বিশেষ প্রতিবেদক, বসিরহাট, আপনজন: ওড়িশার বালাসোরের ট্রেন দুর্ঘটনা এই শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা বলে অভিহিত করা হচ্ছে। উদ্ধার কাজ শেষ হলেও ট্রেন দুর্ঘটনায় বেঁচে ফেরা মানুষজন এখনও রাতের সেই বিভীষিকা কিছুতেই ভুলতে পারছে না। বহু ট্রেন যাত্রীর আত্মীয় স্বজন আশেপাশের হাসপাতাল, এমনকী যেখানে লাশ রাখা হয়েছে সেখানে গিয়েও তারা দেখছেন তার মধ্যে তাদের স্বজনের দেহ রয়েছে কিনা। যদিও এই গরমে লাশের এখন বিকৃতি ঘটছে যে প্রকত মানুষকে শনাক্ত করা খুবই মুশকিল হচ্ছে। তবে, দুর্ঘটনার পরে মানুষ উদ্ধারে নেমে পড়লেও অনেক বেঁচে যাওয়া যাত্রীও সঙ্গী যাত্রদের উদ্ধারকাজে নেমে পড়েন ভয়াবহ পরিস্থিতরি মধ্যেও। সেই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যুপুরী থেকে নিজের জীবন বাঁচিয়ে, অন্যের জীবন ফিরিয়েছেন করমণ্ডলের যাত্রী উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের আব্দুল আলিম। কিন্তু রাতের ভয়ের বিভীষিকা গ্রাস করে চলেছে। বসিরহাট-১ নং নম্বর ব্লকের শাকচুড়া বাগুন্ডি গ্রাম পঞ্চায়েতে হরিহরপুরের বছর আঠাশের আব্দুল আলীম গাজী করমন্ডল এক্সপ্রেসে যাচ্ছিলেন কেরলে কাজ করতে। ওড়িশার বালাসোরের কাছে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা সেই কেরল যাত্রা ভঙ্গ করে দেয়। সেই দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকে বেঁচে যাওয়া শ্রমিক আব্দূল আলিম নিজের জীবন বাঁচিয়ে অন্যের জীবন বাঁচিয়েছেন। আলিম জানান, এক নিমেষে হঠাৎই একটি জোরালো আওয়াজ! দুর্ঘটনার প্রাবল্যে অজস্র যন্ত্রণা, শরীরের একাধিক জায়গায় ক্ষত। কিন্তু তার মধ্যেই চোখের সামনে এতগুলো মরণাপন্ন মানুষের আর্তনাদ দেখে চুপ থাকা যায়নি। নিজেই জীবন বাঁচানোর লড়াইতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে বেশ কয়েকজন যাত্রীকে দুমড়ে মুছড়ে যাওয়া রেলের কামরা থেকে টেনে টেনে বের করে করে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাই। কিন্তু বেশিক্ষণ তা পারা যায়নি। চোখের সামনে রক্তের স্রোত দেখে দেখে দুম করে বেহুঁশ হয়ে রেল লাইনের উপরে পড়ে যান আলিম। সেখান থেকে পুলিশি সহায়তা নিয়ে বসিরহাটে বাড়ি ফিরলেন আব্দুল আলিম। কিন্তু শুক্রবার ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের রাত যেন রাতের ঘুম চলে গিয়ে শিউরে উঠছে আব্দুল আলিমের। ঘুমের ঘোরে মাঝে মাঝে চিৎকার করে উঠছে, বাঁচাও বাঁচাও দুচোখ বন্ধ হলেই সেই ভয়াবহ স্মৃতি ফের ফিরে আসছে। দুঃস্বপ্নের সেই রাতের কথা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct