আপনজন ডেস্ক: বিজেপির খারাপ পারফরম্যান্স এবং দরিদ্রদের মধ্যে ক্ষোভের কারণে প্রবল সরকারবিরোধী মনোভাব কংগ্রেসকে কর্নাটকে বিপুল জয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে যা সামনের পথের জন্য একটি বড় বার্তা পাঠাবে। কর্নাটকে নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রধান মুখ করেও বিজেপি লড়াই করতে ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে কর্নাটকে সরকার গঠনের জন্য প্রস্তুত কংগ্রেস। গণনা সম্পূর্ণ হওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী কংগ্রেস ১৩৬ টি আসন পেয়ে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হয়েছে এবং কর্নাটকে কংগ্রেসের সরকার গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে। অন্যদিকে বিজেপি ৬৫ টি আসন পেয়েছে এবং জেডি (এস) ১৯টি আসন দখল করছে। দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের বিষয়ে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহার মানুষ কে আশা দিয়েছে কারণ এই বিভাগগুলির ভোটাররা এমন একটি সরকারকে পছন্দ করেছেন যা সরাসরি সুযোগ সুবিধা এবং বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। মধ্য কর্নাটক সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি অংশে বিজেপি নিম্নমুখী ছিল যা বিজেপির পরাজয়ের ইঙ্গিত আগে থেকেই দেয়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে একাধিক কারণে বিজেপির এই ভরাডুবি কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচনে। প্রথমত, কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ম্যাজিক্যাল (মোদি ম্যাজিক) ভাবমূর্তি কাজে আসেনি। এই রাজ্যে বিজেপি পুরো প্রচারপর্ব চালিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর ‘ক্যারিশমার’ ওপর ভর করে। রাজ্যবাসী তা প্রত্যাখ্যান করেছে। দ্বিতীয়ত, কংগ্রেস এই নির্বাচনকে পুরোপুরি ‘হাইপার লোকাল’ করে তুলেছিল। ব্যাপক মাত্রার দুর্নীতিকে তারা হাতিয়ার করেছে। বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই সরকারকে ‘৪০ শতাংশ কমিশন সরকার’ বলে অভিহিত করেছেন। মানুষ তা গ্রহণ করেছে। ব্যালটে দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান নিয়েছে।তৃতীয়ত, বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতিতে কর্নাটকের মানুষ প্রভাবিত হয়নি। দেড় বছর ধরে বিজেপি ‘হিজাব–হালাল–আজান–আমিষের’ রাজনীতি করে এসেছে। প্রচারপর্বের শেষের দিকে বজরঙ্গ দল–পিএফআইয়ের মতো উগ্র ধর্মান্ধ দলকে নিষিদ্ধ করার যে প্রতিশ্রুতি কংগ্রেস দিয়েছিল, বিজেপি তাকে হাতিয়ার করেছে। বজরঙ্গ দল এবং বজরঙ্গবলীকে (হিন্দু দেবতা হনুমান) সমার্থক করে প্রধানমন্ত্রী মোদি পর্যন্ত সরব হন। শেষ দিকে তিনি ভাষণ শেষ করেছেন ‘জয় বজরঙ্গবলী’ বলে। এই মেরুকরণ কাজে দেয়নি।
চতুর্থত, বিজেপির ‘ডাবল ইঞ্জিন’ তত্ত্ব রাজ্যবাসী খারিজ করেছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী মোদি ব্যাপক উন্নয়নের যে প্রতিশ্রুতি শুনিয়েছেন, তাতে মানুষ ভরসা রাখতে পারেনি। পঞ্চমত, কংগ্রেস জনমুখী যে পাঁচ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সাধারণ মানুষ তা গ্রহণ করছে। যেমন ‘গৃহলক্ষ্মী’ প্রকল্পে দরিদ্র পরিবারের নারী গৃহকর্ত্রীকে মাসে ২ হাজার টাকা, ‘যুবনিধি’ প্রকল্পের আওতায় বেকার স্নাতকদের মাসে ৩ হাজার টাকা ও ডিপ্লোমাধারীদের দেড় হাজার টাকা, ‘গৃহজ্যোতি’ প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র পরিবারের জন্য মাসে ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ বিনা মূল্যে দেওয়া, ‘অন্নভাগ্য’ প্রকল্পে দরিদ্র পরিবারে মাথাপিছু মাসে ১০ কেজি করে পছন্দের দানাশস্য দেওয়া, পুরো রাজ্যে সরকারি বাসে নারীদের বিনা ভাড়ায় ভ্রমণের সুযোগ প্রভৃতি। শহর ও গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ তা গ্রহণ করেছে। কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি, নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই এই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তব রূপ পাবে আশা করা যায়। কর্নাটকে সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল ২০১৮ সালে। ওই নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হয় ১০৪ আসনে, ভোট পায় সাড়ে ৩৬ শতাংশ। কংগ্রেস প্রায় ২ শতাংশ বেশি ভোট টেনেও আসন জেতে ৮০টি। ১৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জেডিএস জেতে ৩৭টি আসন। ওই সময় কর্নাটকে বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেস–জেডিএস জোট সরকার গড়েছিল। কিন্তু ১৪ মাসের মধ্যে বিজেপি দুই দলের বিধায়কদের ভাঙিয়ে নিয়ে সরকার গঠন করে। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন বি এস ইয়েদুরাপ্পা। দুই বছর পর তাঁকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী করা হয় বাসবরাজ বোম্মাইকে। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হল না। কংগ্রেস প্রায় ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে, যা ২০১৮ সালের তুলনায় পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে দৃঢ় একীকরণের ইঙ্গিত দেয়। কথিত আছে যে কংগ্রেস লিঙ্গায়েত ভোট অর্জনে সফল হয়েছিল, যা বিজেপির ঐতিহ্যগত সমর্থনের ভিত্তি। কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের অসামান্য পারফরম্যান্সের পর দলের নেতাদের মধ্যে খুশির জোয়ার বইছে। ফলাফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দলীয় নেতারাও আনন্দ প্রকাশ করতে এগিয়ে আসছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct