আপনজন ডেস্ক: কেন্দ্রীয় সরকার এবার পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের বৃহদাংশ ওবিসি তালিকাভুক্তি নিয়ে আপত্তি করতে শুরু করেছে। রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমুল সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ রাজ্যে মুসলিমদের পিছিয়ে পড়া বেশিরভাগ অংশ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির আওতাভুক্ত হয়। বাম আমলে ওবিসি বি তালিকায় মুসলিমদের একটা অংশ থাকলেও পরবর্তীতে তৃণমূল শাসনে ওবিসি এ তালিকায় এক বৃহদাংশ মুসলিমরা নিজেদের অধিকার অনুযায়ী জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে এই সব ওবিসিদের এক বড় অংশ কেন্দ্রীয় ওবিসির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। আর সেটাকেই কেন্দ্রীয় সরকার ভাল চোখে দেখছে না। তাই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য ওবিসি তালিকায় হিন্দুর চেয়ে মুসলিম দের সংখ্যা বেশি কেন, প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় অনগ্রসর শ্রেণি কমিশন বা এনসিবির চেয়ারম্যান হংসরাজ গঙ্গারাম আহির। এক সাংবাদিক সম্মেলনে হংসরাজ অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘুদের ওবিসি তালিকাভুক্তির কারণে বাংলাদেশ থেকে আসা অনেক ‘অবৈধ অভিবাসী’ এবং মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা কোটা সুবিধা পাচ্ছে। এনসিবিসি কমিশনের চেয়ারম্যান হংসরাজ গঙ্গারাম আহির বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, বাংলার ওবিসি তালিকায় থাকা ১৭৯টি গোষ্ঠীর মধ্যে ১১৮টি মুসলিম জনগোষ্ঠী হওয়ায় ওবিসি নির্ধারণে ‘অনিয়মের’ অভিযোগ পেয়েছে ন্যাশনাল কমিশন ফর ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর (ওবিসি) তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে জাতীয় অনগ্রসর শ্রেণি কমিশন (এনসিবিসি)।
নয়াদিল্লির সাংবাদিক সম্মেলনে এনসিবিসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমরা যখন এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজ্য সফর করেছিলাম, তখন আমরা বিষয়টি তুলে ধরেছিলাম এবং প্রশ্ন তুলেছিলাম যে রাজ্যে হিন্দু ওবিসি জাতের চেয়ে মুসলিম ওবিসি জাতি কীভাবে বেশি, যখন রাজ্যে হিন্দুদের নিরঙ্কুশ জনসংখ্যা স্পষ্টতই বেশি। তাদের কাছে সন্তোষজনক জবাব ছিল না বলে দাবি। তাই হংসরাজ দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য ওবিসি তালিকায় “স্পষ্টতই কিছু ভুল” রয়েছে এবং এনসিবিসি যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই যুক্ত হওয়া সম্প্রদায়গুলিকে সরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, ‘এ’ ক্যাটাগরির (সবচেয়ে অনগ্রসর) তালিকায় থাকা প্রায় ৯০ শতাংশ সম্প্রদায় মুসলিম এবং একইভাবে ক্যাটাগরি বি’র অর্ধেকেরও বেশি সম্প্রদায় মুসলিম। হংসরাজ আরও জানান, রাজ্যের ওবিসি তালিকা দুটি বিভাগে বিভক্ত: সর্বাধিক অনগ্রসর শ্রেণি (ক্যাটাগরি এ) এবং অনগ্রসর শ্রেণি (ক্যাটাগরি বি)। সবচেয়ে অনগ্রসর শ্রেণীর মধ্যে মোট ৮১টি সম্প্রদায় রয়েছে, যার মধ্যে ৭৩টি মুসলিম এবং আটটি হিন্দু। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে মোট ৯৮টি সম্প্রদায় রয়েছে, যার মধ্যে ৪৫টি মুসলিম সম্প্রদায়ের এবং বাকিরা হিন্দু সম্প্রদায়ের। আমরা মুসলিমদের সংরক্ষণের সুবিধা পাওয়ার বিরুদ্ধে নই, তবে এই ধরনের অনিয়ম মেনে নেওয়া যায় না। তদন্তে কমিশন কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের দিকে নজর দিচ্ছে জানতে চাইলে এনসিবিসি চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা আগামী সপ্তাহগুলিতে গভীর তদন্ত করতে যাচ্ছি। বছরের পর বছর ধরে এই ধরনের সম্প্রদায়ের সংযোজন করা হয়েছে। হংসরাজ আরও অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার কলকাতা গবেষণা সংস্থা কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা সিআরআই-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলিকে ব্যবহার করছে কোনও সম্প্রদায়ের ওবিসি তালিকাভুক্তির জন্য।উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে ২৭ শতাংশ সংরক্ষণ রযেছে ওবিসির। যদিও পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি সংরক্ষণ মোট ১৭ শতাংশ। অপরদিকে, রাজ্যে সরকারি চাকরিতে এসসিদের ২৩ শতাংশ সংরক্ষণ থাকলেও কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে তা মাত্র ৬ শতাংশ। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ মহল বলছে, রাজ্যের ওবিসি তালিকাভুক্তদের এক বড় অংশ কেন্দ্রীয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় কেন্দ্রের নিয়ম মেনে। আর কেন্দ্রীয় ওবিসি তালিকাভুক্ত হওয়ার ফলে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে ওবিসি সংরক্ষণের সুবিধা পাচ্ছে। বাদ দেওয়া যাচ্ছে না ওবিসি মুসলিমদের। সেটাই মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় সরকারের।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct