কেন্দ্রে মোদির বিজেপি সরকার আসার পর থেকে ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক অপরাধ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি আবারও ক্ষমতায় এলে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটি মুসলিমদের জন্য আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এই মুহূতে দেশে লোকসভা নির্বাচনের ভোট চলছে। এই ভোটেও চরম উত্তেজনা চলছে। সাত দফায় ভোট। ইতিমধ্যেই ছয় দফার ভোট শেষ হয়েছে। অপেক্ষা এখন শেষ দফার। এর মধ্যেই প্রথম দফার ভোটের কয়েকদিন পরেই একদল লোকের রোষের মুখে পড়েন উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসামের এক মুসলিম ব্যবসায়ী। শওকত আলি নামের ওই ব্যবসায়ীকে ঘিরে ধরেন কয়েকজন। তাঁকে মারধরের পাশাপাশি কাদামাটির মধ্যে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করা হয়। অনেকে তার নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ওই ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারছেন না শওকত আলি। বিছানায় শুয়ে ওই ভয়াবহ ঘটনা মনে করতেই চোখে জল চলে আসে ৪৮ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ীর। তিনি বলেন, 'ওরা লাঠি দিয়ে আমাকে পিটিয়েছে, তারা আমার মুখে লাথি মেরেছে। আমি আমার বাবা কয়েক দশক ধরেই আসামে এই ছোট খাবারের দোকান চালায়। সেখানে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে গোমাংসও থাকে। কিন্তু আগে কখনওই এর জন্য এমন সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি।' শওকত আলি শুধু শারীরিকভাবেই আহত হয়েছেন তা নয়, এই ঘটনার জন্য মানসিকভাবেও তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তার সামাজিক মান-মর্যাদাও নষ্ট হয়ে গেছে। ধার্মিক এই মুসলিমকে জোর করে শুকরের মাংস খেতে বাধ্য করেছে উন্মত্ত জনতা। কট্টরপন্থীরা তাকে মুখে শুকরের মাংস নিয়ে তা চিবিয়ে খেতে বাধ্য করেছে। এতে পুরোপুরিই ভেঙে পড়েছেন তিনি। শওকত আলি বলেন,' আমার আর বেঁচে থাকার কোন মানেই নেই। তারা আমার ওপর নয় বরং আমার ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর আক্রমণ করেছে।' এই ঘটনার পর মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকেই শওকত আলির সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তার মুখে সব কিছু শুনে অনেকেই কেঁদে ফেলেন। তাদের মধ্যে এখন একটাই আতঙ্ক বিরাজ করছে যে, সামনের দিনগুলোতে তাদেরও হয়তো এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। আসামে নাগরিকপঞ্জির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপি। যারা ভারতের নাগরিক নন তাদের বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেখা যাচ্ছে এখানেও বেছে বেছে মুসলিমদের ওপরই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বেশি। মোদির শাসন কালে গোমাংস ক্রয়, বিক্রয়, সঙ্গে বহন করা বা খাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহু মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে। নির্বিচারে যে কোন মুসলিমকে গোমাংস বহনের অভিযোগে আক্রমণ করছে উন্মত্ত জনতা। পুলিশও এর বিরুদ্ধে কঠোর কোন ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে মুসলিমদের। মোদি যদি আবারও ক্ষমতায় আসেন তাহলে মুসলিমদের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে বলেই মনে করছেন শওকাতের মতো আরও অনেক নিপীড়তরা।