এম মেহেদী সানি, হুগলি, আপনজন: মাধ্যমিকের মতো উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলেও জয়জয়কার হুগলীর খানাকুল এর নাবাবিয়া মিশনের। পিছিয়ে পড়া মুসলিম ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করার লক্ষ্যে আলহাজ্ব ফজলুর রহমান নাবাবিয়া মিশন প্রতিষ্ঠা করেন ২০০১ সালে । শহর থেকে অনেকটা দূরে প্রত্যন্ত গ্রামের মধ্যে একেবারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বাতাবরণে তিল তিল করে গড়ে ওঠা মুসলিম শিক্ষার বিকাশে নাবাবিয়া মিশন রাজ্যের শিক্ষা মানচিত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে । মিশনের সাধারণ সম্পাদক সাহিদ আকবর জানান, ‘এবছর মিশন থেকে ৩৬ জন আবাসিক ছাত্র-ছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল, সকল ছাত্রছাত্রী প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে । নাবাবিয়া মিশনে পড়াশনা করে এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে শাবনূর খাতুন ৪৫০ নম্বর পেয়েছে । শাবনূরের ফলাফলে নাবাবিয়া মিশন গর্বিত।’ বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র কৃষক পরিবারের মেয়ে শাবনূর ইঞ্জিনিয়ার অথবা আইপিএস অফিসার হতে চায়। অন্যান্যদের মধ্যে সাফিকা খাতুন ৪৩৩, সইদুল মোহাম্মদ ৪১৯, নাজমূল মিদ্যা ৪১৬, শাহনাজ পারভীন ৪১৫, শেখ আমিরুল ইসলাম ৪০০ নম্বর পেয়ে নাবাবিয়া মিশনের মুখ উজ্জ্বল করেছে । জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ির শহিদুল মোহাম্মদ প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত নাবাবিয়া মিশনে পড়াশোনা করেছে, ডাক্তার হয়ে সমাজ সেবা করার ইচ্ছে রয়েছে সহিদুলের ।
শিক্ষার্থীদের সাফল্যে সম্পাদক সাহিদ আকবর সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকে কৃতি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমাদের গর্ব প্রায় আড়াইশো ছাত্র-ছাত্রী আমাদের এখান থেকে পড়াশোনা করে ডাক্তারী পড়ার সুযোগ পেয়েছে । পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে আমাদের নাবাবিয়া মিশনের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আলহামদুলিল্লাহ পাবেন । রাজ্য তথা রাজ্যের বাইরে এবং ভারতবর্ষ সহ পৃথিবীর ১২টি দেশে নাবাবিয়া মিশনের ছেলেমেয়েরা সুপ্রতিষ্ঠিত।’ নাবাবিয়া মিশনের সাফল্যের খতিয়ান সম্পর্কে শাহিদ আকবর ‘আপনজন’কে জানান, ‘গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় দুজন রাজ্যে নবম এবং একজন দশম স্থান অধিকার করে প্রথম দশে । সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছি ।’ পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য দুস্থ পরিবারের ছেলে-মেয়েদের কাছে অর্থ যাতে প্রতিবন্ধকতা না হয় সে বিষয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন শাহিদ আকবর । জানা গিয়েছে হুগলী জেলার খানাকুল এর প্রত্যন্ত গ্রাম মাইনানের গুটিকয়েক শিক্ষার্থীদের নিয়ে পথ চলা শুরু নাবাবিয়া মিশনের। আজ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় ৯০০ ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে পড়াশোনা করছে। বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল, এই মিশনে ছাত্রীদের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক এবং সুরক্ষিত ব্যবস্থা রয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ছেলেমেয়েরা এখানে পড়াশোনা করে, একদম জলপাইগুড়ি,মালদা, মুর্শিদাবাদ সহ উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গের সবথেকে বেশি বাঁকুড়া জেলা এবং তারপরে মেদিনীপুর জেলার ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করে। সম্পাদকের কথায় আমরা আজ থেকে যদি ১৫ বছর আগে চলে যাই তাহলে আমরা সকলে শুনতে অভ্যস্ত ছিলাম খ্রিস্টান মিশন, বৌদ্ধ মিশন, রামকৃষ্ণ মিশন। তারপর আমাদের মুসলিমদের মধ্যে আজকে যেসমস্ত মিশনারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হয়েছে তার মধ্যে নাবাবিয়া মিশনের ছাত্রছাত্রীরা সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আদর্শে আদর্শিত হয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক প্রভৃতি কাজের মধ্যে যুক্ত হচ্ছে। রসুলের আদর্শে এবং ফরজে আইন শিক্ষার মধ্যে দিয়ে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct