এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: মাদ্রাসা শিক্ষকদের সরকারি কর্মচারী গণ্য না করায় বাদ দেওয়া হল খাদিমুল হুজ্জাজ থেকে। জানা গিয়েছে ২৯ শে মার্চ কেন্দ্রীয় হজ কমিটির পক্ষ থেকে খাদিমুল হুজ্জাজ নিয়োগ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে রাজ্য হজ কমিটি ৫ জনের ওয়েটিং লিস্ট সহ ৩৩ জনের খাদিমুল হুজ্জাজের তালিকা অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় হজ কমিটিতে পাঠান। যে তালিকায় ২৮ জনের মধ্যে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের ৬ জন কর্মচারী, প্রাইমারি ও হাই স্কুলের ১৪ জন শিক্ষক এবং ৮ জন মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রাজ্য হজ কমিটির কার্যনির্বাহী আধিকারিক মোহাম্মদ নকি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় হজ কমিটি প্রথমে খাদিমুল হুজ্জাজ হিসাবে এ রাজ্য থেকে মোট ১৮ জনকে অনুমোদন দেয়, তারপর আমরা আবার চিঠি করেছিলাম, পরে মাত্র একজনকে অনুমোদন দিয়ে মোট ১৯ জন খাদিমুল হুজ্জাজকে অনুমোদন দিয়েছেন। বাকিদেরকে বাদ দেওয়ার কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় হজ কমিটি বলেছে এরা সরকারি কর্মচারী না এরা যদি সরকারি কর্মচারী হয়ে থাকে তাহলে পুনরায় আমাদেরকে আবেদন জানান, আমরা আবারও চিঠি করে জানিয়েছিলাম কিন্তু তারা সেটা নাকচ করেছে। উল্লেখ্য রাজ্য হজ কমিটির পক্ষ থেকে নির্বাচিত খাদিমুল হুজ্জাজদের তালিকা থেকে কেন্দ্রীয় হজ কমিটি যাদেরকে বাদ দিয়ে দিয়েছে তাঁরা সকলেই মাদ্রাসা শিক্ষক । খাদিমুল হুজ্জাজ থেকে বাদ পড়ায় একরাশ ক্ষোভ উগরে মাদ্রাসা শিক্ষক আবু সিদ্দিক খান বলেন, সঠিক নিয়মের মাধ্যমে আমরা খাদিমুল হুজ্জাজ হিসেবে নির্বাচিত হই, রাজ্য হজ কমিটি মোট ২৮ জনকে নির্বাচন করে সেই মতো আমাদের নির্দেশিকা অনুযায়ী আমরা সমস্ত কাগজপত্র রেডি করি এবং সমস্ত কাগজপত্র আমরা জমা করি। তারপরে একেবারেই শেষ মুহূর্তে আমরা জানতে পারলাম আমরা মাদ্রাসা শিক্ষকরা খাদিমুল হজ্জাজ হিসাবে যেতে পারবো না। অত্যন্ত বেদনার সাথে জানাতে হচ্ছে যে এবছরের এ রাজ্য থেকে ১৯ জন খাদিমুল হুজ্জাজ হিসাবে পাঠানো হবে সেখানে স্কুলের শিক্ষকরা যেতে পারলেও মাদ্রাসার শিক্ষকরা যেতে পারছে না। রাজ্য হজ কমিটির কার্যনির্বাহী আধিকারিক মোহাম্মদ নকি সাহেব জানালেন যে আপনারা ৮ জন যেতে পারছেন না। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হল আমরা জানতে পেরেছি যে ১৯ জনের মধ্যে ১৩-১৪ জন স্কুলের শিক্ষক তাঁরা কিন্তু গভর্নমেন্ট এডেড, তাঁরা কিন্তু গভর্নমেন্ট টিচার না। মাদ্রাসা গভর্নমেন্ট এডেড হয়েও মাদ্রাসা শিক্ষকরা কেন বঞ্চিত হলো ? আমরা রাজ্য হজ কমিটি এবং রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ইতিপূর্বে প্রত্যেক বছর মাদ্রাসা শিক্ষকরা খাদিমুল হুজ্জাজ হিসেবে গিয়েছেন, এবারেও যাতে মাদ্রাসা শিক্ষকরা খাদিমুল হুজ্জাজ হিসেবে যেতে পারেন তার ব্যবস্থা করার দাবি তোলেন আবু সিদ্দিক খান। খাদিমুল হুজ্জাজ থেকে বাদ পড়ায় মাদ্রাসা শিক্ষক শফিকুল গোলদার বলেন, এইভাবে মাদ্রাসা শিক্ষকদেরকে বঞ্চিত করা এটা ভবিষ্যতের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষক মাদ্রাসা ছাত্র-ছাত্রী এবং মাদ্রাসা প্রেমী সকলের জন্য একটা অশনি সংকেত। আগামী দিনে মাদ্রাসার শিক্ষকরা শিক্ষক হিসাবে পরিচয় বহন করতে পারবে তো ? আশঙ্কা প্রকাশ করছে মাদ্রাসার শিক্ষকর শফিকুল গোলদার ।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রাজ্য হজ কমিটির কার্যনির্বাহী আধিকারিক মোহাম্মদ নকি ‘আপনজন’কে বলেন, কেন্দ্রীয় হজ কমিটির পক্ষ থেকে খাদিমুল হুজ্জাজ নিয়োগের জন্য প্রতিবছর নির্দেশিকা বের হয়। সেই নির্দেশিকায় কম বেশি কিছুটা পরিবর্তন থাকে। এ বছরও কিছু পরিবর্তন রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় অথবা রাজ্য সরকারের কর্মচারী হতে হবে। সরকার পোষিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী হলে হবে না। আমরা কেন্দ্রীয় হজ কমিটির কাছে ২৮ জনের খাদিমুল হুজ্জাজের নাম এবং ৫ জনের ওয়েটিং লিস্ট করে পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকে ওরা মাত্র ১৮ জনকে অনুমোদন দিয়েছে, তারপর আমরা আবার চিঠি করেছিলাম। সেখান থেকে মাত্র একজনকে অনুমোদন দিয়েছে। বাকিদেরকে বাদ দেওয়ার কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় হজ কমিটি বলেছে এরা সরকারি কর্মচারী নয়। এরা যদি সরকারি কর্মচারী হয়ে থাকে তাহলে পুনরায় আমাদেরকে আবেদন জানান, আমরা আবারো চিঠি করে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সেটা নাকচ করেছে ।’কেন্দ্রীয় হজ কমিটির নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতি ৩০০ জন হজযাত্রী প্রতি একজন খাদিমুল হুজ্জাজ নির্ধারণ করা হয়। জানা গেছে, এ বছর পশ্চিমবঙ্গ থেকে হজে যাচ্ছেন ১৪৪৬১জন। আর এবছর রাজ্য থেকে মোট খাদিমুল হুজ্জাজ হিসেবে ১৯ জন সৌদি যাচ্ছেন, যার ফলে প্রায় প্রতি ৭৬১ জন হজযাত্রী প্রতি একজন খাদিমুল হুজ্জাজ যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে হজযাত্রীদের সঠিক পরিষেবা পেতে সমস্যা হবে এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে এই অব্যবস্থার জন্য কারা দায়ী তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে মোহাম্মদ নকি এবিষয়ে বলেন, ‘যে সমস্ত রাজ্যে সরকারি কর্মচারীরা কম আবেদন করেছেন সেই সব রাজ্যে এই সমস্যাটাই হয়েছে ।’ পাশাপাশি রাজ্য হজ কমিটির পক্ষ থেকে মোট ১৯ জন খাদিমুল হুজ্জাজ রাজ্যের হজযাত্রীদের সেবার জন্য সৌদি আরবে যাওয়ার কথা প্রকাশ্যে আসতেই বিভিন্ন মহলে সমালোচনার দানা বেঁধেছে। এর আগেও হজ যাত্রীদের ভিসা সমস্যা, ফ্লাইট পরিবর্তন, খাদিমুল হুজ্জাজ দেরিতে পৌঁছানো নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল রাজ্য হজ কমিটিকে। খাদিমুল হুজ্জাজ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকায় আবারও বিপাকে পড়ল রাজ্য হজ কমিটি। উল্লেখ্য, ২১ মে থেকে কিন্তু রাজ্যের হজ যাত্রীরা মদিনায় পৌঁছলেও তাদের নির্দেশনা ও দেখভালের দায়িত্বে থাকা খাদিমুল হুজ্জাজরা ভিসা না পাওয়ায় যেতে পারছিলেন না। যার ফলে মদিনায় বাংলা থেকে যে সব হজযাত্রী গিয়েছেন তারা সেখানে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। অবশেষে রাজ্য থেকে চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার খাদিমুল হুজ্জাজরা সৌদি পৌঁছান ।অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার হজযাত্রীদের জন্য নির্ধারিত সাতটি ফ্লাইটের সময়সূচি বদল করা হয়েছে। এই সব ফ্লাইটে মূলত যাওয়ার কথা বিহার ও ঝাড়খণ্ডের হজযাত্রীদের। তাদের সঙ্গে এসেছেন আত্মীরা। ফেরার ট্রেনের টিকিট বাতিল করতে হওয়ায় বাড়ি ফিরতে মুশকিলে পড়ছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct