সেখ মহম্মদ ইমরান, কেশপুর, আপনজন: নতুন পার্লামেন্ট ভবনের জন্য টাকা খরচ না করে বাংলার বকেয়া টাকা দেওয়া যেত বলে সরব অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক নতুন পার্লামেন্ট ভবন নির্মাণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খোঁচা দিয়ে বলেন সাংসদদের বসার জন্য ১৫০০ কোটি টাকা দিয়ে নতুন ভবনের জন্য ‘অপচয়’ না করে বাংলাকে দিলে অনেক ১০০ দিনের জব কার্ড হোল্ডারদের উপকার হতো। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর সাফ বার্তা, ২০ লাখ লোক কাজ করে বসে রয়েছে। কুড়ি হাজার কোটি (ভিস্তা প্রজেক্টের খরচা) টাকায় কমপক্ষে ৫০ লাখ লোক বাড়ি পেত। আপনি যদি এই কুড়ি হাজার কোটি টাকা অপচয় না করে, মানুষের কাজে লাগাতেন, তাহলে অনেকের উপকার হতো। ”অভিষেক এদিন আরো বলেন, কোনো সাংসদের তো বসতে অসুবিধা হচ্ছিল না পুরনো পার্লামেন্ট ভবনে। সারা বছরের কয়েকটা দিনের জন্য পার্লামেন্ট অধিবেশন বসে। তার জন্য এতো বড় আকারে পার্লামেন্ট ভবনের যৌক্তিকতা কোথায়? এর পাশাপাশি, সাংসদ ভবনের উদ্বোধন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মুকে আহ্বান না জানানোর বিষয় নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সরব হন অভিষেক।
রবিবার শালবনিতে রোড শো করে শালবনীর অন্তর্গত তমাল ব্রিজের নিকটস্থ জমি অধিগ্রহণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জমি সংক্রান্ত যে অর্থমূল্য ধার্য করা হয়েছিল কয়েক বছর আগে, সেই অর্থমূল্য বর্তমানে সময়ের জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে থেমে রয়েছে উন্নয়নের কাজ। স্থানীয় বাসিন্দারা এই সমস্যার সমাধানের জন্য আবেদন জানান অভিষেকের কাছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে নব জোয়ার যাত্রার দ্বিতীয় দিনে দলের কর্মীদের নিয়ে বৈঠক সেরে, চন্দ্রকোনা রোড, গড়বেতা হয়ে ক্ষুদিরাম বসুর পৈত্রিক ভিটে কেশপুরের মোহনীতে হাজির হয়েছিলেন অভিষেক ব্যানার্জি। পরে সেখান থেকে চন্দ্রকোনা টাউন হয়ে হাজির হন ঘাটালের বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগরের জন্ম ভিটেতে। তার আগে কেশপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন প্রসঙ্গে একাধিক প্রশ্ন তুললেন তিনি। গ্রামবাসীদের কাছে সমস্ত কাগজপত্র দেখা ও কথাবার্তা বলার পর রওনা দেন মহুবনী গ্রামের উদ্দেশ্যে। ক্ষুদিরামের পৈত্রিক ভিটেতে পৌঁছে ক্ষুদিরামের মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। উপস্থিত কচি কাঁচাদের চকলেট বিলি করেন তিনি। কথা বলেন-ক্ষুদিরাম বসুর পরিবারের বংশধরদের সঙ্গে। এরপরে সাংবাদিক সম্মেলনের অভিষেক ব্যানার্জি, ‘নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন হয়েছে বলে অনেকেই উৎফুল্ল। কিন্তু যে সংসদ ভবনের অধিবেশন রাষ্ট্রপতির ভাষণ দিয়ে শুরু হয় সেই রাষ্ট্রপতিকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যে জনজাতির প্রতিনিধি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু- এতদিন বলে আসছিলেন, তাকেই আমন্ত্রণ না জানিয়ে কি বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী? উনি বলছেন নারী ক্ষমতায়নের কথা, অথচ ওই মুহূর্তে দু কিলোমিটার দূরে মহিলা কুস্তিগীরদের টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। জনজাতির প্রতিনিধি রাষ্ট্রপতি অপমানিত। ” তিনি আরো বলেন, “হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে এই সমস্ত পরিবর্তন ও উদ্বোধন না করে যে সমস্ত মানুষের মাথায় ছাদ নেই তাদের দিতে পারতেন। তাছাড়া এত টাকা দিয়ে সংসদ ভবন উদ্বোধন করেই কি লাভ যেখানে বিরোধীদের কথা বলার সুযোগ নেই? আলোচনা না করেই যেখানে বিল পাস হয়ে যায়। মানুষ দেউলিয়া, সেটা না ভেবেই নিজের মতো করে আনন্দ উপভোগ করা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। ” তিনি প্রশ্ন তোলেন, সংসদ ভবনে ধর্মগুরুদের ভূমিকা কি? কোন মন্দির হলে ধর্মগুরুদের নিয়ে যান ক্ষতি নেই। সংসদ উদ্বোধনের তারা কেন? যে রাষ্ট্রপতি এই সংসদ ভবনের ভাষণ না দিলে অধিবেশন শুরু হয় না তাকেই আমন্ত্রণ করা হল না। আসলে এটার দ্বারা একটা ছোট্ট টিজার তিনি দিলেন, যে আগামী দিনে ধর্ম দিয়ে দেশ শাসন করবেন। ধর্মকে অস্ত্র করে এগোতে চাইছেন। কুড়ি হাজার কোটি টাকা এই ক্ষেত্রে খরচ না করে মানুষের জন্য খরচ করলে আজ ৫০ লক্ষ মানুষ বাড়ি পেত। বিজেপি প্রমাণ করল ওরা দানবিক, আমাদের সরকার মানবিক। প্রধানমন্ত্রী মানুষের প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। ”
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct