আপনজন ডেস্ক: বিরোধীদের সম্মিলিত বয়কটের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উদ্বোধন করলেন দেশের নতুন সংসদ ভবন। লোকসভার স্পিকারের আসনের সামনে তাকে পাশে নিয়েই প্রধানমন্ত্রী উদ্ঘাটন করেন সুরম্য এই স্থাপত্যের আবরণ। তারপর স্পিকারের আসনের পাশে স্থাপন করেন রত্নখচিত স্বর্ণদণ্ড, যার ঐতিহাসিক হস্তান্তরের দাবি ঘিরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। রোববার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ নতুন ভবনে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সাদা ধুতি–পাঞ্জাবির ওপর ঘিয়ে রঙের জওহর কোট ও গলায় উত্তরীয় নিয়ে প্রথমেই তিনি বসেন পূজায়। উল্লেখ, নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে আমন্ত্রন জানানো হয়নি। কিন্তু আমন্ত্রণ জানানো হয় বিভিন্ন সাধু ও সন্নাসীকে। তাদের পরিবৃত্তে প্রধানমন্ত্রী মোদি পূজার মাধমে নতুন সংসদ ভবনের সূচনা করেন। রামমন্দির উদ্বোধনের সময মোদিকে ষাষ্টাঙ্গে প্রণাম করতে দেখা গিয়েছিল। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তার সাক্ষী থাকলেন সাধু সন্নাসীরা। পূজাস্থলেই রাখা ছিল রত্নখচিত স্বর্ণদণ্ড ‘সেঙ্গল’, যা প্রয়াগরাজ (এলাহাবাদ) সংগ্রহশালা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে দিল্লি নতুন সংসদ ভবনে রাখা হবে বলে।
বিরোধীরা ইতিমধ্যেই ‘সেঙ্গল’কে ‘রাজদণ্ড’ বলতে শুরু করেছে। হিন্দুমতে তা শুদ্ধ করা হয়। তামিলনাড়ু থেকে আসা সন্ন্যাসীরা ওই সেঙ্গল তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর হাতে। সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে সঙ্গে করে প্রধানমন্ত্রী ওই সেঙ্গল নিয়ে যান লোকসভায়। সংসদ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে সেটি তিনি স্থাপন করেন স্পিকারের আসনের পাশে। তারপর শুরু হয় সর্বধর্ম প্রার্থনা। কুরআনের সূরা রহমান পড়তে শোনা যায়। পুরোনো সংসদ ভবন চত্বরেই গড়ে উঠেছে নতুন এই সংসদ ভবন। তৈরি করেছে টাটা গোষ্ঠী। প্রায় এক হাজার কোটি টাকা খরচ করে এই ভবন তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। বিতর্কের শুরুও সেই থেকে। নতুন সংসদ ভবন ও এর কাছাকাছি এলাকায় উন্নয়নকাজের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সেন্ট্রাল ভিস্তা’। এতে মোট ২৪ হাজার কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। আদৌ এর দরকার ছিল কি না, তা নিয়ে নানা মহল সরব হলেও প্রধানমন্ত্রী পিছু হটেননি। নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করেও বিতর্ক বহমান। সংসদের অভিভাবক রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে উদ্বোধন না করিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হওয়ায় দেশের অধিকাংশ বিরোধী দল এই অনুষ্ঠান বয়কট করে। নতুন ভবনের তিনটি প্রবেশদ্বারের নামকরণ হয়েছে ‘জ্ঞানদ্বার’, ‘শক্তিদ্বার’ ও ‘কর্মদ্বার’। মূল প্রবেশদ্বারে লেখা ‘সত্যমেব জয়তে’। জাতীয় পাখি ময়ূর ও জাতীয় ফুল পদ্মের ‘থিম’ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে লোকসভা ও রাজ্যসভার অভ্যন্তরীণ নকশায়। নতুন সংসদ ভবন তৈরিতে যাঁদের অবদান অনস্বীকার্য, আজ সেই শ্রমিকদের শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। ভারতের সংসদ ভবন তৈরি হয়েছিল ১৯২৭ সালে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের সংখ্যাও ক্রমে বেড়েছে। আরও বেড়ে যাওয়ার কথা। ৯৬ বছরের পুরোনো ওই ভবনে বর্ধিত সংসদ সদস্যদের স্থান সংকুলান কঠিন। বর্তমানে লোকসভার সদস্য সংখ্যা ৫৪৩, রাজ্যসভার ২৫০। নতুন সংসদ ভবনে লোকসভায় আসন রাখা হয়েছে ৮৮৮, ভবিষ্যতে যা বাড়িয়ে ১ হাজার ২৭২টি করা যাবে। রাজ্যসভায় এখন বসতে পারবেন ৩৮৪ জন। লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্যদের যুগ্ম অধিবেশন হতো পুরোনো সংসদ ভবনের ‘সেন্ট্রাল হলে’, যেখানে ভারতীয় সংবিধান রচিত হয়েছিল ও ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট যেখানে মধ্যরাত্রে ভাষণ দিয়েছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। নতুন ভবনে দুই কক্ষের সদস্যদের যুগ্ম অধিবেশন বসবে লোকসভায়। সেখানে ১ হাজার ২৮০ জন সদস্য একত্রে বসতে পারবেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct