পশ্চিমবাংলায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন। বছরের অন্য সময়ে সাধারণ মানুষের নানাবিধ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক দলের নেতাদের দেখা না পাবার অভিযোগ থাকলেও ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের নিজেদের কায়দায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। শুরু হয়েছে প্রতিশ্রুতির বন্যা। শাসকের বিরুদ্ধে দলীয় প্রচারে সরকারি অর্থ ব্যয়ের অভিযোগের সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকার মানুষ নানা বঞ্চনার অভিযোগও উঠে আসছে। লিখেছেন সনাতন পাল।
আয় ভোটার আয়, ভোট দিয়ে যা, মাছ কুটলে মুড়ো দিবো, গাই বিয়োলে দুধ দিবো, দুধ খেতে বাটি দিবো.......যদুর কপালে আমায় ভোট দিয়ে যা...... আমি ভোটেরও লাগিয়া ভিখারি সাজিনু, ফিরিমু গো দ্বারে দ্বারে ......’ প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী শ্রদ্ধেয় হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সেই কবে কীর্তনের সুরে গানটি গেয়ে গেছেন,যে গান ভোট এলে বিশেষ করে পঞ্চায়েত ভোট এলেই ভীষণ ভাবে আমাদের মনে নাড়া দেয়। এই গানের প্রতিটি কথা ও কীর্তনের সুর এবং কণ্ঠ যে রসবোধ সৃষ্টি করেছে,সেটা বিভিন্ন ঘটনা-উপ ঘটনার আলোকে বর্তমান সময়ের ভোট রাজনীতির সাথে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে বলেই এই লেখারটির অবতারণা।
পশ্চিমবাংলায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন। বছরের অন্য সময়ে সাধারণ মানুষের নানাবিধ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক দলের নেতাদের দেখা না পাবার অভিযোগ থাকলেও ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের নিজেদের কায়দায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। শুরু হয়েছে প্রতিশ্রুতির বন্যা। শাসকের বিরুদ্ধে দলীয় প্রচারে সরকারি অর্থ ব্যয়ের অভিযোগের সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকার মানুষ নানা বঞ্চনার অভিযোগও উঠে আসছে। মানূষ স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার যন্ত্রণার কথা বলছেন। এবারে দুর্নীতির অভিযোগটা অতিরিক্ত মাত্রা যোগ করেছে। মানুষের ক্ষোভকে চাপা দিতে তাঁদের কাছে নতুন আঙ্গিকে আবার প্রতিশ্রুতি আসতে শুরু করেছে। নির্বাচিত জন প্রতিনিধিরা যদি বিগত দিনের সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারতেন, তাহলে হয়তো এবারে অনেক কাজই প্রতিশ্রুতির তালিকায় আসত না। চারিদিকে শাসক বিরোধী- তরজা তুঙ্গে উঠতে শুরু করেছে। মাঝখানে পড়েছেন নেতাদের ডিপোজিট মানি সেই সাধারণ মানুষ। কোন্ দলের প্রার্থীকে ভরসা করা যায়, এটা তাঁরা কাজের ফাঁকে এখন থেকেই ভাবতে শুরু করেছেন। বর্তমান সময়ের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অতীতের অভিজ্ঞতা অনেকটাই সহায়ক হবে বলে মনে হয়। কারণ মানুষের সামনে যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষণ এলেই তাঁদের অতীত অভিজ্ঞতা বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। সমাজের অধিকাংশ মানুষে সমস্ত সিদ্ধান্তই যে মধুময় সুখের ভবিষ্যত লাভের জন্য গ্রহণ করে থাকেন, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ একথার বাস্তব ভিত্তি সকলের মধ্যেই অন্তর্নিহিত রয়েছে। নিজের মন কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলেই সেই সহজ উত্তরটা বেরিয়ে আসবে। সব মানুষই ভবিষ্যত ভালো রাখার চেষ্টা করে থাকেন, এটাই মানুষের সহজাত স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। এতে অন্যায়ের কিছু নেই। কিন্তু ভবিষ্যত ভালো করার পন্থাটা যেন ন্যায়ের গর্ভ থেকেই জন্ম নেয়, সেটা আমাদের সকলের মাথায় রাখা দরকার। তা না হলে যদি যে কোনো উপায় অবলম্বন করে ভবিষ্যত সুখকর করার মানসিক স্থিতি তৈরি হয়, তাহলে সুখের পরিবর্তে নিজের জন্য কাঁটা বৃক্ষই রোপন করা হবে বলেই মনে হয়। অন্যায়ের পথ ধরে সুখের রাজপ্রাসাদে পৌঁছানো মানসিক স্থিতি তৈরি হলে তার দ্বারা সমাজে যে কলুষ বৃত্তি জন্ম নেবে এবং সেই জঞ্জালে আগামী প্রজন্মের পথ চলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে।
আমরা বর্তমান সময়ে ভবিষ্যতের জন্য যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকি, তা ঠিক নাও হতে পারে। কারণ আমাদের কাছে ভবিষ্যতটাই অজানা। সুতরাং অজানা বিষয়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত নিশ্চিত সঠিক নাও হতে পারে। বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষ নিজেদের ভালোর জন্যই পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচিত করেছিলেন। রাজনৈতিক দল গুলির পক্ষ থেকে দেওয়া উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি গুলিও তাঁরা বিশ্বাস করেছিলেন। কিন্তু ভোটে জেতার পরে তাঁরা সবাই কি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন? যদি তা না করে থাকেন, তাহলে সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কেন? শুধুই কি ভোটে জেতার জন্য ! নাকি নিজেদের আখের গোছানোর জন্য? আর যদি প্রতিশ্রুতি পূরণ করাই লক্ষ্য হয়ে থাকে,তাহলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিশ্রুতি পূরণ না হবার কথা উঠে আসছে কেন? বিগত বছর গুলির ছবি সহ বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের দুর্দশার কথা গণমাধ্যমে উঠে আসছে, আমরা সে সব কথা জানছি। কোথাও একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় হাঁটু জল- মানুষ বছরের পর বছর জল-যন্ত্রণা ভোগ করছেন। আবার কোথাও ভাঙা রাস্তায় টোটো উল্টে মানুষ যখম হচ্ছে! কোথাও লাইটের সমস্যা। কোথাও নদী ভাঙনের সমস্যা। কোথাও নোংরা জল জমে মশা সেখানে মনের সুখে বংশ বিস্তার করছে। সেই মশার ডিম গুলি নষ্ট করতে পর্যাপ্ত স্প্রে নেই। ফলে বিভিন্ন সময় ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গুতে আক্রান্তের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। শহরের চেয়ে গ্রামে স্কুলছুট বেশি। শিশুরা মাতৃগর্ভ থেকেই অপুষ্টিতে ভুগছে। মায়েরা গর্ভ ধারণ করতে পারছেন না,সময়ের আগেই প্রসব করছেন। ফলে প্রিম্যাচিওর শিশুর জন্ম হচ্ছে। গ্রামের বহু সরকারি স্কুলের পরিকাঠানো ভালো নয়। কৃষকরা সফলের দাম পাচ্ছেন না। সারের কালো বাজারি হচ্ছে। এই সমস্ত নানা বিধ সমস্যা আজও জলন্ত। এই সমস্যা গুলির সুষ্ঠ সমাধান তখনই হবে,যখন রাজনীতিটা দলীয় রাজনীতির স্বার্থে না হয়ে মানুষের স্বার্থে হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct