সেখ মহম্মদ ইমরান, শালবনি, আপনজন: শনিবার শালবনিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন দলের সর্বাধিনায়িকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের প্রার্থী বাছাইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেত্রী দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ নিয়ে নেতাদের কড়া বার্তা দেন। দলের প্রার্থী বাছাই করতে অভিষেকের নেতৃত্বে নবজোয়ার কর্মসূচিতেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অস্বস্তি এড়ানোর ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত নন তৃণমূল নেত্রী। সেকারণেই নিজে কড়া বার্তা দিয়ে দিলেন দলের কর্মীদের। মমতার সাফ কথা, বিরোধীদের অসাধু জোট রুখতে হলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে। মমতা বলে দেন,”তৃণমূল যদি নিজেদের মধ্যে ঝগড়া না করে, কেউ তৃণমূলকে হারাতে পারবে না।” তিনি এদিন বলেন,”অনেক সময় দেখা যায় বিধায়কের একটা মত হচ্ছে, ব্লক সভাপতির আরেক মত হচ্ছে, কিংবা জেলা পরিষদের সদস্যের একটা মত হচ্ছে। আর বুথ কমিটির আরেকটা মত হচ্ছে। গণতন্ত্রে দল বড় হলে ভিন্নমত হতেই পারে। দলের সিম্বল যেই পাক, সবাই মিলে তাঁকে সমর্থন করতে হবে।” এরপরই দলের জেলা নেতাদের নাম ধরে ধরে হুঁশিয়ারি দেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর হুঁশিয়ারি, “জুন-সুজয়কে বলব নিজেদের মধ্যে ঝামেলা মিটিয়ে নাও”। কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহাকেও নাম করে বার্তা দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলে দেন, ‘যা যা ঝামেলা মিটিয়ে নিতে হবে। অজিত মাইতি অনেক পুরনো, আমার দলের অনেক দিনের সহকর্মী। কেউ কেউ অজিতকে পাত্তা দেয় না। আবার অজিতেরও দোষ আছে, একটু দলবাজি করা স্বভাব আছে।’ এর পার গোটা জঙ্গলমহলে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দিয়ে কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। সবং নিয়ে দরাজ শংসাপত্র মানসকে। মানস ভূইঞাকে মমতার প্রশ্ন, ‘মানসদা শুধু সবং করলে চলবে? শুধু সবংয়েই মাদুরকাঠি, স্ট্যাচু, সুইমিং পুল, সবংয়েই সব... আরে জেলাটা তো আপনার। আপনি বাংলার মন্ত্রী। আমি মাদুরের একটা ক্লাস্টার করার কথা বলেছি। সেটা সবং আর পিংলার মাঝখানে করতে বলেছি।
২০০০ টাকার নোট নিয়ে মমতা বললেন, ‘২০০০ টাকা আপনার কাছে থাকলেও ব্যাঙ্ক জমা নিচ্ছে না। দোকানদারের কাছে গেলে, দোকানদার ভয়ে ২০০০ টাকার নোট নিচ্ছে না। এটা তাহলে আগে ভাবা উচিত ছিল না? ২০১৬ সালেই তো করলেন নোট বদল। তাহলে আজ আবার নোটবদল কেন? যদি করতেই হয়, তাহলে আগে অপশন তৈরি করে জনগণকে সুবিধা দিয়ে তারপর করবেন। আমার তো সংশয় হচ্ছে, কোনও একটি রাজনৈতিক দল এই টাকাটি মজুত করে রেখে দিয়েছে। আমি তো বাড়িতে অফিসে খুঁজে দেখলাম আটটা নোট বেরিয়েছে। অর্থাৎ, বুঝতেই পারছেন ওই নোট আমরা ব্যবহারই করি না। আমরা ছোট নোট বেশি ব্যবহার করি।’ মণিপুর নিয়ে মমতা বললেন, ‘আজ মণিপুরের অবস্থা দেখুন। এত লোক মারা গিয়েছে। কই, আজ পর্যন্ত তো কেউ যাননি (বিজেপির)। বলছে, পরে একদিন যাবে। কবে যাবে? সব শেষ হয়ে যাওয়ার পর? মণিপুরে রক্ত ঝরছে। আর কেউ কেউ নাচাগানা করে বেরাচ্ছে। এদিন আবার তিনি এনআরসি-র বিরুদ্ধে সরব হলেন। তিনি বললেন, ‘এখন বলছে এনআরসি করতে হবে। আমাকে চিঠি দিয়ে বলছে, আমিই একমাত্র টাস্ক ফোর্স করিনি। তিন চার দিন আগেই চিঠি এসেছে। কেন করব? আমি যদি টাস্ক ফোর্স করি, তাহলে সেই টাস্ক ফোর্সকে বলবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখতে কারা কারা অন্য দেশের। মানে কে হিন্দু আর কে মুসলমান। এই তো অবস্থা।’গতকলা রাতে রাজ্যের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার গাড়িতে কুড়মিদের হামলা নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তাঁর বক্তব্য, ”কুড়মিদের নাম নিয়ে বিজেপির স্লোগান তুলে এই কাজ করেছে বিজেপি। কুড়মিরা এই কাজ করতেই পারে না। এত বড় সাহস! আদিবাসী মেয়ের গায়ে হাত দিয়েছে! অভিষেকের কনভয়ে হামলার চেষ্টা করেছে! আমি সব দেখে নেব।” কুড়মিদের প্রতি কড়া বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, ”পুলিশ এসব নিয়ে যা করার, করবে।” এই ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী নতুন করে আদিবাসী উন্নয়ন বোর্ড গঠনের ঘোষণা করেন। জানান, ”ওই বোর্ডের মাথায় থাকব আমি নিজে, বীরবাহা হাঁসদা থাকবেন। সবাই মিলে কাজ করবে। আরও উন্নয়ন হবে আদিবাসী, কুড়মি।”
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct