সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: নবান্নে মঙ্গলবার অরবিন্দ কেজরিওয়ালেদের সঙ্গে বৈঠক করার পরে সাংবাদিক বৈঠক করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ওই সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবৎ মান। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, বিরোধীরা একজোট হয়েছে। বিজেপি’র পতন হবেই। তিনি বলেন, লোকসভার আগে রাজ্যসভাতেও হার হবে বিজেপির। কড়া প্রতিক্রিয়া দেন কেন্দ্রের আনা নয়া অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধেও। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও কেন্দ্র সেই রায়ের বিরোধিতা করে নয়া অর্ডিন্যান্স জারি করেছে। সেই অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতা করা হবে। বলেন, এই বিরোধিতাই হবে বিজেপিকে রাজ্যসভায় হারানোর হাতিয়ার। মমতা বলেন, বাঁকুড়ায় নবজোয়ার কর্মসূচিতে ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে ১ দিন সময় না দিয়েই তলব করা হয়েছে। বলেন, তিনি দিল্লি ও পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর পাশে আছেন কারণ তিনি নিজে ও বাংলা আক্রান্ত। তাঁর কটাক্ষ, বিজেপি ও বিজেপি শাসিত কেন্দ্র মানেই ‘অর্ডিন্যাস- গভর্নর- লেটার’ দিয়ে অবিজেপি শাসিত রাজ্যকে হেনস্তা। ভোটের আগে এনআরসি ইস্যুতে গেরুয়া শিবির রাজনীতি করে বলেও অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। আরও বলেন, বিজেপি সরকারের আমলে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে সংবাদমাধ্যম বা গণতন্ত্র কিছুই সুরক্ষিত নয়। তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে কেন্দ্রীয় একজেন্সিকে ব্যবহার করা হয়। এদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যে কোনও দিন সংবিধান ও দেশের নাম পরিবর্তন করে দিতে পারে কেন্দ্র। তাঁর অভিযোগ, প্রতিটি অবিজেপি রাজ্যের ওপর কেন্দ্র নিয়েছে বুলডোজার নীতি। কটাক্ষ, ‘ডবল ইঞ্জিন আসলে ট্রাবল ও টেরবল ইঞ্জিন সরকার’। রাজ্য ধ্বংসের চক্রান্ত করা হচ্ছে দাবি করে মমতা’র বার্তা, বিজেপিকে একটি ভোটও নয়। এদিন ২হাজার টাকার নোট ইস্যুতেও সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। সরব হন মণিপুর ইস্যুতে। বলেন, মণিপুর এখনও অশান্ত। তবুও সেখানে বিজেপির কেউ যায়নি। কড়া বার্তা, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে বিজেপির বিরুদ্ধে একজোটে লড়াই হবে দেশ জুড়ে। গেরুয়া শিবিরের পতন নিশ্চিত। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশ তখনই প্রথম স্থানে আসবে যখন কেন্দ্রে নিঃস্বার্থ সরকার বসবে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যসভায় বিজেপির হারই হবে ২০২৪ সালের আগে সেমি ফাইনাল। দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতা দখলে রাতের অন্ধকারে বিশেষ অধ্যাদেশ নিয়ে এসেছে মোদি সরকার। আর ওই অধ্যাদেশের বিরোধিতায় ক্রমশই সুর চড়াচ্ছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। মঙ্গলবার নবান্নে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরে ফের একবার ইডি, সিবিআই সহ কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেন তিনি। ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন, ‘জনতার ভোটে সরকার গঠন করতে না পেরে বিরোধী দলের সরকার ফেলতে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে অপব্যবহার করা হচ্ছে। তাদেরকে দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। আসলে গণতন্ত্রকে খুন করছে বিজেপি সরকার।
’গত ১১ মে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, দিল্লি সরকারের অধীনস্ত আধিকারিকদের নিয়োগ ও বদলি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে রাজধানীর বাসিন্দাদের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের। কিন্তু শীর্ষ আদালতের ওই নির্দেশ কার্যকর করা যাতে না যায় তার জন্য কোমর কষে ঝাঁপায় কেন্দ্রীয় সরকার। গত শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ জাতীয় রাজধানী সিভিল সার্ভিসেস কর্তৃপক্ষ গঠনের অধ্যাদেশ জারি করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নয়া কর্তৃপক্ষই আমলাদের নিয়োগ ও বদলির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। যদি কারও নিয়োগ নিয়ে কর্তৃপক্ষ সহমতে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দিল্লির উপরাজ্যপাল। দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতা নিয়ে বিজেপি সরকারের আনা অধ্যাদেশ নিয়ে অবিজেপি দলগুলির সমর্থন আদায়ে উদ্যোগী হয়েছেন আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল। নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘শীর্ষ আদালত নির্দেশ দেওয়া সত্বেও দিল্লির আমলাদের বদলি ও পোস্টিং সংক্রান্ত ক্ষমতা অবৈধভাবে নিজেদের হাতে রাখতে উদ্যোগী হয়েছে বিজেপি সরকার। তাই শীর্ষ আদালতে গ্রীষ্মের ছুটি হওয়ার দিনই রাতের অন্ধকারে অধ্যাদেশ জারি করেছে। যাতে ওই অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ আনা না যায়। কিন্তু বিজেপিকে সহজে জিততে দেব না। রাজ্যসভায় ওই অধ্যাদেশ নিয়ে ভোটাভুটিতে বিজেপিকে হারিয়ে স্বৈরাচারী সরকারকে যোগ্য জবাব দেওয়ার সুবর্ণসুযোগ এসেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct