কয়েকটা দিন কী নাটকীয়তার মধ্য দিয়েই না কাটল? টান টান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে পিটিআই নেতা ইমরান খানকে মঙ্গলবার ইসলামাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হলো আর আদালতের নাটকীয় রায়ে ছাড়া পেয়ে শুক্রবার রাতেই হাজার হাজার সমর্থকের হর্ষধ্বনি মধ্য দিয়ে বিজয়ীর বেশে তিনি লাহোরের বাড়িতে ফিরলেন। লিখেছেন আব্বাস নাসির।
কয়েকটা দিন কী নাটকীয়তার মধ্য দিয়েই না কাটল? টান টান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে পিটিআই নেতা ইমরান খানকে মঙ্গলবার ইসলামাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হলো আর আদালতের নাটকীয় রায়ে ছাড়া পেয়ে শুক্রবার রাতেই হাজার হাজার সমর্থকের হর্ষধ্বনি মধ্য দিয়ে বিজয়ীর বেশে তিনি লাহোরের বাড়িতে ফিরলেন। সম্প্রতি ইমরান খানের ওপর যে হামলা হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল এবং তাতে ব্যর্থ হয়ে এখনো সে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে; আর এই হত্যাচেষ্টার পেছনে আছেন সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ে কর্তব্যরত একজন মেজর জেনারেল।ইমরান খানের গ্রেপ্তারের পর পাকিস্তানজুড়ে তাঁর সমর্থকদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পুড়িয়ে দেওয়া পুলিশের একটি গাড়ির সামনে এক বিক্ষোভকারীর বিজয় চিহ্ন প্রদর্শন। ৯ মে, করাচি। ইমরানের এই অভিযোগকে তাঁর গ্রেপ্তারের আসল কারণ বলে বিশ্লেষকেরা মনে করে আসছেন। সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে জামিনে থাকাকালে গ্রেপ্তার না করার নির্দেশ দিয়ে যে রক্ষাকবচ দিয়েছেন, সেটি পেয়ে তিনি এবার সরাসরি সেনাপ্রধানের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। ইমরান খান সর্বশক্তি দিয়ে বর্তমান সেনাপ্রধানের নিয়োগ ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে খবরে বলা হয়েছে। ইমরান বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় এলে সেনাপ্রধানকে সরিয়ে দিতে পারেন, এমন ভয় থেকেই সেনাপ্রধান রাজনীতি থেকে ইমরানকে সরিয়ে দিতে চান। ইমরান বলেছেন, ‘তিনি ভাবছেন আমি তাঁকে সরিয়ে দেব, কিন্তু আমার সে ধরনের কোনো পরিকল্পনা নেই। ’গত বুধবারের গন্ডগোলের মধ্যে সংগঠিত টাইগার ফোর্স ক্যাডার এবং পিটিআই সমর্থকদের সরকারি ভবনগুলোতে তছনছ করা, সামরিক স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া, এমনকি লাহোরে একজন কোর কমান্ডারের বাসভবনে ঢুকে ভাঙচুর চালানোর পর একটি প্রশ্নই সবার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আমার এক বন্ধু আমাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তাহলে কি ১৯৭৭ কিংবা ১৯৯৯ ফিরে আসছে?’ তিনি বলছিলেন, ইমরান খান সামরিক বাহিনীর দিকে অভিযোগের আঙুল তোলার পর সেই অবস্থা ফিরে আসার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কেননা এটি পরিষ্কার, লড়াইরত দুজনের যেকোনো একজনই শেষমেশ টিকে থাকবেন। একসঙ্গে দুজন দাঁড়িয়ে থাকার কথা নয়। গত সপ্তাহান্তে পরিষ্কার হয়েছে, শুধু রাজপথেই ইমরানের সমর্থকদের বিপুল শক্তি আছে তা নয়, বরং তাঁর পক্ষে সমর্থন জোগানোর মতো প্রধান প্রধান প্রতিষ্ঠানও আছে। আদালত যখন তাঁকে পুরোনো মামলা থেকে নিষ্কৃতি ও নতুন মামলার ঝক্কি থেকে রক্ষা করছিলেন, তখনই রাষ্ট্রের ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠানে বিভক্তি থাকার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। যুক্তরাজ্য ও কানাডায় অবস্থানরত অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ও মেজর পদমর্যাদার কর্মকর্তারা যখন ইউটিউব লাইভে এসে বেসামরিক বিক্ষোভকারীদের সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বাড়িতে গিয়ে চড়াও হতে বলছিলেন, এমনকি বিক্ষোভকারীদের উজ্জীবিত করে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখনই সবার মনে হচ্ছিল, ইমরান সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থার ভেতর থেকেও তথ্য ও সমর্থন পাচ্ছিলেন। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান এটি ইমরানের কৃতিত্ব অথবা দোষ যা-ই বলুন না কেন, তিনি যে গোটা পরিস্থিতিকে মেরুকরণ করতে পেরেছেন এবং জনগণ ও প্রতিষ্ঠানের একটি বিরাট অংশকে জীবন বাজি রেখে তাঁকে সমর্থন করার মতো করে তুলতে পেরেছেন, সেটি বিরাট ব্যাপার। তাঁর জনতুষ্টিবাদী রাজনীতি পাকিস্তানের কথিত এস্টাবলিশমেন্টের ভেতরে থাকা অনেককে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং তাঁরাই ভেতরকার ‘তথ্য’ জনগণের সামনে তুলে ধরছেন। এতে ইমরানবিরোধী রাজনীতিকেরা ‘চোর-ডাকু’ হিসেবে জনসমক্ষে চিত্রায়িত হচ্ছেন এবং ইমরানকে আরও ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। এতে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর প্রভাব দৃশ্যত কমতে শুরু করেছে। এটি সাধারণ হিসাব অনুযায়ী দেশ ও সমাজের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে এবং একটি উন্নত, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা জাগাবে। ইমরানের জামিন পাওয়ার ঘটনায় গণতন্ত্রপন্থী জনগণ যেভাবে উজ্জীবিত হয়েছে, তা দেশটির রাজনীতিতে ‘ডিপ স্টেট’-এর খবরদারি কমানোর ক্ষেত্রে যে বিরাট ভূমিকা রাখবে, তা প্রায় নিশ্চিত।
সৌ: প্র: আ:
ডন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত আব্বাস নাসির পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও ডন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct