ভালো আইনজীবী হওয়ার খুঁটিনাটি
মিজানুল কবির
আইনজীবী, কলকাতা হাইকোর্ট
উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল বেরিয়েছে। আইনি পেশাই যারা আসতে চান তাদের জন্য এই লেখাটি। আইনজীবী হয়ে কি ধরনের কেরিয়ার গড়া যাবে ? এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগে প্রশ্নকারীদের জানতে হবে যে বর্তমানে আপনি কি করছেন ?যাই হোক ধরা যাক যে আপনি হয় আইন পড়ছেন অথবা আইন পড়ার প্রতি আপনি আগ্রহী অথবা কাউকে গাইড করার জন্য এই প্রশ্নের উদয় হয়েছে। সে যাই হোক আপনার প্রশ্নোত্তর পর্বে আসা যাক। ভারতবর্ষে আইন পড়া যায় ২ ভাবে। উচ্চ্যমাধ্যমিক পাশের পর গ্রাজুয়েশন তথা আইন বিষয়ে অনার্স হিসেবে। উচ্চ্যমাধ্যমিক পরে ক্ল্যাট কিংবা উল্লিখিত বিশ্ববিদ্যালয়ের এডমিশন টেস্টের উপর ভিত্তি করে। এরাজ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত বেশ কিছু কলেজ আছে। এছাড়াও বর্ধমান কিংবা আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়েও আইন নিয়ে পড়ানো হয়ে থাকে। কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরবঙ্গের বেশকিছু জায়গায় আইন নিয়ে পড়ানো হয়ে থাকে। এছাড়াও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের এরাজ্যের আহিরণ মুর্শিদাবাদ ক্যাম্পাসে উন্নত মানের আইন পড়ানো হয়। এই কোর্সের সময়সীমা ৫ বছরের হয়ে থাকে। কখন উল্লিখিত ভর্তি পরীক্ষা হয় জানতে আপনাকে উক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা ক্ল্যাটের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফলো রাখতে হবে। স্নাতক অর্থাৎ ডিগ্রী পাসের পর ৩ বছরের এল.এল.বি এরাজ্যে বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটি, বর্ধমান ইউনিভার্সিটি সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ বছরের আইন পড়ানো হয়ে থাকে। এরাজ্যের বাইরে বেশিরভাগ রাজ্যের বিভিন্ন নামি দামি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইন নিয়ে পড়ানো হয়ে থাকে। একটু গুগল করে দেখে নেওয়া যায়।
হোয়াটস নেক্সট? আইন নিয়ে পড়াশোনা তো করে ফেললেন। এবার কি করা যাবে? নেক্সট প্ল্যান কী? এই প্রশ্নের সম্মুখীন হামেশাই হতে হয় কিংবা আপনার মনের মধ্যেও আসে তাইতো? চলুন এবার দেখা যাক। প্রথমত, বার কাউন্সিল থেকে সনদ লাভের পর আইন পেশাকে স্বাধীন পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারেন। দ্বিতিয়ত, বিভিন্ন কম্পানীতে লিগ্যাল এ্যাডভাইজার পদে চাকুরী করতে পারেন। হায়ার স্টাডিজ করে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর দিকে এগোতে পারেন।তৃতীয়ত, আইনে গ্রাজুয়েশন থাকলে ডব্লিউবিজেএস পরিক্ষা দিয়ে উত্তির্ণ হতে পারলে একজন বিচারক হিসেবে কাজ করতে পারেন।এছাড়াও আরও একাধিক পেশায় চাকুরী করার সুবিধা তো আছেই। অনেকের মনে এই প্রশ্ন জাগে। আইন নিয়ে তো পড়া হবে। কোনো গড ফাদার নেই। ফার্স্ট জেনারেশন লয়ার। কীভাবে এগোবো? চলুন চটপট পড়ে ফেলি। সবার থেকে এগিয়ে থাকতে চান, প্রথমেই এই মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। সবার থেকে এগিয়ে থাকা বলতে কিছু নেই আসলে। শুধু নিজের সেরা টুকু দেয়ার চেষ্টা করা যায়। আইন ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন উন্নত করার সাথে সাথে ব্যাক্তিগত যোগাযোগের সার্কেল বাড়াতে হবে। তাছাড়া প্রতিদিন আইনের বই পড়তে হবে নিয়ম করে। আমাদের সামাজিক জীবনে প্রায়ই প্রয়োজন হয় এরকম আইন গুলি আলাদা ডায়েরিতে টুকে নিয়ে চর্চা করে যেতে হবে। বিভিন্ন কেস সটাডি করতে হবে এবং, আদালতে শুনানি করার ক্ষেত্রে এক্সপার্ট হতে পারলে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়না কোনো আইনজীবীকে। এজন্য সিনয়র কোনো এক্সপার্ট এর সাথে কিছুদিন কাজ করলে ভাল হয়। বেতন কত? উপার্জন কেমন হবে? পেট চলবে তো? কোন ব্যাবসায়িক সংস্থা, অন্য কোথাও লিগ্যাল এডভাইজার কিংবা পরীক্ষা দিয়ে জাজ হলে সেখানকার নিয়মকানুন অনুযায়ী বেতন পাবেন। বাকি যদি জিজ্ঞেস করেন আইনজীবী হিসেবে নিজে কাজ করলে কত ইনকাম হবে? উত্তর “শুন্য থেকে ইনফিনিটি “অর্থাৎ যত পরিশ্রম করবেন তার উপরে নির্ভর করবে। শুধু টাকা কামাবার জন্য আইন বিশেষজ্ঞ হয়ে লাভ নেই, টাকা এলেও সম্মান আসেনা। আইনে দক্ষতা সেবা দেয়ার উদ্যেশ্যে অর্জন করলে টাকা, সম্মান এবং মানুষের আন্তরিক আশির্বাদ পাবেন। জীবনের ধরন মূলত তিনরকম হয়, সাধারন জীবন, গতানুগতিক জীবন এবং বর্নাঢ্য জীবন। একজন আইনজীবীর জীবন বর্নাঢ্য হতে পারে, যদি দক্ষতা এবং সততার কম্বিনেশন তার ভেতরে থাকে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct