আপনজন ডেস্ক: এল ই ডি (LED)আমাদের সবারই খুব পরিচিত একটি শব্দ; যা আমরা প্রতিনিয়ত শুনে থাকি বা ব্যবহার করে থাকি। এটি কীভাবে কাজ করে এবং গঠন পদ্ধতি কী। এলইডি কী?এলইডি হচ্ছে অর্ধপরিবাহী বা সেমিকন্ডাক্টর যন্ত্রাংশ যার ভেতর দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ বা তরঙ্গ প্রবাহের মাধ্যমে আলোক নিঃসরণ হয়। এটি এমন এক প্রকার পিএন(P-N) জাংশন ডায়োড যা সম্মুখ ঝোঁকে কাজ করে এবং আলোক নিঃসরণ করে।LED এর পূর্ণরূপLight Emitting Diode (লাইট ইমিটিং ডায়োড) LED এর কার্যনীতিএলইডি হচ্ছে একটি সম্মুখ ঝোঁক বিশিষ্ট P-N জাংশন ডায়োড যা আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি। এটি GaAs(গ্যালিয়াম-আর্সেনাইড) GaP(গ্যালিয়াম ফসফাইড) ধরনের অর্ধপরিবাহী যৌগ দ্বারা প্রস্তুত করা হয় যাতে তাদের বেশিরভাগ শক্তি আলো হিসেবে নির্গত হয়। এই আলোর বর্ণ ব্যবহৃত বস্তুর উপাদানের ওপর নির্ভর করে। একটি P-N জাংশন শোষিত তড়িৎ শক্তি আলো শক্তিতে রূপান্তর করতে পারে তার সমানুপাতিক বিদ্যুৎপ্রবাহ মধ্যেমে (অর্থাৎ বৈদ্যুতিক শক্তির প্রয়োগে এটি আলো নির্গত করে)। এই প্রক্রিয়া কে ইলেক্ট্রো লুমিনিসেন্স বা Electro luminescence(বৈদ্যুতিক প্রক্ষেপন) বলা হয়। ডায়োড এর মধ্যে তড়িৎ প্রবাহের ফলে পিএন জাংশনের মধ্যে অবস্থিত p-টাইপের হোল গুলোর সঙ্গে n-type এর ইলেকট্রন আদান প্রদান প্রক্রিয়া সারে। এর ফলে ডায়োড এর মধ্যবর্তী অবস্থায় পি ও এন টাইপ অংশ দুইটির সংযোগস্থলে সংখ্যালঘু ইলেকট্রন এবং হোলের আদান-প্রদান হয়। সাধারণভাবে ক্ষেত্রে সংযোগস্থলে তাপ উৎপন্ন হয় কিন্তু লাইট ইমিটিং ডায়োড ক্ষেত্রে সেখানে আলোক নিঃসরণ হয়।অর্থাৎ সহজভাবে বলতে গেলে এলইডির ক্ষেত্রে জংশন এর মধ্যে তড়িৎ প্রবাহের ফলে তাপ ইলেকট্রন এর মাধ্যমে যখন মুক্ত হোল পুর্ণ হয় তখন সেখান থেকে শুধু তাপ উৎপন্ন না হয়ে ইলেক্ট্রো লুমিনিসেন্স প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ শক্তি আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।এলইডি এর রঙ এবং উপকরণ: প্রচলিত LED বিভিন্ন অজৈব অর্ধপরিবাহী উপকরণ থেকে তৈরি করা হয়। একেক রং এর এলইডি একেক ধরনের অর্ধপরিবাহী যৌগ দিয়ে তৈরি। নিচে রং ভেদে উপকরণ দেওয়া হলো-
রং
অবলোহিত
গ্যালিয়াম আর্সেনাইড (GaAs)
অ্যালুমিনিয়াম গলিয়াম আর্সেনিড (আলগা)
লাল
অ্যালুমিনিয়াম গলিয়াম আর্সেনিড (আলগা)
গ্যালিয়াম আর্সেনাইড ফসফাইড (GaAsP)
অ্যালুমিনিয়াম গ্যালিয়াম ইণ্ডিয়াম ফসফাইড (আলগা ইনপ)
গালিয়াম (III) ফসফাইড (GaP)
কমলা
গ্যালিয়াম আর্সেনাইড ফসফাইড (GaAsP)
অ্যালুমিনিয়াম গ্যালিয়াম ইণ্ডিয়াম ফসফাইড (আলগা ইনপ)
গালিয়াম (III) ফসফাইড (GaP)
হলুদ
গ্যালিয়াম আর্সেনাইড ফসফাইড (GaAsP)
অ্যালুমিনিয়াম গ্যালিয়াম ইণ্ডিয়াম ফসফাইড (আলগা ইনপ)
গালিয়াম (III) ফসফাইড (GaP)
সবুজ
ঐতিহ্যগত সবুজ: গালিয়াম (III) ফসফাইড (GaP)
অ্যালুমিনিয়াম গ্যালিয়াম ইণ্ডিয়াম ফসফাইড (আলগা ইনপ)
অ্যালুমিনিয়াম গিলিয়াম ফসফাইড (আলজিপ)
বিশুদ্ধ সবুজ: গ্যালিয়াম (III) নাইট্রাইড (GaN)
নীল
জিংক সিলেনাইড (ZnSe)
ইণ্ডিয়াস গ্যালিয়াম নাইট্রেড (ইনজিএন)
সিলিকন কারবাইড (SiC) স্তর হিসাবে
সিলিকন (সি) হিসাবে বিকাশ অধীন উন্নয়ন
বেগুনী
ইণ্ডিয়াস গ্যালিয়াম নাইট্রেড (ইনজিএন)
অতিবেগুনী
ইঁদুর গ্যালিয়াম নাইট্রেড (ইনজিনা) (385-400 এনএম)
ডায়মন্ড (235 এনএম) [77]
বোরন নাইট্রেড (215 এনএম) [78] [79]
অ্যালুমিনিয়াম নাইট্রেড (এলএন) (210 এনএম) [80]
অ্যালুমিনিয়াম গলিয়াম নাইট্রেড (আলগা)
অ্যালুমিনিয়াম গলিয়াম ইঁদুর নাইট্রোড (আলগাইন) -টাকে 210 এনএম [81]
সাদা
কুল / বিশুদ্ধ সাদা: হলুদ ফসফার দিয়ে নীল / ইউভি ডায়োড
উষ্ঞ হোয়াইট: কমলা ফসফার দিয়ে নীল ডায়োড
এলইডি লাইটের ব্যবহার
এলইডি এর ব্যবহার অনেক বিস্তৃত। আধুনিক সময়ে এসে সব কিছুই প্রায় এলইডি সিস্টেম এর দখলে। যেমন-
> বিভিন্ন ডিজিটাল মিটারে
> ইলেকট্রনিক্স মিটারে এলইডি ব্যবহার করা হয়
> অডিও সিস্টেম বা অডিও এনালাইজার হিসেবে
> মনিটরের ব্যাকলাইট হিসেবে ব্যবহার করা হয়
> বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে ইন্ডিকেটর হিসেবে ব্যবহার করা হয়
> রিমোট কন্ট্রোল ট্রান্সমিটার এন্ড রিসিভার ব্যবহার করা হয়
> মোবাইলের ডিসপ্লে তে
> বিলবোর্ডে ডিসপ্লেতে, বাসের সময়সূচীর ডিসপ্লে বা যেকোনো প্রদর্শনী ডিসপ্লেতে ব্যবহার করা হয়।
লাইট ইমিটিং ডায়োড(এলইডি) ব্যবহারের সুবিধা এবং অসুবিধা: এলইডি ব্যবহারের সুবিধা সমূহের তুলনায় অসুবিধা নেই বললেই চলে। যেমন-সুবিধাসমূহলাইট ইমিটিং ডায়োড আকারে অনেক ছোট এবং ওজনে হালকা।নির্দিষ্ট রঙের লাইট পাওয়া যায় তাও কোনো প্রকার ফিল্টার ছাড়া।পাওয়ার খরচ অনেক কম।কম পাওয়ার খরচ করে অনেক বেশি আলো পাওয়া যায়।কম তাপ উৎপন্ন করে।অনেক টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী।অসুবিধাসমূহএটির সম্মুখে রেজিস্ট্যান্স বেশি যার কারণে রেকটিফায়ার হিসেবে ব্যবহার করা যায় না।পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা বেশি হইলে পর্যাপ্ত সুবিধা পাওয়া যায় না।এলইডি ব্যবহারে সর্তকতা সমূহএলইডি ব্যবহার অবশ্যই করতে হয় নতুবা এলইডি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন-এলইডি অবশ্যই চাহিদাসম্পন্ন ভোল্টেজে সংযোগ দিতে হবে। কম বা বেশি হলে আউটপুট পাওয়া যাবে না।অবশ্যই সঠিক পোলারিটিতে সংযোগ দিতে হবে অর্থাৎ অ্যানোড (+)এর সঙ্গে সোর্সের প্রতিটি প্রান্ত এবং ক্যাথোড (-) এর সঙ্গে সোর্সের নেগেটিভ প্রান্ত সংযোগ দিতে হবে।যেকোনো সোর্সের সঙ্গে সংযোগ দেওয়ার সময় অতিরিক্ত হিট দেওয়া যাবে না সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct