আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার কটকের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করমন্ডল এক্সপ্রেসের আহত যাত্রীদের দেখতে যান। তিনি এসসিবি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চক্ষু ও সার্জারি বিভাগ পরিদর্শন করেন এবং রোগীদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,আমরা আহত যাত্রীদের সম্ভাব্য সব উপায়ে সহায়তা করার চেষ্টা করছি এবং ২ জুন দুর্ঘটনার রাতে আহত যাত্রীদের যত্ন নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে ডাক্তার, নার্স, ও অন্যান্য সাহায্যের জন্য একটি দল প্রেরণ করেছি। তিনি বলেন, এসসিবি মেডিকেল কলেজে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা ৫৭ জন আহত যাত্রী রয়েছেন। কেউ হাত-পা হারিয়েছেন, কেউ চোখ হারিয়েছেন। এটি এমন একটি ট্র্যাজেডি যা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ১০৩ জন যাত্রীর মৃতদেহ শনাক্ত করা হয়েছে এবং ৩০ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি আরো বলেন তিনি চান দুর্ঘটনার পিছনের সত্যটি বেরিয়ে আসুক। ‘আমি জনগণের সঙ্গে থাকতে চাই। অনেক প্রাণ হারিয়েছে এবং সত্য বেরিয়ে আসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এদিন কটকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিলেন মহিলা ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ভুবনেশ্বরের এইমস-এ ভর্তি আহত যাত্রীদের দেখতে যান দুই মন্ত্রীই। কটক ভূবনেশ্বর ঘুরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হাজির হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দোপাধ্যায় ৷ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫ টা নাগাদ সেখানে হাজির হয়েছে হাসপাতালের মর্গ থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন ৷ খোঁজ নেন আহতদের চিকিৎসার ৷ কর্মরত জুনিয়ার ডাক্তারদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদও করেন তিনি ৷ পরে সাংবাদিক সম্মেলন করেন তিনি ৷ বালেশ্বর কান্ডে এই জেলা প্রশাসনের সহযোগিতার ভূমিকা তুলে ধরে সুনাম করেন সকলের ৷ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নতিও করার উদ্যোগ বলে জানালেন এদিন ৷এদিন তিনি বলেন,পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই, যেভাবে অ্যাক্সিডেন্ট ঘটার সাথে সাথে এখানকার ডাক্তার অফিসার গাড়ি পাঠিয়ে দারুণভাবে হেল্প করেছে। এখানকার একজন অতিরিক্ত জেলাশাসক চারদিন ওখানে কাজ করছে, আমি দেখছি। অনেক আহতকে ভর্তি করেছিল। ৬১ জন এখনো ভর্তি রয়েছে। যার মধ্যে ১৬ জন বিহারের। যারা মারা গিয়েছেন বুধবার প্রতি পরিবারের একজন করে ডাকা হচ্ছে। প্রত্যেক মৃতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা, সিরিয়াস আহতদের এক লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। একটু কম আহতদের ৫০ হাজার করে দেওয়া হবে। আরো অল্প হলে ২৫ হাজার দেওয়া হবে। প্রায় ৯০০ জন যারা ট্রেনে ভ্রমণ করছিলেন এবং মানসিক ও শারীরিক চাপের মধ্যে রয়েছেন তাদের ১০,০০০ টাকা দেওয়া হবে।। চার মাস পরপর আমরা ২০০০ টাকা করে দেব। এছাড়াও চাল ডাল সহ খাদ্য সামগ্রী আমরা দেব। মারা যারা গিয়েছে তাদের পরিবারকে একজন করে স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি দিচ্ছি। যাদের হাত পা নষ্ট হয়ে গিয়ে বা কোন কারনে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছে তাদেরও একজন করে স্পেশাল হোমগার্ডে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরও বলেন- “এখানকার ডাক্তার নার্সেরা মেদিনীপুর থেকে গিয়ে কাজ করেছে ৷ তাদের আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। সেজন্য আজকে ওদের জন্য কিছু করে গেলাম যা আগামী দিনে হবে। ১০০ বেডের একটা ক্রিটিকাল ইউনিট এখানে হচ্ছে। মাদার এন্ড চাইল্ড হবের তিনটি ফ্লোর আছে আরো একটি হচ্ছে। ক্যাথল্যাব ইতিমধ্যেই হয়েছে। এই হাসপাতালের পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুর বাঁকুড়া ঝাড়গ্রাম বহু জেলার যোগাযোগ রয়েছে, তাই এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটার যাতে আরো একটু উন্নতি হয় তার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই হাসপাতালে ক্যান্সার ব্লক হচ্ছে নতুন করে”৷ রাতে মেদিনীপুর শহরে সার্কিট হাউসে রয়ে গিয়েছেন তিনি ৷ সকালে এখান থেকে রওয়ানা দেবেন কলকাতার উদ্দেশ্যে ৷ এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বসু দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বাসন্তীতে গিয়ে ২ জুন ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত যাত্রীদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। রাজ্যপাল বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক পরিস্থিতি। এটি মানুষের দুর্দশার একটি ঘটনা। এটাই সেই সময় যখন সবার জন্য দাঁড়ানো উচিত এবং সবার পক্ষে দাঁড়ানো উচিত। তিনি বলেন, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার উভয়ই এই মর্মান্তিক ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে।গত ২ জুন সন্ধ্যা ৭টার দিকে কোরোমন্ডেল এক্সপ্রেস একটি মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খায় এবং এর বেশিরভাগ বগি লাইনচ্যুত হয়। সব মিলিয়ে এই দুর্ঘটনায় ২৮৭ জন মারা যান এবং ১২০০ জনেরও বেশি আহত হন। বেঙ্গালুরু-হাওড়া এক্সপ্রেসের শেষ কয়েকটি বগির ওপর দিয়ে কোরোমন্ডেলের কয়েকটি বগি উল্টে যায়। তদন্তকারীরা তিনটি ট্রেন দুর্ঘটনার পিছনে সম্ভাব্য মানবিক ত্রুটি, সিগন্যাল ব্যর্থতা এবং অন্যান্য সম্ভাব্য কারণগুলি খতিয়ে দেখছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct