এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: ‘আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যায়তন থেকে অচলায়তনে পরিণত হয়েছে’ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এমনই দাবি তুলে রাজ্যপাল তথা আচার্যের কাছে দশ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেছে৷ ছাত্র ছাত্রীরা স্মারকলিপিতে লিখেছেন ‘একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যতটা দুরবস্থা হতে পারে আলিয়া এখন সেই পর্যায়ে। এই সমস্যা এক-দু’দিনের নয়, দীর্ঘদিন ধরে পুঞ্জীভূত সমস্যা। দীর্ঘদিনের জমা হওয়া শ্যাওলা যেমন নদীর গতিপথ বন্ধ করে দেয়, আলিয়ার সমস্যা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে বন্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।’আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্র ছাত্রীদের দাবি, উপাচার্য হীন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় চরম সমস্যার মধ্যে ভুগছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যাক ভিজিট না করায় বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ইউজিসির অনুমোদন বাতিলের আশঙ্কা করছে আলিয়ার শিক্ষার্থীরা৷ রাজ্য সরকার প্রত্যেক বছর ইউনিভার্সিটি উন্নয়ণ বাবদ অর্থ বরাদ্দ করেন, কিন্তু দীর্ঘ তিন বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও উন্নয়ন হয়নি বলেও অভিযোগ ছাত্র-ছাত্রীদের৷ তাদের আরও অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে ২৯৭ জনের শিক্ষক পদ তৈরি হয়। তারমধ্যে এই পর্যন্ত নিয়োগ হয়েছে প্রায় ১৭২ জনের মতো। এখনও ১২৫টি শূন্যপদে নিয়োগ বাকি। বঞ্চিত শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষাকর্মী, বেহাল দশা শিক্ষার। পাশাপাশি বিল্ডিং পরিকাঠামোর অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারছে না সোশ্যাল সায়েন্স-এর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন, দর্শন, সমাজবিদ্যা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি। এই সরকারের আমলে ১১ বছরে মাত্র ৩৮ জন অধ্যাপক নিয়োগ হয়েছে বলে ওই স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে৷
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় মোট পড়ুয়া প্রায় সাত হাজার, সেখানে হোস্টেলের সুযোগ পায় প্রায় ১৩০০-র মতো শিক্ষার্থী। পার্কসার্কাস ও তালতলা ক্যাম্পাসের জন্য কোনও হোস্টেল ও খেলার মাঠ নেই। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত ভর্তি হয় প্রান্তিক জেলার দরিদ্র মেধাবী সংখ্যালঘু পড়ুয়ারা। তাহলে এদের হোস্টেল থেকে বঞ্চিত করে কি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না? সেই প্রশ্ন তোলেন ছাত্ররা। তাদের দাবি, ছাত্ররা দফায় দফায় আন্দোলন করলেও তাদের সাথে বসেনি সরকার। পাশাপাশি ১৭৮০ সালে ওয়ারেন হেস্টিং সংখ্যালঘু ছাত্রদের শিক্ষার জন্য কলকাতা মাদ্রাসা গঠন করেন। দীর্ঘ ২৪৩ বছরের এই প্রতিষ্ঠানের নেই সরকারি ভাবে মাইনোরিটি স্ট্যাটাস জনিত স্বীকৃতি। তালতলায় অবস্থিত হ্যারিটেজ ক্যাম্পাসটি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নেই পড়াশোনার পরিবেশ।’ রাজ্যপালকে দেওয়া স্মারকলিপিতে ছাত্রছাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, ‘১৪ বছরে হয়নি কনভোকেশন অনুষ্ঠান, হোস্টেল কেন্দ্রিক অভিযোগের শেষ নেই, হচ্ছে রেগিং, আসন এলোটম্যান্টের ক্ষেত্রে স্বজন পোষণ, প্রচুর অবৈধ ছাত্র থাকে, ফলে বঞ্চিত হচ্ছে যোগ্য ছাত্ররা। ছাত্র গবেষক রা বঞ্চিত বিভিন্ন স্কলারশিপ ও ফেলোশিপ থেকে।’আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মহলের একাংশ আক্ষেপের সুরে জানান, ‘বঞ্চনার আর এক নাম আলিয়া ইউনিভার্সিটি। পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘুরা কিছুটা হলেও আলিয়াকে কেন্দ্র করে সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে শুরু করেছিল, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভঙ্গুর দশা আবার পিছিয়ে দিচ্ছে মেধাবী সংখ্যালঘু ছাত্রদের।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসাবে রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি রক্ষা করার আবেদন জানিয়েছেন ছাত্র-ছাত্রীরা৷
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct