আমি রবীন্দ্রনাথ হবো
শিবশঙ্কর দাস
বড় হয়ে তুমি কী হবে এই প্রশ্নের উত্তরে প্রায় সমস্ত বাচ্চাই চোখ বুঝে বলে ফেলে আমি ডাক্তার হব আমি ইঞ্জিনিয়ার হব আমি শিক্ষক হব আমি ম্যাজিস্ট্রেট হব। কিন্তু টিটো বোল্ডলি উত্তর দিল। “আমি রবীন্দ্রনাথ হবো। ”নরেন দাদু জিজ্ঞেস করলেন,”কেন? কেন রবীন্দ্রনাথ হবে? ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার প্রফেসর নয় কেন?টিটো বলল, বা-রে ডাক্তার প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার হতে গেলে তো অনেক পড়াশোনা করতে হবে আর রবীন্দ্রনাথ হলে তো আর স্কুল যেতে হবে না। আমিও রবীন্দ্রনাথের মতো স্কুলে যেতে চাই না। ”“কেন যেতে চাও না?”“স্কুল আমার ভালো লাগেনা। ”“কেন ভালো লাগে না?”“ভালো লাগে না, ভালো লাগে না” আসলে টিটো কিছুতেই স্কুলে যেতে চায় না। দুদিন গিয়েই সে স্কুল বন্ধ করে দেয়। এখনও পর্যন্ত তার দুটো স্কুল পরিবর্তন করা হয়ে গেছে। তৃতীয় স্কুলে কদিন যাবে তাই নিয়েই তার বাড়ির লোক চিন্তিত। কি তোর কথা শুনে নরেনদাদু হো হো করে হেসে উঠলেন। শুধু নরেনদাদু কেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত বগলা দাদু, বিষ্ণু দাদু, হরেন দাদু, টিনা দিদা, মৌমিতা দিদা, অন্য যারাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রত্যেকেই হেসে উঠলেন। শুধু একজন, টিটোর নিজের দাদু মঙ্গল মুখার্জি মুখ গম্ভীর করে রইলেন। মনে মনে বললেন, ব্যাটা তো আমার মতই ভাবে দেখছি। তবে উল্টো করে।ছোটবেলা মঙ্গলবাবুও ভাবতেন তিনি রবীন্দ্রনাথের মত মস্ত বড় কবি হবেন। খাতা পেন নিয়ে কবিতা লেখারও চেষ্টা করতেন। কবিতা লিখে দুই একজনকে দেখালে তারা বলতেন হবে হবে। তবে স্কুলের বাংলা মাস্টারমশাই শুধু বলেছিলেন,”এগুলো যদি কবিতা হয় তাহলে আমারটা হবে আরো ভালো কবিতা। ”বলেই তিনি জোরে জোরে চিৎকার করে বললেন,”আমার নাম গোপেশ আমার মাথায় পক্ক কেশ আমি আছি ভালো বেশ। ”এই শুনে ক্লাসের সবাই তার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হাসতে লাগলো। মঙ্গলবাবুরও লজ্জায় গাল লাল হয়ে উঠেছিল। তারপর থেকেই রবীন্দ্রনাথ হওয়ার শখ তার একটু একটু করে মিটে গেছিল। তবুও কী শখ মেটে! এখনো মঙ্গলবাবু একটু আধটু কবিতা লেখেন। তবে রবীন্দ্রনাথ হওয়ার জন্য নয় মনকে আনন্দে রাখার জন্যে। আজ কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী। প্রতিবারের মতো এবারেও বাড়িতে জন্ম জয়ন্তী পালনের আয়োজন করেছেন মঙ্গল মুখার্জি। রিটায়ার্ড লাইফ-এর সমস্ত বন্ধু এবং এলাকার উঠতিদের এই দিন বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানান। যে যেমন পারে গান, কবিতা পাঠ, আবৃত্তি করে এবং সবশেষে মিষ্টিমুখ করে বিদায় নেন। আজ অনুষ্ঠানে মঙ্গলের নাতি টিটো ছিল অনুষ্ঠানের সর্বশেষ শিল্পী। সে অনুষ্ঠানে বসে থেকে গান কবিতা এবং রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে সমস্ত কথা শুনেছে। শেষে একটা আবৃত্তি করেছে। টিটোর বয়স সবে চার পেরিয়েছে। আধো আধো গলায় তার আবৃত্তি শোনার পরেই তাকে কাছে টেনে নিয়ে সবাই নানা প্রশ্ন করতে লাগলো। টিটো সাংবাদিক সম্মেলনের মত করে সবার প্রশ্নের উত্তর হাসিমুখেই দিল। টিটোকে নিয়ে অনুষ্ঠানের শেষের মজাটা যেন অনুষ্ঠানের মাত্রা কে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মৌমিতা দিদা টিটোকে খপ করে ধরে কোলের মধ্যে নিয়ে গালে একটা চুমু খেয়ে বললেন,”ঠিক বলেছিস ভাই। কে পড়াশোনা করে? এখন শুধু খেলা আর খেলা। আবৃত্তি গান এসব তো করা যেতেই পারে। পড়াশুনা ক্যান্সেল। তুমি রবীন্দ্রনাথই হবে। তবে জানো তো রবীন্দ্রনাথ স্কুলে না গেলেও স্কুল কিন্তু রবীন্দ্রনাথের বাড়িতেই উঠে এসেছিল। আর অনেক অনেক বই কিন্তু তোমার ওই রবীন্দ্রনাথ পড়েছেন। তোমাকেও সেগুলো পড়তে হবে, পারবে তো। ”“হ্যাঁ পারব। ”“তাহলে তো তুমি নাঘ্ঘাত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হবে। ”“না, আমি রবীন্দ্রনাথই হবো। ”আবার জোর দিয়ে বলল টিটো। ”
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct