ওবাইদুল্লা লস্কর, উস্তি, আপনজন: কেরলে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে যাওয়ার পথে মৃত্যু হলো আসিফ আলি গাজীর বয়স মাত্র কুড়ি, ৮ মাসের বিবাহিত জীবনে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা। উস্তি থানার বানেশ্বরপুরের মালাঙ্গি সরিষাপাড়ার আসিফের পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতে গতকালই চেন্নাই এর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল আর তার বাড়িতে ফেরা হলো না। শুক্রবার সন্ধ্যায় পরিবারের লোকের সঙ্গে শেষবার কথা বলেছিল উস্তির মালাঙ্গি সরিষা পাড়ার বাসিন্দা বছর একুশের আসিফ গাজী। পরিবারের হাল ধরতে দর্জির কাজে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিল আসিফ। বেঙ্গালুরু থেকে হামসফর এক্সপ্রেসে করে বাড়ি ফিরছিল। ট্রেনে রাজ্যে ঢোকার কিছু আগে পরিবারের লোকের সাথে শেষ বার কথা বলে আসিফ। মাকে বলে ‘মা আমি বাড়ি আসছি’। কিন্তু ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস এর সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে । এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় বহু মানুষের। মৃতের তালিকায় নাম রয়েছে আসিফ গাজীরও । এই মৃত্যুর ঘটনায় শোকের ছায়া নেমেছে এসেছে গোটা পরিবারে। খবর আসার পর কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবারের লোকজনেরা। আসিফের মা বলেন, ট্রেনে শুক্রবার সন্ধ্যায় শেষবারের মতন আমার সঙ্গে কথা বলে আসিফ । তারপর সঙ্গীদের কাছ থেকে ফোনে খবর আসে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। ছেলে বাড়ি আসবে বলেছিল । তরতাজা ছেলেকে হারিয়ে কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে গোটা পরিবার। পরিবারের সদস্য সেলিম গাজী বলেন, গত ২০ দিন আগে আসিফ ব্যাঙ্গালোরে দর্জির কাজ করতে গিয়েছিল। কাজ না থাকার কারণে ছুটি নিয়ে বাড়িতে ফোন করে বলেছিল যে আমি বাড়ি আসছি। আসিফের সঙ্গে বেশ কয়েকজনও গিয়েছিল। রাতে আসিফের সঙ্গে থাকা সঙ্গীরা আমাদের ফোন করে এই দুর্ঘটনার কথা জানায়। এরপর উৎকণ্ঠস্বর সঙ্গে খোঁজ খবর করে জানতে পারি উড়িষ্যার বালেশ্বরের কাছে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা খবর। আহতদের যখন উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল তখনই আমরা টিভিতে দেখতে পাই আসিফকে। আসিফের আঘাত গুরুতর ছিল। এরপর সময় নষ্ট না করে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উড়িষ্যার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছেলেকে হারিয়ে কার্যত দিশাহারা হয়ে গিয়েছে গাজী পরিবার। তাই এখন শোকে পাথর ওই হতভাগ্য পরিবার ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct