জেলায় এক কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহারের কথা জানিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। আর তাতেই বুধবার প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়ে দেয়, রাজ্য জুড়ে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতো এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও কমপক্ষে ৮২ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করতে হবে। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দিয়েছিল ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে যে সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল, ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে তার থেকে কম কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা চলবে না। শুধু তা-ই নয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওই বাহিনীর জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করতে হবে বলেও রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে দায়িত্ব পালনে গাফিলতির জন্য এদিন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ ভর্ৎসনা করে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহকে। কার্যত রাজীব সিংহকে ইস্তফা দেওয়ার বার্তা দিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম বলেছিলেন, ভোট সামলাতে না পারলে রাজ্যপালের কাছে চলে যান।
পঞ্চায়েত ভোটের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং কংগ্রেস নেতা আবু হাসেম খান চৌধুরি ওরফে ডালু ওই মামলা করেন। সেই মামলার শুনানি বুধবার হয় কলকাতা হাইকোর্টে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেন্দ্রের কাছে কেন্দ্রীয় বাহিনী চায়নি রাজ্য নির্বাচন কমিশন। আর তারা যে বাহিনী চেয়েছে তা অপ্রতুল। উল্লেখ্য, গত ১৫ জুন কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিল, গোটা রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতেই পঞ্চায়েত ভোট করাতে হবে। শুধু তা-ই নয়, ওই নির্দেশের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রের কাছে বাহিনী চাইতেও হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। সেই নির্দেশ রাজ্য নির্বাচন কমিশন তো মানেইনি, উল্টে সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। বুধবার শুনানির শুরুতে প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম কমিশনকে বলেন, ‘বলতে বাধ্য হচ্ছি এত কিছুর পরে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ থাকছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, কমিশনারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করতে হচ্ছে। আপনারা দয়া করে হাইকোর্টের নির্দেশ পালন করুন।প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এদিন কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রসঙ্গে জানিয়ে দেয়, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে যে সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল, ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে তার থেকে কম কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা চলবে না। আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওই বাহিনীর জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। সেই নির্দেশ মেনে রাজ্য নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে ফের ৮০০ কোম্পানি বাহিনী চেয়ে পাঠাল।অন্যদিকে, বুধবার রাতে কড়া পদক্ষেপ করেন রাজ্যপাল। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার পদে রাজীব সিনহা যোগ দেওয়ার পর তার জয়েনিং রিপোর্ট গ্রহণ করেননি সি ভি আনন্দ বোস। যদিও বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজের প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে কমিশনারের পাশে থাকারই বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানান, কমিশনার পদ থেকে রাজীবকে সরাতে হলে ইমপিচমেন্ট পদ্ধতির প্রয়োগ প্রয়োজন। ফলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে এখন বহাল থাকছেন রাজীব সিনহা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct