আপনজন ডেস্ক: ঘোষিত পঞ্চাযেত নির্বাচনেতমনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই উল্লেখ করে কলকাতা হাইকোর্ট শুক্রবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট পুনর্বিবেচনার বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার নির্দেশ দিয়েছে।প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর দায়ের করা দুটি পৃথক পিটিশনের যৌথ শুনানির সময় বলেছে, মনোনয়ন জমা দেওয়ার সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞপ্তির কারণে কমিশনের পঞ্চায়েত নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।মজার ব্যাপার হল, আদালতের শুনানির প্রায় একযোগে জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে নবনিযুক্ত কমিশন প্রধান রাজীব সিনহা বলেন, নির্বাচনের নির্ঘণ্ট পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না এবং মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রত্যাহারের শেষ তারিখ অপরিবর্তিত থাকবে।ঘোষিত নির্ঘণ্টে প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য অপর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়েছে বলে আদালতের প্রাথমিক সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বেঞ্চ রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে ১২ জুন হলফনামা আকারে মনোনয়নের সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে তাদের অবস্থান জানাতে নির্দেশ দিয়েছে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে একটি পৃথক প্রতিবেদনও চাওয়া হয়েছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে অনলাইন পদ্ধতিতে মনোনয়ন পত্র দাখিলের অনুমতি দিতে নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দিয়ে হাইকোর্ট নির্বাচনের ফলাফল না আসা পর্যন্ত নির্বাচনের সব কার্যক্রমের ভিডিওগ্রাফি করতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে। হািইকোর্টের বেঞ্চ বলেছে, ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে মনোনয়ন জমা দেওয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রাসঙ্গিক আইনটি সংশোধন করা উচিত ছিল। প্রযুক্তির বর্তমান যুগে রাষ্ট্রের উচিত অনলাইন মনোনয়নের ব্যবস্থা চালু করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি ব্যবহারে অ্যালার্জি থাকা উচিত নয়। অনলাইন ব্যবস্থা শুধু মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়াকেই সহজ করবে না, যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াকেও উল্লেখযোগ্যভাবে ভারমুক্ত করবে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সিভিক ভলান্টিয়ারদের সম্পৃক্ত করতে সরকারকে নিষেধ করার পূর্ববর্তী আদালতের আদেশের কথা কমিশনকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে আদালত। বেঞ্চ বলেছে, নিরাপত্তা মোতায়েনের ব্যবস্থা করার আগে কমিশনকে এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে শুভেন্দুর আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে, আগামী ৮ জুলাই অনুষ্ঠেয় একক পর্যায়ের নির্বাচনে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর যৌথ মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সিনহা জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন যে রাজ্য পুলিশ বাহিনী মোতায়েনের বিশদ বিবরণ পরবর্তী পর্যায়ে চূড়ান্ত করা হবে। রাজ্য সচিবালয় নবান্ন সূত্রে জানা গেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহার ও ওড়িশা থেকে পুলিশ বাহিনী মোতায়েনের অনুরোধ করার কথা ভাবছে।কমিশন বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা এবং জলপাইগুড়ি এই পাঁচটি জেলাকে ‘সংবেদনশীল’ বলে ঘোষণা করেছে।আদালতের সামনে পেশ করা বক্তব্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেঞ্চকে আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেছিল। নতুন রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের অনুমোদন দিতে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বসুর অতিরিক্ত সময় নেওয়ার বিষয়েও আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। সরকারের যুক্তি ছিল, একবার নির্বাচন সম্পর্কে অবহিত হয়ে গেলে আদালত নির্বাচন পরিচালনার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct