আপনজন ডেস্ক: বালাসোর ট্রিপল ট্রেন দুর্ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয় ১০০ জনেরও বেশি মৃতদেহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ভুবনেশ্বরের এইমস দাবিদারদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছে। ভুবনেশ্বরের এইমসের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, দাবিদারদের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত ১০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি বলেন, লাশগুলো এখন পাঁচটি কন্টেইনারে স্থানান্তর করা হয়েছে যেখানে তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা যেতে পারে। ওই কর্মকর্তা বলেন, ডিএনএ নমুনার পর লাশ নিষ্পত্তিতে তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়, কারণ এগুলো ছয় মাস কন্টেইনারে সংরক্ষণ করা যায়। নিহত ২৭৮ জনের মধ্যে ১৭৭ জনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে এবং আরও ১০১ জনকে শনাক্ত করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। ভুবনেশ্বরের এইমস ১২৩টি মৃতদেহ পেয়েছিল যার মধ্যে প্রায় ৬৪ টি শনাক্ত করা হয়েছে। ঝাড়খন্ডের এক দাবিদার মঙ্গলবার অভিযোগ করেছেন যে তারা সোমবার উপেন্দ্র কুমার শর্মার দেহ সনাক্ত করেছিলেন, তবে মঙ্গলবার এটি অন্য কারও কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘ডিএনএ স্যাম্পল করার মানে কী, যদি লাশ অন্য কারও কাছে হস্তান্তর করা হয়। আমরা উপেন্দ্রকে তার শরীরে ট্যাটু চিহ্ন থেকে সনাক্ত করেছিলাম। ভুবনেশ্বরের এইমসের ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট ডঃ প্রভাস ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, বিস্তারিত তদন্তের পর মৃতদেহগুলি হস্তান্তর করা হচ্ছে। এটি একটি সত্য যে একাধিক পরিবার একক মৃতদেহ দাবি করছে এবং তার জন্য ডিএনএ নমুনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ডিএনএ স্যাম্পলিং রিপোর্ট পেতে কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগতে পারে। যেহেতু লাশগুলো এখন কন্টেইনারে রাখা হচ্ছে, তাই সেগুলো সংরক্ষণে যেন কোনো সমস্যা না হয়। মৃতদের বেশিরভাগই ওড়িশা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর বাসিন্দা।
ট্রেন দুর্ঘটনার পর পাঁচ দিন কেটে গেছে। এখন পর্যন্ত এ দুর্ঘটনায় ২৭৫ জন নিহত হয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে প্রায় ১০০টি মরদেহের কোনো পরিচয় মিলছে না। গত শুক্রবার রাতে ওড়িশার বালাসোর এলাকায় তিনটি ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। এর মধ্যে দুটি ছিল যাত্রীবাহী ও একটি মালবাহী। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে সহস্রাধিক মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখনো অনেকে তার প্রিয় মানুষটিকে খুঁজে ফিরছেন। এই দুর্ঘটনাকে ২০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে ভয়াবহ বলা হচ্ছে। বিভিন্ন খবরে বলা হয়, যাত্রীবাহী ট্রেন দুটি ছিল যাত্রীতে ঠাসা। এগুলোতে তিন হাজারের বেশি যাত্রী ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিখোঁজ যাত্রীদের সন্ধানে তাঁদের স্বজনেরা ওড়িশা ও অন্যান্য রাজ্যের হাসপাতালগুলোতে হন্যে হয়ে ঘুরছেন, যদি প্রিয় মানুষটির কোনো খবর মেলে। অন্যদিকে অনেকগুলো মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। বালাসোর জেলা হাসপাতালের দেয়ালে এ দুর্ঘটনায় নিহত অনেকের ছবি ঝুলছে। এর মধ্যে দুই কিশোরের ছবিও রয়েছে। যদিও তাদের মুখমণ্ডল থেঁতলে গেছে। এসব ছবির মানুষদের স্বজনেরা যাতে শনাক্ত করতে পারেন, সে জন্যই এ ব্যবস্থা। স্বজনের খোঁজে হাসপাতালে আসা মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন বলছেন, ছবির ২০ ও ১৬৯ নম্বরে থাকা ২ কিশোর তাঁর ১৬ বছরের নাতি তাফসির ও ১১ বছরের তাউসিফ। তারা তাদের বাবার সঙ্গে করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনে ছিল। মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন ছেলের খোঁজ এখনো পাননি, তবে নাতিদের লাশ ওড়িশার রাজধানী ভুবনেশ্বর থেকে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, সেখানেই ৪টি হাসপাতালে পরিচয় শনাক্ত হয়নি, এমন প্রায় ১০০টি মরদেহ রাখা হয়েছে। কিন্তু একজন কর্মকর্তা নাজিমুদ্দিনকে থামিয়ে দেন। তিনি বলেন, তাফসিরের লাশ এরই মধ্যে আরেকটি পরিবার দাবি করেছে, যদিও এখনো তাদের কাছে লাশ হস্তান্তর হয়নি। তবে, লাশ বিভ্রান্তি দূর করতে ডিএনএ পরীক্ষাই এখন ভরসা। ভুবনেশ্বরের পৌর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। ওই কর্মকর্তারা মারা যাওয়া ব্যক্তির মরদেহ যাতে সঠিক পরিবারের কাছেই যায়, সে জন্য এ ধরনের দাবি ও শনাক্তকরণের কাগজপত্র যাচাই–বাছাই করে দেখছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct