“মা” শব্দটির আক্ষরিক ব্যাপ্তি খুবই ছোট, কিন্তু সুবিশাল এর পরিমন্ডল। ভ্রুণ অবস্থা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একমুহূর্ত এই মানুষটিকে বাদ দিয়ে থাকা যায়না।”মা” একটি অনুভূতির নাম। ওঁ শব্দের মধ্যে যে গভীরতা থাকে, মা শব্দটির উচ্চারণেও সেই ধ্বনি মন্দ্রিত হয়। রক্তের সম্পর্ক বললেই যেমন আমাদের কাছে বংশপরিচয়ের বিষয়টি পরিস্ফুট হয়, তেমন-ই”মা” মানেই নাড়ির টান। জন্মের সময় যে নাড়ি ছিন্ন করে দুটি অবিচ্ছেদ্য অস্তিত্বকে বাস্তব পৃথিবীর উপযুক্ত করা হয়, সেই নাড়ির টান। দূরত্ব বাড়লেও টান কমেনা বরং আরও গভীর হয়। শিরায়-মজ্জায় ‘মা’ এর অস্তিত্ব সর্বদা অনুরণিত হয়। আসন্ন মাতৃ দিবস উপলক্ষে বিশেষ প্রতিবেদনটি লিখেছেন শিক্ষিকা পিংকি দাশ। সৌজন্যে: অনুসন্ধান কলকাতা
ক্লাস ফাইভের একটি মেয়ে। দিদিমনি বলেছেন”তোমার জীবনের প্রিয় মানুষ” সম্মন্ধে লিখতে। ছোট্ট মেয়েটি লিখে ফেলে, তার মায়ের সম্মন্ধে। ছোট থেকে তাকেই সে সবচেয়ে কাছে দেখেছে। তার ভালো-মন্দ সবকিছুতেই তিনি জড়িয়ে থাকেন, আদরে শাসনে লালন পালন করেন। একটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করলাম। “মা” শব্দটির আক্ষরিক ব্যাপ্তি খুবই ছোট, কিন্তু সুবিশাল এর পরিমন্ডল। ভ্রুণ অবস্থা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একমুহূর্ত এই মানুষটিকে বাদ দিয়ে থাকা যায়না।”মা” একটি অনুভূতির নাম। ওঁ শব্দের মধ্যে যে গভীরতা থাকে, মা শব্দটির উচ্চারণেও সেই ধ্বনি মন্দ্রিত হয়। রক্তের সম্পর্ক বললেই যেমন আমাদের কাছে বংশপরিচয়ের বিষয়টি পরিস্ফুট হয়, তেমন-ই”মা” মানেই নাড়ির টান। জন্মের সময় যে নাড়ি ছিন্ন করে দুটি অবিচ্ছেদ্য অস্তিত্বকে বাস্তব পৃথিবীর উপযুক্ত করা হয়, সেই নাড়ির টান। দূরত্ব বাড়লেও টান কমেনা বরং আরও গভীর হয়। শিরায়-মজ্জায় ‘মা’ এর অস্তিত্ব সর্বদা অনুরণিত হয়। নাড়ি কেটে শিশুকে পৃথিবীতে জন্ম দেওয়াটা যেমন মায়েদের সহজাত প্রক্রিয়া, ঠিক তেমনই শিশুকে বড় করার সময়ে তাদের কাছে টানা এবং দূরে যেতে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় মায়েরা অত্যন্ত নিপুণভাবে সিদ্ধহস্ত। কোন সময় তার যত্নের প্রয়োজন আর কখনই-বা তাকে স্বাবলম্বী হওয়ার রাস্তায় এগিয়ে দিতে হবে এটা কেবলমাত্র একজন মা-ই জানেন, মা-ই পারেন। অতএব দূরত্ব বাড়লেই যে মায়ের প্রতি টান অথবা মায়ের সন্তানের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশের তরতম্য হয় এমনটা নয়। সনাতন ভারতবর্ষে”বাণপ্রস্থ” ধারণাটি একটি অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত চিন্তাভাবনার ফসল। সময়ের সাথে মা বাবার বয়স বৃদ্ধি পায়। ধীরে ধীরে কমে যায় কর্মক্ষমতা। তাই উত্তরাধিকারের হাতে আগামীর দায়িত্ব সোঁপে দিয়ে কিছুটা মুক্তির স্বাদ পাওয়ার উদ্যেশেই অন্যত্র যেতেন তাঁরা। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পেতো - একটি হলো নবপ্রজন্মকে এগিয়ে যেতে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া এবং তাদের কর্মকান্ডের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখা যে তারা নিশ্চয়ই তাদের দায়িত্ব সুচারু ভাবে সম্পাদন করতে সক্ষম হবে; দ্বিতীয়টি হলো ত্যাগের ভাবনা- যেটি অত্যন্ত প্রয়োজন- যে সন্তানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে এতদিন বাবা-মায়েরা ছিলেন, সময় হলে তাদেরকেও স্বচ্ছন্দে ছেড়ে যাওয়ার রীতি।
এর ফলে পারষ্পরিক বোঝাপড়া, সম্মান সবকিছুই সুন্দরভাবে বজায় থাকে। বর্তমান সমাজে এর পাশাপাশি যে বিষয়টি পরিলক্ষিত হয় সেটি হলো বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও ভালোবাসার প্রকাশ স্বরূপ তাঁদেরকে নিজেদের যত্নে রেখে ভালো রাখার অবিরাম প্রয়াস। বর্তমান ভারতবর্ষে বিদেশে পড়াশুনার চাহিদা আগের থেকে ৬৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও আছে চাকরির উদ্দেশ্য অনত্র গমন। সুতরাং বাবা মায়েরা বাধ্য হচ্ছেন একা থাকতে। সন্তানের মঙ্গলই যে তাদের একান্ত কাম্য। যে ছেলে মেয়েরা বিদেশে থাকছেন তারাও যে অত্যন্ত স্বস্তিতে-শান্তিতে জীবনযাপন করেন এমনটা নয়। সবসময়েই তাদের বাবা-মায়ের জন্য চিন্তা থাকে। দুশ্চিন্তা থাকে তাঁদের স্বাস্থের জন্য, যা বয়সের ভরে অনেক ক্ষেত্রেই নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়। নাড়ির টান তো! তা সে সুদুর আমেরিকাতেই থাকুক বা জাপানে, অস্ট্রেলিয়াতেই থাকুক বা রাশিয়ায়। ঘড়ির কাটার মতো অহরহ বয়ে চলে সেই সুপ্ত টানের শ্রোত যা বায়ুর থেকেও দ্রুতগামী, সমুদ্রস্রোতের থেকেও গভীর এবং হিমবাহের থেকেও দৃঢ়। তাই অযথা আশঙ্কা নয়, নবপ্রজন্মক আগামীর পথে এগিয়ে দিতে”বৃদ্ধাশ্রম” একটি নিরাপদ আশ্রয় হতে পারে। সমবয়সষ্ক এবং প্রায় সমমনষ্ক সঙ্গী-সাথীদের সাহচর্য নিরাপত্তাহীনতার মতো অত্যন্ত মারণদায়ক ক্ষয়রোগক প্রতিহত করতে পারে। আবার একইভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত সন্তান সন্ততিরা কিছুটা স্বস্তিতে এবং শান্তিতে নিজেদের জীবনজীবিকা অতিবাহিত করতে পারেন। বিশ্বায়ন একটি প্রক্রিয়া এই প্রক্রিয়ার একটি অন্যতম অংশ হিসেবে বর্তমান পঠনপাঠন এবং জীবিকার্জনের জন্য সন্তান-সন্ততিদের অন্যত্র গমন করতে হয়। এই প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে তাদের দূরস্থানে বসবাস অপরিহার্য হয়ে পড়ে। সময়ান্তরে দেশে ফেরা, বাবা-মায়ের সঙ্গে কিছুদিন থাকা এবং পারস্পরিক ভাব বিনিময়ের মধ্যে নাড়ির টানে কোনো ছেদ পড়ে না। বাবা-মা এবং সন্তান-সন্ততি একে অপরের প্রতিপক্ষ নয়, পরিপূরক। তাই তাদের জাগতিক অবস্থান, মানসিক এবং আত্মিক সম্পর্কের মান নির্ধারক হতে পারে না। নাড়ির টান যেমন ছিল, তেমনই আছে। আগামী দিনেও থাকবে। পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সুন্দর, সুস্থ পৃথিবী গড়ে তোলা-ই হোক আমাদের একান্ত উদ্দেশ্য।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct