ভারতে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশটির রাজনৈতিক লড়াইয়ের ময়দানে যখন নানা ধরনের সমীকরণ হচ্ছে, তখন কানাডা দৃশ্যমানভাবে একটি অচিন্তনীয় কাজ করে ফেলেছে। একটি সহিংস উগ্রবাদী কাজকে উদ্যাপনের সুযোগ করে দিয়ে দেশটি বিজেপি এবং কংগ্রেস—উভয় দলের তীব্র নিন্দা কুড়িয়েছে। ইস্যুটি বিজেপি ও কংগ্রেসকে নিন্দা জ্ঞাপনের ক্ষেত্রে একটি ঐকমত্যের জায়গায় দাঁড় করিয়েছে। উদারপন্থী নীতি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে জঘন্য কাজগুলোকে মহিমান্বিত করার কানাডার চেষ্টার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার ক্ষেত্রে দুটি দলই গোটা জাতির সমর্থন পেয়েছে। লিখেছেন হর্ষ ভি পান্থ।
ভারতে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশটির রাজনৈতিক লড়াইয়ের ময়দানে যখন নানা ধরনের সমীকরণ হচ্ছে, তখন কানাডা দৃশ্যমানভাবে একটি অচিন্তনীয় কাজ করে ফেলেছে। একটি সহিংস উগ্রবাদী কাজকে উদ্যাপনের সুযোগ করে দিয়ে দেশটি বিজেপি এবং কংগ্রেস—উভয় দলের তীব্র নিন্দা কুড়িয়েছে। ইস্যুটি বিজেপি ও কংগ্রেসকে নিন্দা জ্ঞাপনের ক্ষেত্রে একটি ঐকমত্যের জায়গায় দাঁড় করিয়েছে। উদারপন্থী নীতি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে জঘন্য কাজগুলোকে মহিমান্বিত করার কানাডার চেষ্টার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার ক্ষেত্রে দুটি দলই গোটা জাতির সমর্থন পেয়েছে। ঘটনাটি ৪ জুনের। ওই দিন স্বর্ণমন্দিরে ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ পরিচালনার ৩৯তম বার্ষিকী ছিল। দিনটি পালন উপলক্ষে কানাডার অন্টারিওতে খালিস্তানিপন্থী শিখদের একটি গ্রুপ সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে ইন্দিরা গান্ধীর একটি মূর্তি দাঁড় করানো ছিল। তাঁর সামনে রাইফেল তাক করা শিখ সম্প্রদায়ের একজন ব্যক্তির মূর্তি ছিল। ইন্দিরার মূর্তির পেছনে ব্যানারে বড় করে লেখা ছিল, ‘শ্রী দরবার সাহিবের ওপর হামলার প্রতিশোধ’। এই সমাবেশের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এই পর্বটিকে ‘ক্রমাগতভাবে সহিংসতা সমর্থনকারী’ খালিস্তানি লোকদের সুযোগ করে দেওয়ার সঙ্গে মিলিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এটি দুই দেশের সম্পর্কের জন্য মোটেও ভালো নয়। আমি মনে, করি এটি কানাডার জন্য ভালো কিছু নয়। ’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের সঙ্গে কানাডার কূটনৈতিক বন্ধন ক্রমশ স্থিতিশীল হচ্ছিল। মাত্র গত মাসেই ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়ে ভারত-কানাডা মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপের জন্য কানাডায় ছিলেন, যেটিকে প্রারম্ভিক অগ্রগতি বাণিজ্য চুক্তি (ইপিটিএ) নিয়ে আলোচনায় নতুন গতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলির ভারত সফরকে ভারত-কানাডার পারস্পরিক সম্পৃক্ততার রূপরেখা পুনর্বিন্যাস করার ক্ষেত্রে অটোয়ার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। তবে খালিস্তানের ইস্যুটি এই ধারণা জিইয়ে রেখেছে যে ট্রুডো সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে প্রাপ্য মনোযোগ দিতে অস্বীকার করে যাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে এই অন্টারিওতেই মহাত্মা গান্ধীর একটি মূর্তি ভাঙা হয়েছিল এবং সেই ভাঙা মূর্তির গায়ে লিখে রাখা হয়েছিল, ‘খালিস্তান’। প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভারত ঘটনাটিকে ‘ঘৃণা ছড়ানো অপরাধ’ উল্লেখ করে সেখানে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছিল। ভারত বলেছিল, কানাডায় বসবাসকারী খালিস্তানি উগ্রপন্থীরা ‘ভারতীয় সম্প্রদায়কে সন্ত্রস্ত করতে’ এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এরপর গত নভেম্বরে অন্টারিওর ব্রাম্পটনে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী শিখস ফর জাস্টিস (এসএফজে) পাঞ্জাবকে খালিস্তান নামে আলাদা স্বাধীন ভূখণ্ড করার ইস্যুতে গণভোট করেছিল। এসব বিষয়ে ভারত কানাডা সরকারের হস্তক্ষেপ চাওয়ার পর কানাডা কর্তৃপক্ষ যেসব নিষ্প্রভ প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, তা ভারতের ক্ষোভের আগুনকে উসকে দিয়েছে। বিশেষ করে ট্রুডো যখন ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে অনর্গল কথা বলতে থাকেন, তখন তা ভারতকে সংক্ষুব্ধ করে। ২০২০ সালে ট্রুডো প্রকাশ্যে ভারতে কৃষক বিক্ষোভ সম্পর্কে তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এই ক্ষেত্রে লক্ষণীয়, কানাডার সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রবাসী শিখ সম্প্রদায়ের মুষ্টিমেয় চরমপন্থীদের প্রতি কোনো সহানুভূতি নেই; কিন্তু কানাডা কর্তৃপক্ষের দেওয়া সুযোগ নিয়ে এই চরমপন্থীরা পুরো পরিস্থিতি হাইজ্যাক করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। কানাডা সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে চরমপন্থার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর বদলে সবচেয়ে সহিংস ও আক্রমণাত্মক গোষ্ঠীর কাছে নমনীয় হয়ে থাকছে। এতে কর্তৃপক্ষকে প্রকারান্তরে তাদের সমর্থক মনে করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এর ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর তারা তাদের প্রভাব বাড়িয়েছে। তারা তাদের পেশিশক্তি এবং অর্থবল ব্যবহার করে কানাডার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিজেদের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করছে। খালিস্তানিদের প্রতি সহানুভূতিশীল জগমিত সিংয়ের (কানাডার নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা) কানাডার রাজনীতিতে উত্থান এর একটি উদাহরণ। ভারতে খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদের দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত এখনো কাঁচা এবং এই হুমকি মোকাবিলায় নয়াদিল্লিকে সতর্ক থাকতে হবে। কানাডার জন্যও এটি একটি সতর্কবার্তা হওয়া উচিত যে স্বল্পমেয়াদি ভোটব্যাংকের রাজনীতি শুধু ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, বরং একটি দায়িত্বশীল শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে কানাডার ভাবমূর্তিকেও চ্যালেঞ্জে ফেলে দেবে।
সৌ: প্র: আ:
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনূদিত
অধ্যাপক হর্ষ ভি পান্ত নয়াদিল্লির অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্টাডিজ অ্যান্ড ফরেন পলিসির ভাইস প্রেসিডেন্ট
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct